এই দেশের মানুষের কাজ অনেক কম। অনেকের এত সময় আছে যে তালেবান মাস্ক পরে কি পরে না এবং কেন পরে না তা নিয়েও তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় বিবাদে জড়িয়ে পড়ছে । সোশ্যাল মিডিয়ার প্রসার দিন দিন বাড়ছে, নাকি দেশে বেকারের সংখ্যা বাড়ছে? সম্ভবত বেকারের সংখ্যাই বাড়ছে। তাই তালেবান ও মাস্ক নিয়ে চলছে বাহাস।
এই তালেবান কি সেই জঙ্গি তালেবান
পুরোনো তালেবান নিয়ে কিছু হালকা স্মৃতি আছে সবার। তারা পাহাড় থেকে নামা বর্বর, নারী বিদ্বেষী। তারা পৃথিবীর নানা দেশে তালেবানি রপ্তানি করতে চাইতো। তাদের আমেরিকানরা পিটিয়ে বের করে দিয়েছে। বিষয় হলো, এবার কোনো মারামারি হয়নি। আমেরিকানরা ও তাদের বসানো সরকার নিজেরাই চলে গেছে। কোনো যুদ্ধই হলো না!
তফাৎ কেন হলো
আসল কথা মার্কিনিরা থাকতে চায় না, আর আফগান সেনারা লড়তে চায় না। অতএব তালেবানরা লড়বে কাদের সাথে। শত্রুর অভাবে এত আরামে তারা দেশ দখল করলো! দুই একটা খুচরো ঝামেলা বাদ দিলে ভয় ও দুর্ভাবনা বেশি ছিল। তবে খুনোখুনি অনেক কম হয়েছে গতবারের তুলনায়। এটা কেন? প্রতিরোধের অভাব,নাকি প্রতিপক্ষ ছিল না?
তালেবান কী বলে এখন
তালেবানরা সহজ সরলভাবে বলতে গেলে সেই সব কথাই বলছে, যাতে আগের তালেবান আর এখনকার তালেবানদের মধ্যে তফাৎটা ধরা যায়। তারা বলছে: কারো ওপর প্রতিশোধ নেবে না, নারীদের অধিকার দেবে, নারীরা কাজ করতে ও পড়তে পারবে, তবে তাদের হিজাব পরতে হবে ইরানিদের মতো, সংখ্যালঘুদের অধিকার দেবে, বিদেশিদের সম্মান করবে ইত্যাদি। তবে ততটাই করবে যতটা ‘ইসলাম’ অনুমতি দেয়। সেটা কতটা আমরা জানি না। আগামী দিনগুলিই কেবল বলতে পারবে কী হবে? তবে এটা ঠিক, ২০ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকার পর তারা আরেক দফা ক্ষমতা হারাতে চাইবে না। বাড়াবাড়ি করলে যে বিপদ হতে পারে এটা তারা জানে, তাই সতর্ক।
কে তাদের সহায়
এটাই আসল কথা। এককালের শত্রু এবং এখনকার মিত্র চীন ও রাশিয়ার খেলা এটা। তারা সাত বছর ধরে পরিকল্পনা করেছে কীভাবে এদেরকে দিয়ে মার্কিনীদের হটানো যায় এবং সেই দিক থেকে তারা সফল। রাশিয়াও চায় না, উভয় দেশেই মুসলমান জঙ্গি আছে, অতএব জঙ্গিবাদ দমানোতে তাদের স্বার্থ আছে। এই অঞ্চলের রাজনীতিকে সুস্থির করতে চায় তারা, যাদের আগের তালেবান উস্কে দিয়েছিল। এবার সই করা চুক্তি আছে। কিছু করবে না। তার চেয়ে বেশি ভয় যে ফাজলামো করলে রাশিয়া ও চীনের সাথে এক সাথে যুদ্ধ করতে হবে। আর সেটা করার ক্ষমতা তালেবান কেন, এই অঞ্চলের কেন, পৃথিবীর কোন দেশই রাখে না। এটাই মূল কথা।
তাহলে ?
রাশিয়া আর চীন চাইবে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নতি। দেশের ভেতরে কী হচ্ছে সেটার দিকে নজর থাকবে, কিন্তু বেশি না। যদি তালেবান কিছু করে তাহলে বিপদ তাদের। আর অর্থনৈতিক উন্নতি হলে তালেবানেরই বেশি লাভ।
তাই ‘অধিকারের’ বিষয়টা বড় হবে না। হবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়- এই সব। মার্কিনিদের অধীনে গত দুই দশকে নারী সমাজ অনেক বেশি দৃশ্যমান। কিন্তু কোনো খাতেই লক্ষ্য-কোটি ডলার খরচের পরও তেমন কিছু উন্নতি হয়নি। এটা মার্কিন সরকারেরই হিসাব। উন্নয়ন প্রকল্পে অপচয়, চুরি, অদক্ষতা সবই হয়েছে, যে কারণে এই হাল।
রাশিয়া-চীন আসলে কী চায়
রাশিয়া-চীন জানে যে মার্কিনিরা কিছুটা দুর্বল। তাই তাদের টপকে নিজেদের ‘বিশ্বের হুজুর’ বানাতে চায়। তাই খেলাটা ক্ষমতার, বিষয়টা অর্থনীতির, উদ্দেশ্য ওপরে উঠার। পৃথিবী জুড়ে ‘অধিকার ভিত্তিক’ যে প্রশাসন ব্যবস্থা, যেটা নিয়ে মার্কিনিরা আর এনজিওরা কথা বলে, সেটা ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে। এখন যে করেই হোক অর্থিনীতিতে ওপরে ওঠার প্রতিযোগিতা, রাজনীতির দুনিয়া অনেকটা ক্ষীয়মান। অতএব কে মাস্ক পরলো, আর না পরলো তাতে কিছু আসবে যাবে না, যদি না তাতে অর্থনীতির ক্ষতি হয়।
আফসান চৌধুরী: এডিটর এট লার্জ, ইউএনবি