বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূত হাজনাহ মো. হাশিম বলেছেন, ঢাকা ও কুয়ালালামপুর শিগগিরই দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষর করবে বলে তিনি আশাবাদী।

কসমস ফাউন্ডেশনের ‘বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া সম্পর্ক: ভবিষ্যতের পূর্বাভাস’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপে তার মূল বক্তব্য দেয়ার সময় রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণ করতে পারে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, এফটিএ ছাড়াও ভবিষ্যতের সহযোগিতার সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলো ‘অবশ্যই ডিজিটাল অর্থনীতির ক্ষেত্রের’ সঙ্গে সম্পৃক্ত।

তিনি বলেন, দুই দেশের জন্য এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মতো ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বাড়ানো; কারণ তা পরবর্তী দশক বা তারও বেশি সময়ে সম্পর্কের প্রকৃতি নির্ধারণ করতে পারে। এ বিষয়ে আমি আবারও আশা করি যে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি এফটিএ স্বাক্ষরিত হবে।

কসমস গ্রুপের জনহিতকর শাখা কসমস ফাউন্ডেশন আয়োজিত এই সংলাপটি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রিমিয়ার হয়।

এতে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন কসমস ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাহার খান।

আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ইস্যুতে মালয়েশিয়ার ভূমিকার প্রশংসা বক্তাদের

সংলাপে সভাপতিত্ব করেন দেশের প্রখ্যাত কূটনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী।

প্যানেল আলোচক ছিলেন রাষ্ট্রদূত (অব.) ফারুক সোবহান, ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (আইএসআইএস) এর ফরেন পলিসি অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ প্রোগ্রামের গবেষক ইয়ানিথা মীনা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ ও অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর।

রাষ্ট্রদূত হাজনাহ বলেন, তার চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো দুই দেশের মধ্যে একটি এফটিএ সমাপ্ত করা; যাতে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত বাণিজ্য সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হতে পারে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, প্রস্তাবিত মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় এফটিএ-এর জন্য আলোচনা এখনও শুরু হয়নি...। তাই আমরা আশা করি যে আমাদের দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের মঙ্গলের জন্য দ্রুত আলোচনা শুরু হবে।

রাষ্ট্রদূত প্রতিরক্ষা, মহাকাশ ও খাদ্য নিরাপত্তার মতো ক্ষেত্রগুলোর তালিকা করেছেন। এ খাতগুলোতে ভবিষ্যতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও বাড়ানো যেতে পারে।

তিনি বলেন, যদিও ইতোমধ্যে মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্কের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে শ্রম রপ্তানির বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে, তবে এখনই সময় এসেছে দুই দেশের সম্পর্ককে আরও বহু দূর বিস্তৃত করার।

কসমস ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাহার খান বলেন, গত পাঁচ দশক ধরে দুই পক্ষ থেকেই সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য সত্যিকারের প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ সবসময়ই রয়েছে। তা হোক বাণিজ্য বা বিনিয়োগের মাধ্যমে, শ্রমের গতিশীলতার মাধ্যমে বা সক্ষমতা বৃদ্ধি ও শিক্ষার মাধ্যমে।

আরও পড়ুন: তৃতীয় এফএমসি: বিস্তৃত অংশীদারিত্ব বাড়াতে সম্মত ঢাকা ও সিউল

তিনি বলেন, ‘স্পষ্টতই বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক গভীর করার ক্ষেত্রে আমাদের কাছে বিকল্পের অভাব নেই। সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সম্পর্কের বিষয়েও আমরা কৌশলগতভাবে বেশ কিছু বিষয়ে সম্পৃক্ত।’

সভাপতি ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে ‘অভাবনীয়’ বলে বর্ণনা করেছেন।

তিনি বলেন, দুই দেশের জন্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনার বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে চিন্তা করার সময় এসেছে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত ফারুক সোবহান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সম্প্রসারণ ও শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

সম্পর্কের আরও সম্প্রসারণের বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ফারুক সোবহান মনে করেন, শিক্ষার ক্ষেত্রেও সহযোগিতার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র রয়েছে।

অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, দুই দেশের বিদ্যমান সম্পর্ককে পুঁজি করে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়াকে তাদের ঐতিহ্যগত মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে।

ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর এফটিএ এবং আঞ্চলিক সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব বা আরসিইপি ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতাকে আরও গভীর করার ব্যাপারে মনোযোগ দেয়ার কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, আসিয়ানের সঙ্গে বাংলাদেশের আরও সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে মালয়েশিয়া একটি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করতে পারে, যা উভয় দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

মালয়েশিয়ার গবেষক ইয়ানিথা মীনা বাংলাদেশের সঙ্গে তার দেশের সম্পর্ককে কিছুটা স্টেরিওটাইপিক্যাল বলে বর্ণনা করেছেন।

তিনি বলেন, এই অঞ্চলে প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের একটি চিত্তাকর্ষক ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে। তাই বাংলাদেশের সঙ্গে মালয়েশিয়ার সম্পর্কে বৈচিত্র্য আনার এটি সঠিক সময়।

আরও পড়ুন: প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক কূটনীতির ‘রোল মডেল’: শাহরিয়ার আলম