সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে লাগা আগুন নেভানো সম্ভব হচ্ছে না। ৩৬ ঘণ্টা পার হলেও আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। অগ্নিনির্বাপণে কাজ করে যাচ্ছেন সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা।
এদিকে সোমবার সকালে ডিপোর কন্টেইনারের ভেতর থেকে আরও একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাড়ালো ৫০ জনে।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, ‘জ্বলন্ত কনটেইনারগুলোর পাশে একটি কনটেইনারে রাসায়নিক থাকতে পারে। এ কারণে সতর্কতার সঙ্গে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে তারা।’
আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ঢাকা থেকে আনা হয়েছে হাজমত টেন্ডার (গাড়ি)। যা দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে বলে মনে করেছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক (প্রশিক্ষণ) মনির হোসেন বলেন, কনটেইনারগুলো সরানোর জন্য হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট আনছে ডিপো কর্তৃপক্ষ। ছয়টি টিম রেডি করেছি। ৮-১০ টি কনটেইনারে এখনও আগুন আছে। আলাদা করে আগুন নেভানো হবে। কেমিকেল আগুন নেভাতে দুটি হাজমত টেন্ডারসহ (গাড়ি) ২০ জনের টিম এসেছি ঢাকা থেকে।
সোমবার বেলা ১২টা পর্যন্ত ডিপোর ভিতরে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট কাজ করছে।
মনির হোসেন বলেন, বিভিন্ন কন্টেইনারে আগুন জ্বলছে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার। কোন কন্টেইনারে রাসায়নিক আছে তা বলতে না পারায় আমাদের সাবধানতার সঙ্গে কাজ করতে হচ্ছে। তারপরও আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় লাগা এ আগুনে ডিপোতে থাকা বিভিন্ন কেমিকেল ভর্তি কন্টেইনার বিস্ফোরণ হয়ে এখন পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিস কর্মীসহ ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন দপ্তর থেকে।
স্থানীয় প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও চিকিৎসকদের আশঙ্কা সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
এদিকে, ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ডিপোতে অবস্থান করছেন।
আরও পড়ুন: সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ: তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, কনটেইনার ডিপোটিতে ‘হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড’ নামে বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক ছিল। হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড একটি রাসায়নিক যৌগ; উচ্চতাপে এটি বিস্ফোরক হিসেবে আচরণ করে। বিস্ফোরণে পুরো এলাকায় রাসায়নিকের বিষাক্ত ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়েছে। এতে উদ্ধারকর্মীরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
এর আগে শনিবার রাতে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নে কদমরসুল এলাকায় বিএম ডিপোতে আগুনের পর বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৫০ জনের মৃত্যু হয় এবং শতাধিক দগ্ধ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এদিকে বিস্ফোরণে আহত ও নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে মালিক পক্ষ। গতকাল রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মালিকপক্ষ নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে দেবে। গুরুতর আহত বা অঙ্গহানির শিকার প্রত্যেকেকে ছয় লাখ টাকা করে এবং বাকি আহতদের চার লাখ টাকা করে দেবে। বিএম ডিপোর জিএম মেজর (অব.) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী এ তথ্য জানান।
আরও পড়ুন: সীতাকুণ্ডের বিস্ফোরণ নাশকতা কি না, খতিয়ে দেখা হবে: হাছান মাহমুদ