করোনা মহামারির শুরু থেকেই ভুগছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। কিন্তু বর্তমান এপ্রিল মাস দেশটির জন্য হয়ে উঠছে করোনার সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়।
একদিকে দেশটির হাসপাতালগুলোতে যেমন বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা, অপরদিকে মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে সমান গতিতে। টিকা সরবরাহের স্বল্পতার কারণে ল্যাটিন আমেরিকার সর্ববৃহৎ এই দেশটির টিকাদান কার্যক্রমও হুমকির মুখে রয়েছে।
ব্রাজিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এপ্রিল মাসেই তিন দফায় টিকা সরবরাহ কমিয়েছে, যা দেশটির বর্তমান চাহিদার অর্ধেক। এর ফলে দেশটির সর্ববৃহৎ দুটি ল্যাবরেটরি পর্যাপ্ত টিকা সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ১৩ কোটির ওপরে
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি মুহূর্তে রূপান্তরিত করোনাভাইরাসের ব্রাজিলিয়ান ভ্যারিয়েন্ট পি১ এ প্রতিদিন দেশটিতে গড়ে মারা যাচ্ছে ২ হাজার ৮২০ জন এবং এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে মারা গেছে ৩ লাখ ৫০ হাজারের মতো মানুষ।
ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বাভাস মতে, ব্রাজিলে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে গড়ে প্রতিদিন মারা যায় প্রায় ৩ হাজার ৫০০ জন।
গণস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বর্তমান শোচনীয় পরিস্থিতির জন্য দায়ী করছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জায়ের বোলসনারোকে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞরা লকডাউনসহ কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার প্রস্তাব করলেও প্রত্যাখ্যান করেন ব্রাজিলিয়ান প্রেসিডেন্ট।
আরও পড়ুন: চীনা টিকার কার্যকারিতা কম, দেশটির কর্মকর্তাদের স্বীকারোক্তি
করোনা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পাশাপাশি দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের টিকা ব্যবস্থাপনাতেও চরম অদূরদর্শীতার প্রমাণ পাওয়া যায়। উৎপাদনকারীদের সরবরাহ ব্যবস্থার স্বল্পতার কারণে শুধুমাত্র চীনের করোনাভ্যাক টিকাকে ব্যাকআপ হিসেবে রেখেছে দেশটি।
দেশটির স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোর সাবেক প্রধান ক্লাউদিও মেরোভিচ জানান, পূর্বের বৃহৎ এবং সফল টিকাদান কর্মসূচির অভিজ্ঞতা থাকার কারণে ব্রাজিলে টিকাদান ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ভাল ধারণা থাকার কথা। তিনি বলেন, “ব্রাজিল করোনার টিকা সংগ্রহের বিকল্প সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নেয়নি।” তিনি আরও বলেন, “যখন করোনার টিকার জন্য বিভিন্ন দেশগুলো নিজেদের মধ্যে চুক্তি করছিল এবং বিভিন্ন সংস্থার সাথে চুক্তি করছিল, তখনো ব্রাজিল টিকাদান কার্যক্রমকে করোনা মোকাবিলার পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত করেনি।”
আরও পড়ুন: মহামারি পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে দেশগুলোর আরও সৃজনশীল হওয়া দরকার, বললেন তিনি
দীর্ঘ সময় ধরেই ব্রাজিলে বোলসনারো প্রশাসন একাধিক প্রতিষ্ঠানের সাথে করোনা টিকা সংগ্রহের বিরোধিতা করে আসছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট জনসম্মুখেই টিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর টিকার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছিলেন। এমনকি ফাইজার ভ্যাক্সিন গ্রহণে অনুৎসাহিতও করেন।
স্যাবিন ভ্যাকসিন ইন্সটিটিউট এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেনিস গ্যারেট এর মতে, ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলো মধ্যেই স্বাস্থ্য ও টিকাদান কর্মসূচিতে সবসময়ই এগিয়ে থাকা ব্রাজিলের বর্তমান অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। ব্রাজিল সরকারে টিকা ব্যবস্থাপনায় অত্যন্ত হতাশ এই টিকা বিশেষজ্ঞ।