কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীকে নির্যাতনের দায়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক পাঁচ নেতা-কর্মীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সোমবার (২১ আগস্ট) বিকালে ইবি’র উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে ক্যাম্পাসে জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা এবং তার সহযোগী ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম ও মোয়াবিয়া জাহান, চারুকলা বিভাগের হালিমা খাতুন ঊর্মি এবং আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মিম।
গত ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী ওই পাঁচ শিক্ষার্থীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের আচরণবিধি অনুযায়ী শাস্তি না হওয়ায় গত ২৬ জুলাই হাইকোর্ট এই বহিষ্কারের আদেশ বাতিল করেন।
আদালত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আচরণবিধি ১৯৮৭ অনুযায়ী শাস্তি পুনর্নির্ধারণ করার নির্দেশ দেন।
সভায় ইবির উপউপাচার্য এম মাহবুবুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ এম আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচএম আলী হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ইবির প্রক্টর এম শাহাদাত হোসেন আজাদ ইউএনবিকে বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশে অন্তরা ও তার চার সহযোগীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত আগামী ২৩ আগস্টের মধ্যে হাইকোর্টে পাঠানো হবে।
ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, অন্তরা ও তার চার সহযোগীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্তে আমি সন্তুষ্ট।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে ক্যাম্পাসে এমন জঘন্য কাজ করতে কেউ সাহস পাবে না।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ভুক্তভোগীকে তৎকালীন ইবি শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা এবং তার সহযোগী তাবাসসুম, মিম, ঊর্মি ও মোয়াবিয়া নির্যাতন করে ও ভয়ভীতি দেখায়।
আরও পড়ুন: ফুলপরীকে নির্যাতন: ইবির পাঁচ ছাত্রীকে নতুন করে শাস্তি আরোপের নির্দেশ হাইকোর্টের
একপর্যায়ে অন্তরা ভুক্তভোগীকে কাপড় খুলে ফেলতে বাধ্য করে এবং মোবাইল ফোনে ঘটনার ভিডিও ধারণ করে।
১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা এবং হল প্রভোস্টসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ভুক্তভোগীর দায়ের করা অভিযোগ অনুযায়ী, অন্তরা হুমকি দিয়েছিল ভুক্তভোগী যদি বিষয়টি কারও কাছে প্রকাশ করে তবে তিনি ভিডিওটি সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ভাইরাল করে দেবেন।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ইবির আইন বিভাগের চেয়ারপার্সন রেবা মণ্ডলের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ইবি কর্তৃপক্ষের গঠিত দুটি তদন্ত সংস্থা গত ২৬ ফেব্রুয়ারি তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়।
দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল প্রশাসন গত ২৭ ফেব্রুয়ারি পাঁচ অভিযুক্তকে বহিষ্কার করে।
১ মার্চ বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অন্তরা ও চার কর্মীকে শিক্ষার্থীকে নির্যাতন ও হয়রানি করার দায়ে বহিষ্কার করে।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে হাইকোর্ট বেঞ্চ ১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়কে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী ও কর্মীদের সাময়িক বরখাস্ত করতে বলেন।
আদালত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ও রেজিস্ট্রারকে অবিলম্বে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট শামসুল আলম এবং হাউস টিউটর মৌমিতা আক্তার ও ইশরাত জাহানকে তাদের কর্তব্যে অবহেলার দায়ে অপসারণ করার নির্দেশ দেন।
ইবি কর্তৃপক্ষ পরে অভিযুক্ত পাঁচ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বরখাস্ত করার পাশাপাশি দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট শামসুল আলমকে অপসারণ করে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অন্তরা এবং তার চার সহযোগীকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে অভিযোগের জবাব জমা দিতে বলেছে।
হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে তার পছন্দে একটি আসন বরাদ্দ দেয়।
আরও পড়ুন: ইবিতে শিক্ষার্থী নির্যাতন: ছাত্রলীগ নেত্রীসহ ৫ জন বহিষ্কার