আফগানিস্তানের অবস্থা সকল দিক থেকে খারাপ। পশ্চিমা দুনিয়া আর তাদের সমর্থকরা মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলনা বিতাড়নের জন্য, তাই অর্থনৈতিক চাপ দিচ্ছে শেষ শক্তি হিসেবে। সবকিছু ফেলে রেখে মার্কিনিরা পালিয়েছে কিন্তু তাদের কর্মের বোঝাটা পড়েছে আফগান শিশুদের ওপর। জাতিসংঘ বলছে ১০ লাখ শিশু মৃত্যু ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, বাকিরা সবাই মহাবিপদে, অতএব পরিস্থিতি নাজুক। তবে শিশুদের বাঁচানো বিশ্ব শক্তির প্রধান ভাবনা নয় এই মুহূর্তে তাও হতে পারে। নারীর অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে এই যুক্তিতে আফগানদের মার্কিন ব্যাংকে আটকা ৯ বিলিয়ন টাকার মতো, বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ সেটাই বলছে। কিন্তু এসবই এখন রাজনৈতিক অস্ত্র।
২. জাতিসংঘ সবার কাছে টাকার জন্য ডাক দিয়েছে, কিন্তু তাদের সাহস নেই মার্কিনিদের আফগান টাকা ছাড়তে বলার। এই মুহূর্তে মার্কিনিরা খুব আহত ও আঘাত প্রাপ্ত, ব্যাংকে টাকাটা ছাড়ার চাপ দেয়ার কোনো হাতিয়ার নেই। আর জাতিসংঘ নির্ভর করে পশ্চিমাদের ওপর, কারণ দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর সৃষ্ট এই জাতিসংঘ অনেকটাই পশ্চিমা নিয়ন্ত্রিত। তাদের চাঁদায় জাতিসংঘ আমলাবাহিনী চলে, তাই পশ্চিমাদের ওপর চাপ দেয়ার সুযোগ কম। খুচরা টাকা পয়সা আসছে আহ্বানে কিন্তু বড় মাপের টাকাটা নয় যেটা আছে মার্কিন ব্যাংকে। বিশ্ব ব্যাংকের কথা মার্কিনিদের মতো। নারী অধিকার রক্ষা করতে তারা টাকা আটকিয়েছে। টাকাটা আফগানিস্তানের।
৩. মূল উদ্দেশ হচ্ছে তালেবানদের বিপদে ফেলা কিন্তু সেটা করতে বাইরের শক্তির দরকার হবে না মনে হয়। তাদের ভেতরে দ্বন্দ্ব প্রবল। তালেবান একক সত্তা নয়, অনেকগুলা গোষ্ঠীর মোর্চা। আফগান সমাজ গোত্র ভিত্তিক, তাদের নিজস্ব সংগঠন আছে। এদের এক হতে সাহায্য করে আমেরিকা রাশিয়ার বিরুদ্ধে। কিন্তু তাতে তালেবান এক হয়ে যায়না, নিজেদের মধ্যে ঝগড়া লেগেই আছে। আফগানরাই এক নয়, যার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ পাঞ্জশির। মুসলমানরাও এক নয় তার উদাহরণ আইএস ও তালেবান দ্বন্দ্ব।
৪. এটা তো মার্কিনিদের না জানা থাকার কথা নয়। তালেবান যে মধ্যযুগীয় ভেড়া পালা অর্থনীতির গোষ্ঠী, কোনোভাবে বর্তমান অর্থনীতির সাথে পেরে উঠবে না সেটা জানার পরও ২০ বছর ছিল ক্ষমতায়। সমাজের উন্নতি করতে পারেনি যদিও তাদের নিজ দেশের ব্যাবসায়ীরা অনেক মুনাফা কামিয়েছে। তারা জেনে বুঝে চলে গেছে যে আফগান টাকা ব্যাংকে আটকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে একে ব্যবহার করা যায়। তালেবানদের সামলাবার ক্ষমতা খুবই সীমিত। যে যুদ্ধ তারা না করেই জিতেছে সেটার ক্রেডিট ভাগ করা নিয়ে তাদের নিজেদের ঝগড়া এখন তুঙ্গে। মার্কিনিদের আশা এতে তারা কাবু হবে। কিন্তু প্রতিশোধ ছাড়া এতে কি পাবে বোঝা যাচ্ছে না কারণ তারা তো ফিরতে পারবে না। এর দামটা দেবে আফগান শিশুরা।
৫. শেষ বিপদ জাতিসংঘকে নিয়ে। এই পরিবর্তিত জগতে তাদের দাম এমনিতেই কমছে। এখন আফগানিস্তান বড় পরীক্ষা। পাশ না করলে কি হবে তাদের? এবারে কোভিডকালেই তাদের গুরুত্ব অনেক কমেছে। এখন আরও কমার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
লেখক: এডিটর এট লার্জ, ইউএনবি
(প্রকাশিত মতামতের দায় লেখকের, ইউএনবির নয়)
আরও পড়ুন: নয়া তালেবান, পুরান তালেবান: তফাৎ কী?