বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে বাগেরহাটের নদীর তীরবর্তী শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ এবং মোংলা উপজেলার পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
জোয়ারের চাপে বাগেরহাটের মোংলায় একটি ভেড়িবাঁধের তিনটি স্থানে ভেঙে গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় মৎস্যঘের এবং পুকুর ডুবে মাছ ভেসে গেছে। অনেক এলাকায় পুকুর ডুবে মিষ্টি পানির উৎস হারিয়েছে। বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে। সুন্দরবনের মধ্যে দিয়ে ৫ ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যপ্রাণি এবং বনের মধ্যে মিষ্টি পানির পুকুর ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিপদসীমার এক ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার মোড়েলগঞ্জ ঘাটের গ্যাংওয়ে ডুবে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বাগেরহাট-শরণখোলার সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। মোংলা বন্দরে বুধবার দুপুর থেকে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারের চাপে মঙ্গলবার রাতে এবং বুধবার দুপুরে বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার কানাইনগর, দক্ষিণ কানাইনগর এবং চিলা এলাকায় বেড়িবাঁধের তিনটি স্থান ভেঙে গ্রামে পানি ঢুকে পড়ে। প্লাবিত হয় কাইনমারি, সুন্দরতলা, কলতলা, জয়মনি এবং দক্ষিণ কাইমারি গ্রামের বিভিন্ন এলাকা। ভেড়িবাঁধ ভেঙে এসব গ্রামের প্রায় ৫০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েন।
জেলার মোড়েলগঞ্জে পানিগুছি নদীতে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে নদীর তীরবর্তী ফুলহাতা, সাংকিভাঙ্গা, মোড়েলগঞ্জ সদর, বদনিভাঙ্গা,পত্নিতলাসহ বিভিন্ন গ্রামে পানি ঢুকে পড়ে। মোড়েলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সাড়ে তিন শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে।
এছাড়া জেলার শরণখোলা উপজেলার বলেশ্বর নদীর তীরবর্তী রায়েন্দা, রাজৈর, জিলবুনিয়া, চাল রায়েন্দা, তাফালবাড়িসহ বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে জোয়ারের পানিতে। এসব গ্রামের সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন: ভারত উপকূলে আঘাত আনলো ঘূর্ণিঝড় ইয়াস
স্থানীয়রা জানায়, বিভিন্ন নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ৬ ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সেই সাথে মাঝে মধ্যে দমকা বাতাস বয়ে যাচ্ছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আর দুই এক ফুট পানি বৃদ্ধি পেলেই কোন স্থান থেকে বাঁধ উপচে গ্রামে পানি ঢুকে পড়বে। নদীর তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় অনেক পরিবারে দুপুরে রান্না-খাওয়া বন্ধ রয়েছে। অনেকে শুকনা খাবারের আশায় রয়েছেন। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব পানিবন্দি পরিবারকে শুকনা খাবার দেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদার জানান, অস্বাভাকিক জোয়ারের পানিতে মোংলায় ভেঙে যাওয়া বাঁধের তিনটি স্থান তিনি পরিদর্শন করেছেন। ওই তিনটি গ্রামের ৫০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে শুকনা খাবার দেয়া হয়েছে। এছাড়া চাল-ডাল দিয়ে খিচুড়ি খাওয়ানোর ব্যবস্থা চলছে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান জানান, অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে নদীর তীরবর্তী বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা এবং মোংলা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে শুকনা খাবার দেয়া হয়েছে। এছাড়া তাদেরকে প্রয়োজনীয় সব ধরণের সহযোগিতা দেয়া হবে। স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের এলাকা ঘুরে ঘুরে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তত করার জন্য বলা হয়েছে।