চুয়াডাঙ্গায় বেপরোয়া হয়ে উঠছে কিশোর গ্যাং। নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য কয়েকজন মিলে পাড়া-মহল্লায় বিভিন্ন নামে গ্যাং/গ্রুপ গড়ে তুলছে। আধিপত্য বিস্তার, সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব, মাদক ও প্রেম নিয়ে বিরোধের জেরে তারা অহরহ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। কাউকে গালি দিলে, ‘যথাযথ সম্মান’ না দেখালে, এমনকি বাঁকা চোখে তাকানোর কারণেও সংঘর্ষে জড়াচ্ছে তারা। কোনও কোনও সময় খুন পর্যন্ত গড়াচ্ছে এসব ঘটনা।
রবিবার ঠিক এমনই একটি ঘটনার সাক্ষী হলো চুয়াডাঙ্গা জেলাবাসী। এক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে পৌর এলাকার আল হেলাল ইসলামি একাডেমি বিদ্যালয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। মাত্র ১৭ বছর বয়সে কিশোর গ্যাংয়ের নজরে পড়ে জীবন হারানো ওই কিশোরের নাম মাহাবুবুর রহমান তন্ময় ওরফে তপু। এদিন দুপুরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষের সামনে কয়েকজন কিশোর তপুকে প্রকাশ্যে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। স্কুলের অন্য শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকরা তপুকে গুরুতর জখম অবস্থায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।
উল্লেখ্য, ঠিক এমনই একটি গ্যাংয়ের ক্রোধের মুখে পড়ে গত আগস্ট মাসের ১৬ তারিখ দু’দফায় এলোপাতাড়ি কোপে জখমের শিকার হন সোহেল রানা ডালিম নামের এক স্থানীয় সাংবাদিক। কিশোর গ্যাংয়ের এক সদস্যের মোটরসাইকেলের সাথে আচমকা ‘ধাক্কা লাগা’ কাল হয়ে দাঁড়ায় ডালিমের জীবনে। কথা কাটাকাটি দিয়ে শুরু হওয়া বিরোধের শেষ হয় এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করার মধ্য দিয়ে। টানা একমাস চিকিৎসার পর ডালিম প্রাণে বেঁচে গেলেও শরীরে ও মনে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন ধারালো অস্ত্রের আঘাতের অগণিত ক্ষতচিহ্ন। তবে ডালিমের মতো সদ্য খুন হওয়া তন্ময়ের ভাগ্য প্রসন্ন হয়নি। হাসিমুখে বাড়ি থেকে বের হয়ে লাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে শহরের নূরনগর কলোনীপাড়া ধর্মতলা মোড়ের আবদুল মজিদের ছোট ছেলে তন্ময়কে।
আরও পড়ুন:চুয়াডাঙ্গায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এসএসসি পরীক্ষার্থীর লাশ
এ ঘটনার পর থেকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, ঘটনাস্থলসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখা যায় চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের একাধিক টিমকে। শহর ও শহরের বাইরের বিভিন্ন স্থানে দিনভর সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করেও হত্যার সাথে জড়িত কাউকে আটক বা হত্যার কাজে ব্যবহৃত কোনো অস্ত্র এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উদ্ধার করতে পারেনি চুয়াডাঙ্গা সদর পুলিশ।
নিহত তপুর কয়েকজন সহপাঠী জানান,একই স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী সহপাঠীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল তপুর। কিন্তু ওই মেয়েকে পছন্দ করতো বহিরাগত শিহাব নামের এক যুবক। বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তন্ময়ের সাথে ওই মেয়েকে কথা বলতে দেখে শিহাব। এসময় তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটিও হয়েছে। তখন শিহাব চলে গেলেও দুপুর পৌনে ১২টার দিকে দুটি মোটরসাইকেলে করে কয়েকজন ছেলে স্কুলের মধ্যে প্রবেশ করে তন্ময়কে রুম থেকে ডেকে নিয়ে যায়। তারাই তন্ময়কে নৃশংসভাবে কোপায়।
তবে তপুর এলাকার স্থানীয় কয়েকজন জানায়,চার-পাঁচ মাস আগে ধর্মতলা মোড় নামের শহরের একটি স্থানে শিহাবের সাথে এলাকার কয়েকজনসহ তন্ময়ের বিরোধ হয়। এলাকার মধ্যে দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল চালানো নিয়ে এলাকার কয়েকজন শিহাবকে মারধর করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। সে সময় বেশ কিছুদিন জেলেও ছিল শিহাব। সেই ঘটনার জের কাটতে না কাটতেই প্রেমের সম্পর্ক ও পূর্ব বিরোধের জের ধরে তন্ময়ের খুন হলো।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার, কিশোর গ্যাংয়ের ৫ সদস্য আটক