সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় এক নির্মাণ শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (৯ জুন) সকালে হাসপাতাল এলাকার একটি নির্মাণাধীন ভবনে এ ঘটনা ঘটে। এছাড়া আরও এক নির্মাণ শ্রমিককে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
নিহত শ্রমিক নয়ন মিয়া (২০)। তার বাড়ি বিশ্বনাথ উপজেলায়।
আটক চারজন হলো, দিনাজপুরের রুবেল, কুড়িগ্রামের আমিনুল ইসলাম, আয়নাল ও সাবান আলী। তারা সকলেই ওসমানী হাসপাতালের নির্মাণাধীন ভবনের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জামাল এন্ড কোং-এ কর্মরত এবং মালিকপক্ষের আত্মীয় বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন: সাজেকে ডায়রিয়ায় নারীর মৃত্যু, মুমূর্ষু আরও অর্ধশতাধিক
জানা গেছে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা শ্রমিকদের থাকার রুমে হাত পা বেঁধে প্রায় ২ ঘন্টাব্যাপী পেটায় দুই নির্মাণ শ্রমিককে। এক পর্যায়ে নয়ন নামের নির্মাণ শ্রমিক অজ্ঞান হয়ে পড়লে কর্মকর্তারা তাকে ফেলে রেখে চলে যায়। পরে অন্যান্য সহকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় মূল অভিযুক্তসহ চারজনকে আটক করেছে পুলিশ।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শ্রমিক ফজলুল হক জানান, অর্থসংকটের কথা বলে গতকাল বৃহস্পতিবার ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নির্মাণাধীন বহুতল ভবনে শ্রমিকের কাজ নিয়েছিলেন বিশ্বনাথের যুবক নয়ন।
শুক্রবার (৯ জুন) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে নির্মাণ শ্রমিক নয়ন ও আইয়ুব আলীকে এক লাখ ৩৭ হাজার টাকা ও চারটি মোবাইল চুরির অভিযোগে একটি রুমে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাদের হাত পা বেঁধে লাঠিসোঁটা ও রড দিয়ে নির্মম নির্যাতন চালান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মরত ঠিকাদার ও ম্যানেজারের লোকজন।
নির্যাতনকালে নয়ন চিৎকার করে পানি খাওয়ার অনুরোধ জানালে তাকে প্রস্রাব খাওয়ানো হবে বলা হয়। দীর্ঘ প্রায় ২ ঘন্টা চলে নির্যাতন।
একপর্যায়ে গুরুতর আহত অবস্থায় নয়নকে ফেলে রেখে ঠিকাদার ও ম্যানেজারের লোকজন চলে যায়। পরে কাল সোয়া ৯টার দিকে নয়নকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অন্যান্য শ্রমিকের দেওয়া তথ্যমতে পরবর্তীতে আইয়ুব আলী নামে আরও এক শ্রমিককে পুলিশ হাত পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করে ওসমানী হাসপাতালে পাঠান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আজবাহার আলী শেখ জানান, শ্রমিক হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত চারজনকে আটক করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত চুরির কোন নিদর্শন পাওয়া যায়নি। ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অপরাধী যেই হোক তাদেরকে ছাড় দেওয়া হবে না।
এদিকে, অভিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জামাল এন্ড কোং এর বিরুদ্ধে রয়েছে শ্রমিক নির্যাতনসহ আরও নানা অভিযোগ। একাধিক নির্মাণ শ্রমিক প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নির্যাতন ও নিয়মিত মজুরি না দেওয়ার অভিযোগ করেন।
এছাড়া গেল ৩ জুন ওই প্রতিষ্ঠানের গাফিলতিতে লোহার পাইপ পড়ে মারা যান দেলোয়ার হোসেন নামের এক সেনাসদস্য। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামির তালিকায় রয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জামাল অ্যান্ড কোম্পানির স্বত্বাধিকারী মো. জামাল উদ্দিন।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে বজ্রপাতে যুবকের মৃত্যু