দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাত্রারেখায় দাঁড়িয়ে আছে। দাপ্তরিক কাজ শেষ। এখন প্রার্থীদের রিং এ ফেলে বক্স অন বলার অপেক্ষা।
নিরাপত্তার চাদরে আবৃত হয়ে নির্বাচন কমিশন কমান্ড পোস্ট থেকে দিক নির্দেশনা দিচ্ছে। তারা তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন যে আঁটঘাট বেঁধে সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন করেই ছাড়বেন। তারা বলেছিল, কে এল না এল তাতে কিছু আসে যায় না। নির্বাচন হবেই।
নির্বাচন কমিশন আবার আমেরিকার কথার তোয়াক্কা করবে না বলে মাঝে মাঝে জানান দেয়। আবার ভয় যে পায় তা মাঝে মাঝে সিইসির বক্তব্যে বেফাঁস বেরিয়ে আসে। রাজনৈতিক দলগুলো তৈরি। উৎসবমুখর না হলেও বিরস মুখে ক্ষুদ্র দলগুলো সরকারি দল থেকে দুয়েকটা আসন প্রাপ্তির সুযোগ খুঁজছে। সরকারি দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা সংশয়ে আছে। মাঠ পর্যায়ে জনপ্রিয়তা থাকলেও তাদের নির্বাচনী ফসল ঘরে তুলে আনার সম্ভাবনা কতটুকু? সরকার ও সরকারি দল কতটুকু ক্ষমতাশালী তা বিদ্রোহী প্রার্থীরা নিজেরাই ভালো জানেন কারণ বিগত ভোটারবিহীন নির্বাচনগুলোর কুশীলব তারাই ছিলেন।
আরও পড়ুন: ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ প্রসঙ্গে চীনের বাংলাভাষী প্রতিভা প্রশিক্ষণের কৌশল সম্পর্কিত গবেষণা
তাহলে ভোটের মাঠে থাকছে সত্তরোর্ধ্ব একটা রাজনৈতিক দল, কিছু নামসর্বস্ব দল, কিছু নেতা সর্বস্ব লোভী ও সরকারি দলের বিদ্রোহীরা। তাহলে একটা বৃহৎ দল কার সঙ্গে নির্বাচন লড়তে যাচ্ছে? এ লড়াই কি তাদের জন্য সন্মানজনক? মর্যাদাপূর্ণ? দেশের গণতন্ত্রের জন্য মঙ্গলজনক?
এ বৃহৎ দলের একটাই প্রতিদ্বন্দ্বী দল বিএনপিকে হামলা-মামলা ও রাজনৈতিক কৌশলে নির্বাচনের বাইরে রাখা হয়েছে। ইসলামী কিছু দল এমনকি বাম দলগুলোও নির্বাচনে যাচ্ছে না। ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়া কোনো সাহসিকতার কাজ নয়। দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতাও পাবে না। তার কি কোনো বিকল্প নেই?
ধরে নিলাম সব ঠিক চলছে। ভালোমন্দ মিলিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাজসজ্জা তৈরি। দল আছে, প্রার্থী আছে, পরিচালনাকরিরাও প্রস্তুত। তারপরও ভোটার উপস্থিতির শঙ্কা। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যাবেন এটাই আশা। কিন্তু ভোটাররা কাকে ভোট দিতে যাবেন।
একটা দলেরই যোগ্য প্রার্থী আছে, বিপরীতে যারা আছে তারা কি গণতন্ত্রের সংজ্ঞায় রাজনৈতিক দল? তাহলে একমাত্র বৃহৎ দলের যোগ্য প্রার্থীরাই জিতবেন। তাদের মাঝে মন্ত্রী, এমপি সবাই সিংহাসনে আসীন। এসব যোগ্যদের জেতানোর জন্য সবাই একাট্টা। নির্বাচনটা গ্রহণযোগ্য হতে হবে।
ভোটার হাজির করার দায়িত্ব কারোই নয়। ভোটারের নিজের দায়িত্ব এটা। দেশের সুনাগরিক এ দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য। সবাই সুনাগরিক নয়। তাহলে ভোটারদের কষ্ট করে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার দরকার আছে? এর চেয়ে নিজের জীবন জীবিকার জন্য দিনটি ব্যয় করা উত্তম।
নির্বাচনে প্রার্থীরা নিজেদের সাফল্য জাহির ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের নেতিবাচক দিক তুলে ধরেন। ক্ষমতায় বহাল সরকার, এমপি-মন্ত্রীদের কোনো সমালোচনা বা নেতিবাচক কথা বললেই সাইবার আইনে ফেঁসে যাওয়ার সমুহ সম্ভাবনা। তাহলে নির্বাচনটা সেভাবে প্রভাবিত হবে না বলে নিশ্চয়তা কেউ দেবে? এটা ধরে নেওয়া যায় যে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেতে দ্বিধান্বিত হবেন।
নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। উৎসব মুখর ভোট হবে, এমপি-মন্ত্রীদের সুযোগ-সুবিধা ও সম্পদ বৃদ্ধি ঘটবে। জিন্দাবাদ মূর্দাবাদ করে কর্মীরা ক্লান্ত হয়ে খালি হাতে ঘরে ফিরবে। কোনো কিছু কি জনগণের ভাগ্যে যাবে?
(বি.দ্র. ইউএনবির সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামত নাও মিলতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো দায়ভার ইউএনবি নেবে না।)
আরও পড়ুন: চীনে আঞ্চলিক ও দেশীয় অধ্যয়নের উন্নয়ন
ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের জরুরি জলবায়ু তহবিল প্রয়োজন: প্রধানমন্ত্রী