বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘ফ্যাসিবাদী শাসক আওয়ামী লীগ সরকার জনরোষের সুনামিতে ভেসে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘মানুষ জেগে ওঠায় তাদের (সরকারের) পতন অনিবার্য। রাজপথে জনতার যে ঢেউ উঠবে সেই ঢেউয়ের সুনামিতে এই ফ্যাসিবাদী ও দানবীয় আওয়ামী লীগ সরকার ভেসে চলে যাবে।’
শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুৎ সংকট, পুলিশের গুলিতে রাজনৈতিক নেতার মৃত্যু এবং বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনগণকে সংগঠিত করার জন্য তিনি বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
ফখরুল বলেন, ‘তারা (সরকার) বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আত্মাকে ধ্বংস করেছে বলে জাতি এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সেই আত্মাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করতে হবে। আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। এই সরকারকে সরাতে আমাদের রাজপথ দখল করতে হবে।’
তিনি বলেন, নতুন করে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষ এখন তাদের সংসার চালাতে চরমভাবে হিমশিম খাচ্ছে।
আরও পড়ুন: জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি: বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে ‘বিশাল শোডাউনের’ প্রস্তুতি বিএনপির
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের অবস্থা কী তা এখন বলার দরকার নেই। কত ভাড়া বাড়ানো হয়েছে তা রাস্তায় বাস যাত্রীদের জিজ্ঞাসা করুন। রিকশাচালক, কৃষক ও শিক্ষকসহ সকল মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে।’
এই বিএনপি নেতা আরও বলেন, মধ্যবিত্ত মানুষ, যারা তাদের দুঃখ প্রকাশ করতে পারে না এবং পণ্যের অতিরিক্ত দাম বহন করতে পারে না, তারা জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি শিকার।
তিনি বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন দেশের চাপের কারণে সরকার এখন বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দল ও প্ল্যাটফর্মকে কোনো ঝামেলা ছাড়াই সমাবেশ ও রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের অনুমতি দিচ্ছে। ‘তারা এখন একটি গণতান্ত্রিক এবং বিনয়ী দল হওয়ার ভান করছে। এটা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রতারণা তাদের চরিত্রের মধ্যে গেঁথে আছে।’
সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা।
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগকে আর ক্ষমতায় থাকতে দেয়া যাবে না: ফখরুল
ফখরুল আরও বলেন, ‘ব্যাপক লুণ্ঠনের কারণে ব্যাংকগুলো নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও লুট হয়েছে।’
তিনি বলেন, সরকার কিছুদিন আগে বাংলাদেশকে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় পরিণত করার স্বপ্ন দেখছিল, কিন্তু ডলারের রিজার্ভ কমে যাওয়ায় এখন ঋণ চাইছে। ‘তারা আমাদের সম্পদ চুরি ও ছিনতাই করেছে এবং বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার করেছে। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার মতে, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর ৮২৭ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত পাচার হচ্ছে।’
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান ও জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করতে সরকারকে পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেয়া এবং নিরপেক্ষ প্রশাসনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানান ফখরুল।
তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে ফলাফল কারচুপি করে ক্ষমতায় আঁকড়ে ধরতে চাইছে। ‘ইভিএম প্রতারণার হাতিয়ার। ক্ষমতায় বসতে আওয়ামী লীগের কাছে ইভিএম ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। ইভিএমের মাধ্যমে ধানের শীষে ভোট দিলে ভোট গণনা হবে নৌকায়। তাই তারা ইভিএম ব্যবহার করতে চায়।’
আরও পড়ুন: গণতন্ত্র মঞ্চকে স্বাগত জানাল বিএনপি
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ২ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির