করোনা শুরুর সময় সরকার ঘোষিত লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা, দরিদ্র মানুষের পাশে দাড়ানো, নিজ হাতে সনাতন ধর্মের মৃত ব্যক্তির শেষ দাহ সম্পন্ন করা সেই আলোচিত ইউএনও এবারও লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছেন।
দ্বিতীয় ধাপের করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়াতে সরকার সোমবার ভোর ৬টা থেকে সারা দেশে এক সপ্তাহের জন্য কঠোর নির্দেশনা ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছে। তারই প্রেক্ষিতে এখন সারাদেশে লকডাউন চলছে।
আর সরকার ঘোষিত এই লকডাউন বাস্তবায়ন করার জন্য মাঠ পর্যায়ে তীব্র গরমের মধ্যেও সকাল থেকেই কাজ করে যাচ্ছেন ফরিদপুর সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মো. মাসুম রেজা। সকাল থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে তিনি অবস্থান করছেন মহাসড়কে।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে ইউএনওর হস্তক্ষেপে বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পেল দুই ছাত্রী
বেলা ১১ টার দিকে ফরিদপুরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে সরেজমিন দেখা যায়, ইউএনও মাসুম রেজা তার সহকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে মহাসড়কে অবস্থান করছেন। সরকার ঘোষিত নির্দেশনা অমান্যকারীদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করছেন।
মাস্ক ব্যবহার বা সামাজিক দূরত্ব মেনে না চললেও সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসাচ্ছেন। সেই সাথে মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য পরামর্শও দিচ্ছেন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশব্যাপী লকডাউনের প্রথম দিনে জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের নির্দেশনায় সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং করছেন ইউএনও মো. মাসুম রেজা।
রাজবাড়ী রাস্তার মোড়, মুন্সির বাজার, বাখুন্ডা বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাসুম রেজা ও সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ আল-আমিন। এ সময় সরকারি নির্দেশনা অমান্য করায় বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং মাস্ক পরিধানের গুরুত্ব সম্পর্কে হ্যান্ডমাইকে সকলকে সচেতন করা হয়।
আরও পড়ুন: ইউএনবিতে সংবাদ প্রকাশের পর অসহায় কদবানুর পাশে ইউএনও
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুম রেজা বলেন, যে হারে করোনা সংক্রমিত হচ্ছে তাতে ভয়াবহ অবস্থা অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। আমরা এখনই যদি সচেতন না হই তাহলে আমাদের জন্য অনেক দুঃখ অপেক্ষা করছে।
তিনি আরও বলেন, আপনারা জানেন সরকার দেশের মানুষের মঙ্গলের কথা ভেবে ইতিমধ্যে সাত দিনের কঠোর নির্দেশনা ঘোষণা করেছে। আমরা মাঠ পর্যায়ে সেটা বাস্তবায়ন করছি। এটা বাস্তবায়ন করা আমাদের সামাজিক ও নৈতিক দায়িত্ব। আমরা এই অভিযান ১১ এপ্রিল মধ্য রাত পর্যন্ত অব্যাহত রাখবো।
আরও পড়ুন: নবীনগর ইউএনও’র সরকারি মোবাইল নম্বর ক্লোন করে টাকা দাবি
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, লকডাউনের প্রথম দিন থেকেই জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা জেলা সদর ও উপজেলা সদরগুলোতে কঠোর নজরদারিতে রেখেছে। আমরা চেষ্টা করছি বিনা কারণে যাতে কেউ বাইরে না বের হয়। সকলকে ঘরে থাকার জন্য মাইকিং করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের লকডাউনে ইউএনও মাসুম রেজা যেভাবে কাজ করেছিলেন তাতে তিনি সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছিলেন। করোনাকালীন সময়ে কেউ মারা গেলে তাকে দাফন করার কাজগুলো সম্পন্ন করতে ভয়ে কেউ এগিয়ে আসতে চাইত না। সেই সময়ে একজন হিন্দু সম্প্রদায়ের মৃত্যুতে, তার দাহ কাজ সম্পন্ন করতে অনেক বাধার সৃষ্টি করে স্থানীয়রা। কিন্তু ইউএনও মাসুম রেজা সেই মুহূর্তে নিজে ওই মৃত ব্যক্তির চিতায় আগুন ধরিয়ে নিজের হাতে তার দাহের কাজ সম্পন্ন করে রীতিমত সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন।
এছাড়া হতদরিদ্র মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তাদের হাতে খাদ্য সামগ্রী তুলে দেন। দিনরাত মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন তিনি। সদর উপজেলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে গিয়ে অনাহারি মানুষের মুখে আহার তুলে দিয়েছেন মাসুম রেজা।
তাছাড়া তিনি করোনা প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত সকল নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করেন। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ঢাকা বিভাগের জেলা পর্যায়ে একজন করে শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নির্বাচিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ফরিদপুরের শ্রেষ্ঠ ইউএনও নির্বাচিত হন তিনি। ২৪ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে তাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।