ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার ভবিষ্যত সম্পর্ক বহুমুখী সংযোগের দ্বারা নির্মিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা।
তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে ভবিষ্যত সংযোগ সড়ক ও রেলপথ, অভ্যন্তরীণ নৌপথ, উপকূলীয় শিপিং এবং একই সঙ্গে জ্বালানি ও ডিজিটাল সংযোগসহ বহুমুখী সংযোগের দ্বারা নির্মিত হবে।
মঙ্গলবার (২মে) রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে উন্নয়ন সমন্বয়ের আয়োজনে ‘মাল্টিমোডাল কানেক্টিভিটি বিটউইন ইন্ডিয়া অ্যান্ড বাংলাদেশ’-শীর্ষক সেমিনারে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় হাইকমিশনার ভার্মা তার বক্তব্যে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও মানুষে-মানুষে সম্পর্ক উন্নয়নের সুবিধার্থে সংযোগের দীর্ঘমেয়াদী তাৎপর্যের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সাংস্কৃতিক সাদৃশ্য, ঐতিহাসিক সম্পর্ক, এবং ভৌগলিক নৈকট্যের সুযোগ কাজে লাগিয়ে দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাগুলো বাস্তবে রূপ দিতে হবে।
এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই দুই দেশের সরকার ও অন্যান্য অংশীজনেরা পারস্পরিক বাণিজ্য বেগবান করতে সংযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে মনযোগি হয়েছেন এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এক্ষেত্রে বেশ কিছু সাফল্য এসেছে বলেও মনে করেন তিনি।
সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন উন্নয়ন সমন্বয়ের সভাপতি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষজ্ঞ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিপিডি’র ডিস্টিঙ্গুইশড ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ সরকারের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নীলিমা আখতার, ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ-এর নির্বাহী পরিচালক টি.আই.এম. নুরুল কবির, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সিইও আহসান খান চৌধুরী, ইন্ডিয়া বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট শোয়েব চৌধুরী, এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইবিএ-এর অধ্যাপক সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক ঐতিহাসিক: ভারতীয় হাইকমিশনার
মূল নিবন্ধ উপস্থাপনকালে ড. আতিউর রহমান বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত ও বাংলাদেশ একে অপরের বৃহত্তম বাণিজ্য সহযোগী হলেও পরস্পরের সঙ্গে যতোটা বাণিজ্য হওয়া সম্ভব তাদের মধ্যে তা দেখা যাচ্ছে না। এজন্য পারস্পরিক সংযোগ বৃদ্ধির বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক পণ্য পরিবহনের জন্য এককভাবে সড়ক বা রেল বা জলপথে পণ্য পরিবহনের দিকে না গিয়ে মিশ্র পদ্ধতিতে পণ্য পরিবহন করা গেলে তা বিশেষ সুফল দিবে।
তিনি আরও বলেন, যোগাযোগ অবকাঠামো ও লজিস্টিকস-এর ক্ষেত্রে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা গেলে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ১৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব।
এসময় ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি ১ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করতে স্বাধীনতার পর ৪৭ বছর কেটে গেলেও পরের মাত্র ৩ বছরেই এই পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ করা সম্ভব হয়েছে।
তবে এক্ষেত্রে পুরো সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে বন্দরগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নকে আরও গতিশীল করা দরকার বলে তিনি মনে করেন।
ভারতের অন্যান্য অংশের তুলনায় উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য সংযোগ বৃদ্ধির দিকে বাংলাদেশের বিশেষ মনযোগ দেওয়া দরকার বলে মনে করেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সিইও আহসান চৌধুরী।
তিনি বলেন, ভারতের ত্রিপুরার ব্যবসায়িদেরকে সহজে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছার ব্যবস্থা দ্রুততম সময়ের মধ্যে করে দেয়া গেলে উভয় দেশের জনগণই এর সুফল ভোগ করবেন।
এছাড়াও বক্তারা ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে জ্বালানি বাণিজ্য, তথ্য-প্রযুক্তি-নির্ভর উদ্যোগে পারস্পরিক সহযোগিতা, পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে সাধারণ নীতিমালা নিশ্চিতকরণের মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ সবসময় ভারতের কাছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পায়: প্রধানমন্ত্রীকে ভারতীয় হাইকমিশনার
সিইপিএ বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে পারে: হাইকমিশনার