রমজান মাস সামনে রেখে ভোজ্য তেলসহ বেশ কিছু নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ভ্যাট ও ট্যাক্স কমানোর সিদ্ধান্ত আসছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
সচিবালয়ে রবিবার বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় মন্ত্রী এ তথ্য জানান। অবশ্য কোন পণ্যগুলোর ক্ষেত্রে এ পদক্ষেপ নেয়া হবে তা স্পষ্ট করেননি তিনি।
রমজান সামনে রেখে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ বৈঠকে বসে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এবং পুলিশ প্রধান বেনজির আহমেদসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভার পরে সাংবাদিকদের করা এক ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ আলোচনা করেছি। আপনারা জানেন সারা বিশ্বেই ভোজ্য তেলের দাম বাড়ছে। এই দাম বৃদ্ধির কোনো মাত্রা নেই। আমরা প্রতিদিনই দেখছি দাম বাড়ছে। এর ইফেক্ট আমাদের দেশেও আসছে। অন্যান্য জিনিসের দামও রোজায় বাড়তে পারে, এটা মাথায় রেখেই আমরা বসেছিলাম।
পাশাপাশি এই আলোচনার মাধ্যমে ট্যাক্স ও ভ্যাটের কথা এসেছে। এটা কমানো যায় কিনা সেটা নিয়েও আমরা সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি খুব শিগগিরই। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ট্যাক্স ও ভ্যাট কমানো বা তুলে নেয়া নিত্যপণ্যের ওপর ভোজ্য তেল বা চিনি বা আরও কিছু যদি চলে আসে সেগুলোর উপরে কিভাবে কতটুকু কমানো যায় আমরা খুব শিগগিরই একটি ঘোষণা দেবো। এটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
আরও পড়ুন: নিত্যপণ্যের লাগামহীন দামে নাকাল ভোক্তারা
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমরা ২ ফেব্রুয়ারি তেলের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছি, এটাই তার আগের মাসের অর্থাৎ জানুয়ারি মাসের ইমপোর্ট প্রাইজের ওপরে করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু ব্যবসায়ী সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছে এটা সত্যি।
আমরা কিন্তু প্রাইজ ফিক্স করেছি কথাবার্তা বলেই। আলোচনা হয়েছে আমরা কোথাও স্টক হোল্ড করতে দেবো না। কোনো সুযোগ নিতে দেবো না। এ জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে যেখানেই এ চেষ্টা করা হবে আমরা ইন্টারফেয়ার করবো। এমন না যে আজকে দাম বেড়েছে বলে তারা বাড়াচ্ছে, তারা চেষ্টা করছে আগের হিসাব ধরে বাড়ানোর।’
তিনি বলেন, আলোচনা হয়েছে কিভাবে এটা সাশ্রয়ী মুল্যে সাধারণ মানুষের কাছে দেয়া যায়। সরকার যেটা করতে পারে সেটা হলো ভ্যাট-ট্যাক্সের ব্যাপারে। এ বিষয়ে একটি পজিটিভ সিদ্ধান্ত হয়েছে, আশা করছি কালকের মধ্যেই এটা নিয়ে উদ্যোগ নিতে পারবো।
তবে আমি জানাতে চাই, এ সুযোগ নিয়ে কোনো অসাধুতা যেন প্রশ্রয় না পায়, এরজন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। প্রত্যেক জায়গায় আমরা একটি টাস্কফোর্স গঠন করবো যাতে কেউ সুযোগ নিতে না পারে।’
এ সময় ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে জ্বালানি তেল, গ্যাসসহ বেশ কিছু পন্যের সরবরাহ বিঘ্নিত হতে পারে বলে সতর্ক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়ার যে যুদ্ধ তাতে আমাদের তেল ও গ্যাসের সরবরাহ কিছু কিছু জায়গায় কমে যাচ্ছে। এটা সারা বিশ্বেই হচ্ছে। আমরাও এখানে এফেক্টেড হচ্ছি বা হবো। এরপর গমের সাপ্লাই, যেহেতু এগুলো ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে আসতো আমরা একটু অসুবিধায় পড়তে পারি। দাম বৃদ্ধি হতে পারে। আমরা এটা কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি এজন্যই এই সভায় আমরা বসেছি।’
স্বরাস্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমরা এখন থেকেই ওএমএস কার্যক্রম বৃদ্ধি করবো যাতে করে আমরা স্ব্ল্প মুল্যে জনগণের হাতে পণ্য পৌঁছে দিতে পারি। দ্রব্যের যে সাপ্লাই চেইন, সেটাকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করবো। আমরা প্রডাক্ট স্টক নিয়ন্ত্রণ করবো। কেউ যাতে মজুদ বেশি রেখে পণ্যের মূল্য বাড়াতে না পারে।’
আরও পড়ুন: রাজধানীতে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দামে নাকাল সাধারণ মানুষ
তিনি বলেন, ভোজ্য তেলের দামের বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। একটা পরিসংখ্যান দিতে চাই, সয়াবিন তেল এক বছর আগে ছিল ১২৩৫ ডলার প্রতি টন, পামওয়েল ছিল ১০৩২ ডলার প্রতিটন। এবছরের ৯ মার্চ ভোজ্যতেল হয়েছে ১৯৩৫ ডলার প্রতিটন, আর পামওয়েলে হয়েছে ১৮৯৭ ডলার প্রতিটন। ভোজ্য তেল ১০ শতাংশও আমাদের দেশে হয় না। আমরা পুরোটাই আমদানি নির্ভর। কাজেই পরিস্থিতি কি হতে পারে আপনারা উপলব্ধি করছেন। যে কোনো উপায়ে দাম যেন অস্বাভাবিক বৃদ্ধি না হয় এটা আমরা নজর রাখবো।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রোজায় চাহিদা বৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে তড়িৎ আমদানির ব্যবস্থাও আমরা করছি। আমরা মোটামুটি সবাইকে উৎসাহ দেবো যে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো যাতে তারা আমদানি করে মার্কেট স্থিতিশীল রাখে। আমাদের আরেকটি অসুবিধা হতে পারে, গমের সরবরাহ। যেহেতু গম ইউক্রেন-রাশিয়া থেকে আসে এখানেও সমস্যা হতে পারে। চাল-গমের বাজারটাও যাতে স্থিতিশীল থাকে তার জন্য আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো।
রোজার সময় যাতে বিদ্যুত সরবরাহ কমে না যায়। আপনারা বুঝতে পারছেন যে ডিজেলের সরবরাহ কমে যেতে পারে। আমাদের গ্যাসের সরবরাহও কমে যেতে পারে। এগুলো ঠিক রাখার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি যাতে বিদ্যুতের ঘাটতি না হয়, জনগণ যেন অসুবিধায় না পরে।