ফরিদপুরের ভাঙ্গায় ইতালি প্রবাসী মাসুদ রানাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করার ঘটনায় এক আওয়ামী লীগ নেতাকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নিহতের মা হালিমা বেগম বাদী হয়ে ভাঙ্গা থানায় হত্যা মামলাটি করেন।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে আইসিইউতে চিকিৎসক ও যন্ত্রাংশের অভাবে স্বাস্থ্যসেবা ব্যহত
এ মামলায় ভাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এমদাদুল হক বাচ্চু সহ ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা পাঁচ-সাতজনকে আসামি করা হয়েছে। এদিকে ঘটনার পর থেকেই আওয়ামী লীগ নেতা এমদাদুল হক পলাতক রয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভাঙ্গা থানার উপ পরিদর্শক (এস আই) আবুল কালাম আজাদ জানান, সাবেক কাউন্সিলর এমদাদুল হক বাচ্চুকে প্রধান আসামি করে হত্যা মামলা হয়েছে। এ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি গজারিয়া গ্রামের জয়নাল শেখকে (৩৫) বুধবার দুপুরে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতা এমদাদুল হকের বক্তব্য জানতে তার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে, বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) বিকালে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পৌর সদরের নওপাড়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে মাসুদের কবর জিয়ারত করতে আসেন ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন।
মাসুদের কবর জিয়ারত শেষে নিক্সন চৌধুরী বলেন, যারাই নির্মমভাবে ইতালি প্রবাসী মাসুদকে মেরেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হবে। হত্যাকারী যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, সরকার এই হত্যাকাণ্ডের বিচারে কোন আপোষ করবে না।
পরে নিহত মাসুদের বাড়িতে গিয়ে শোকার্ত পরিবারকে সান্ত্বনা দেন সাংসদ। এসময় শত শত গ্রামবাসী এমপি নিক্সন চৌধুরীর কাছে মাসুদকে হত্যাকারী সাবেক পৌর কাউন্সিলর বাচ্চু মেম্বার ও তার সহযোগীদের ফাঁসির দাবিতে মিছিল দিতে থাকে।
সেসময় এমপি নিক্সন চৌধুরী সকলের উদ্দেশে আরও বলেন, 'আপনারা আইন হাতে তুলে নিবেন না। একটি হত্যাকাণ্ডের পর ঐ এলাকায় সুযোগ সন্ধানী অনেকেই নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। আপনারা শান্ত থাকুন, এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য সর্বদা আপনাদের পাশে আমি থাকব। নিহত মাসুদের দুটি সন্তান ও স্ত্রী ইতালিতে অবস্থান করছে। আপনারা সবাই এই পরিবারটির জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করবেন।'
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে তরুণীকে ‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণের’ অভিযোগে গ্রেপ্তার ৩
কবর জিয়ারতের সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস.এম হাবিবুর রহমান, সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন, সরকারি কেএম কলেজের সাবেক জিএস লাবলূ মুন্সি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজ্জাক ফকির প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে ভাঙ্গা পৌরসভার নওপাড়া বাসস্ট্যান্ডে এ হত্যার ঘটনা ঘটে। নিহত ইতালী প্রবাসী মাসুদ রানা ভাঙ্গা পৌরসভার গজারিয়া মহল্লার হারুন অর রশিদের ছেলে।
পৌরসভা নির্বাচনে মাসুদ রানা ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও ভাঙ্গা সহকারী জজ আদালত আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল হক মিঠুনের পক্ষে কাজ করছিলেন। এতে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী এমদাদুল হক বাচ্চুসহ তার লোকজন প্রবাসী মাসুদ রানার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাসুদ রানা দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে সপরিবার ইতালিতে বসবাস করেন। ভাঙ্গা পৌর নির্বাচন উপলক্ষে প্রায় তিন মাস আগে তিনি গ্রামের বাড়িতে আসেন। ১১ এপ্রিল এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে করোনার কারণে এ নির্বাচন স্থগিত করা হয়। ২০ এপ্রিল ইতালি ফিরে যাওয়ার কথা ছিল মাসুদ রানার।
এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, ভাঙ্গা পৌর এলাকার ২ নম্বর ওয়ার্ডের অধীন গজারিয়া গ্রামের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এর এক পক্ষকে নেতৃত্ব দেন ভাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এমদাদুল হক বাচ্চু এবং অপর পক্ষের নেতৃত্ব দেন ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রাজ্জাক ফকির। দুই পক্ষের বিরোধের কারণে গত বছর বেশ কয়েকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে জখম, বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার, স্বামী পলাতক
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে মাসুদ রানা ভাঙ্গা পৌরসভার নওপাড়া বাসস্ট্যান্ডে নান্নু শেখের চায়ের দোকানে বেঞ্চে বসে গল্প করছিলেন। এ সময় ২০-২৫ জন লোক এসে তাঁকে লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটাতে শুরু করেন। একপর্যায়ে মাসুদ রানা দৌড়ে পাশে আনোয়ার মাতুব্বরের মুদি দোকানে প্রবেশ করলে হামলাকারীরা ওই দোকানের ভেতরে গিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করেন তাকে। পরে এলাকাবাসী রক্তাক্ত অবস্থায় মাসুদ রানাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে রাত সাড়ে আটটার দিকে চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এদিকে, মাসুদ রানার মৃত্যুর খবর জানাজানি হওয়ার পর গজারিয়া গ্রামে পাঁচ-ছয়টি বাড়িতে হামলা করে ১৪টি গবাদিপশু লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে গজারিয়া গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।