দেশব্যাপী চলমান পরিবহন ধর্মঘটের কারণে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দু’দিন ধরে সারাদেশে পণ্য সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। তবে জেটিতে জাহাজ থেকে খোলাপণ্য ও কনটেইনার লোড-আনলোড স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সাথে পণ্য ও যাত্রীবাহী পরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে সারাদেশে বাস ট্রাকসহ সকল ধরনের পরিবহন ধর্মঘট চলছে। ফলে শুক্রবার ভোর থেকে বন্দরে পণ্য খালাসের কোনো গাড়ি ঢুকতে বা বের হতে দেখা যায়নি। শনিবার দ্বিতীয় দিনের মত বন্দর থেকে পণ্য সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বন্দরের প্রধান জেটিতে ছয়টি কনটেইনার জাহাজ, তিনটি সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজ, একটি খাদ্যশস্যবাহী ও দুটি সিমেন্ট ক্লিংকারবাহী জাহাজ ছিল। এ সময় বহির্নোঙরে ৬৫টি জাহাজের মধ্যে আনলোড হয়েছে খাদ্যশস্যবাহী ৯টি, সাধারণ পণ্যের আটটি, সারের দুটি, ক্লিংকারের ২০টি, চিনির দুটি ও তেলের তিনটি জাহাজ। বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ জাহাজের মধ্যে কনটেইনারবাহী ছিল তিনটি। ওই দিন ২০ ফুট দীর্ঘ (টিইইউ’স) ৪৯ হাজার ১৮টি কনটেইনার ধারণক্ষমতার বিপরীতে বন্দরে কনটেইনার ছিল ৩৭ হাজার ৭৩৮টি। ২৪ ঘণ্টায় ডেলিভারি হয়েছিল চার হাজার ৩৪টি।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে বন্য হাতির মৃত্যু
সূত্র আরও জানান, বন্দর অফডকগুলোতে এখন ৯ হাজার রপ্তানি পণ্যভর্তি কনটেইনার, আট হাজার আমদানি পণ্যভর্তি কনটেইনার এবং ৩৩ হাজার খালি কনটেইনার রয়েছে। ধর্মঘটের কারণে রপ্তানিপণ্য কিংবা খালি কনটেইনার জাহাজীকরণে সমস্যা হয়েছে কিনা কয়েকদিনের মধ্যে জানা যাবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, বন্দরের ভেতরে সব কাজ স্বাভাবিক ভাবেই চলছে। তবে বাইরের কোনো গাড়ি চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতরে আসছে না। বন্দর থেকে পণ্য নিয়েও কোনো গাড়ি বের হচ্ছে না। তবে ধর্মঘট চলমান থাকলে বন্দরের ওপর এর প্রভাব পড়বে। নগরী ও আশপাশের এলাকায় ১৯টি বেসরকারি কনটেইনার ডিপোতে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কও ফাঁকা।
বেসরকারি কনটেইনার ডিপো মালিকদের সংগঠন বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হলে নেতিবাচক প্রভাব তো পড়বে। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে প্রতিদিন ১৯টি অফডক থেকে যে সাড়ে চার হাজার কনটেইনারবাহী গাড়ি বন্দরে চলাচল করত তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। আবার বিভিন্ন কারখানা থেকে রপ্তানি পণ্য নিয়ে যেসব ট্রাক-কাভার্ডভ্যান অফডকে আসত তাও আশঙ্কাজনকহারে কমে গেছে। এ ধর্মঘট যত দ্রুত প্রত্যাহার হবে ততই বন্দর, অফডক তথা অর্থনীতির জন্য ভালো হবে।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামে গ্যাসের লিকেজ থেকে আগুনে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
বন্দরের এনসিটি, সিসিটি’র অপারেশনের দায়িত্বে থাকা একজন কর্মকর্তা জানান, জেটি, ইয়ার্ড ও টার্মিনালের অভ্যন্তরীণ কর্মযজ্ঞ স্বাভাবিক নিয়মে চলছে। জেটির জাহাজগুলোর লোড-আনলোড স্বাভাবিক রয়েছে। তবে আমদানি পণ্য ডেলিভারি ৫ শতাংশে ঠেকেছে। অনেক ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, লরি পণ্য বা কনটেইনার বোঝাই করে অপেক্ষা করেছে ধর্মঘট প্রত্যাহার করলেই বন্দর ছাড়ার আশায়।
বন্দর ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহুর আহমদ বলেন, প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় হাজার ট্রাক, কাভার্ডভ্যান বন্দরে ঢুকে। জাহাজ বেশি ভিড়লে আরও বেশি পণ্যবাহী গাড়ির প্রয়োজন হয়। ধর্মঘটের কারণে ট্রাকগুলো অলস বসে আছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম আকতার হোসেন বলেন, বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ড, শেড, টার্মিনাল ও ডিপোতে শুল্ক পরিশোধ, কায়িক পরীক্ষাসহ খালাসের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেও হাজার হাজার গাড়ি অলস বসে আছে ধর্মঘটের কারণে। ধর্মঘট দীর্ঘায়িত হলে আমদানি-রপ্তানিকারক, বন্দর ব্যবহারকারী, শিল্পোদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এটা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা উদ্বিগ্ন।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, সরকার জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর কোনো আলটিমেটাম ছাড়াই পরিবহন ধর্মঘট কাঙ্ক্ষিত নয়। আমরা মনে করি, করোনার দীর্ঘমেয়াদি অচলাবস্থার পর যখন অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর মুহূর্তে এটা মেনে নেয়া যায় না। আলোচনার মাধ্যমে আজই যৌক্তিক সমাধান আশা করি। নয়তো আমাদের আমদানি, রপ্তানিতে সংকট, দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্টসহ বন্দরে অচলাবস্থা তৈরি হবে। শিল্পকারখানার কাঁচামাল সংকট দেখা দেবে। দেশে নিত্যপণ্যের সরবরাহ চেনে বিঘ্ন ঘটাবে।
এদিকে তেল ও ডিজেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনেও প্রায় অচল চট্টগ্রাম। গণপরিবহন না থাকায় বিপাকে পড়তে হয়েছে কর্মজীবীদের।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামবাসী না চাইলে সিআরবিতে হাসপাতাল হবে না: রেলপথমন্ত্রী