আলাউদ্দিন চাকরি করেন একটি বেসরকারি ব্যাংকের পিয়ন হিসেবে। বিয়ে করেছেন বছর দুয়েক হলো। যা বেতন আসে মাসের খরচ বাঁচিয়ে কিছু জমা রাখতেন। কিন্তু গত বছর বাচ্চা হওয়ায় আলাউদ্দিনের খরচ সামাল দিতে টানাটানি লেগে যায়।
এমনতিই জীবন চালানোর জন্য যা দরকার তাই কিনেন সবচেয়ে সস্তা দামে। তার ওপর হঠাৎ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় কপালে ভাজ পড়েছে তের হাজার টাকার এই বেসরকারি কর্মীর। মাসের খরচ কম করে হলেও দুই হাজার টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের মতো মানুষের যে কি নিদারুণ কষ্ট কেউ বোঝে না। বেতন তো আর বছর বছর বাড়ে না। এমন জীবন সত্যি দুঃসহ।
আরও পড়ুন: বেড়েছে চালের দাম, সবজি ও তেলের দামও বাড়তি
তাইতো টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য নিতে দাঁড়িয়ে আছি যদি কিছুটা খরচ সাশ্রয় করা যায়। যতো বড় লাইন, মনে হয় না আজ পাবো। গতকাল মালিবাগের এই ট্রাকের সামনেই ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করে চলে গিয়েছিলাম।
এমন দৃশ্য শুধু আলাউদ্দিনের না, অনেক সীমিত আয়ের মানুষের যাদের দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া কিছু করার নাই।
দফায় দফায় চাল, ডাল, পেঁয়াজ, চিনিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় ভিড় সামাল দিতে তাই হিমশিম খাচ্ছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) পরিচালিত ট্রাকসেল কার্যক্রমও।
রাজধানী বিভিন্ন স্পটে ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি ট্রাকের সামনে ৫০ থেকে ৬০ জন করে ক্রেতার লাইন যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি পরিলক্ষিত হয় এই প্রতিবেদকের কাছে।
আরও পড়ুন: শেরপুরে চালের দাম বাড়ানোর দাবি চালকল মালিকদের
কোনো কোন জায়গায় ট্রাক আসার আগেই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্য দেখা গেছে শহরের এসব উন্মুক্ত বিক্রয় স্থলে।
বিক্রেতারা জানান, আগে ট্রাক সেলে কম দামে নিত্যপণ্য কিনতে আসতো নিম্ন আয়ের মানুষ বিশেষ করে দিনমজুর, রিকশাচালক, গাড়িচালক কিংবা গৃহকর্মী। তবে এখন সেই লাইনে পণ্য কিনতে মধ্যবিত্তরা ভিড় করছেন যা তাদের জন্য বাড়তি চাপও বটে।
টিসিবির ডিলার কামাল যিনি মেরাদিয়া এলাকায় ট্রাকসেল কার্যক্রম পরিচালনা করেন ইউএনবিকে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম বাড়লো মানুষ বেশি ভিড় করে আমাদের কাছে। আমরা সাধারণত স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে বিক্রি করি। এখন চিত্র ভিন্ন। সাধারণ বাজার থেকে কম বলে অনেকে ভিড় করছে।
‘আগে আমাদের মালামাল বিক্রি কার্যক্রম শেষ করতে সন্ধ্যা হয়ে যেতো। এখন তো ঘন্টা দুয়েকের ভিতর সব শেষ হয়ে যায়। আমাদের বরাদ্দ কম বলে অনেকে না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে। চাহিদার তুলনায় অনেক কম,’ তিনি বলেন।
টিসিবির ঊর্ধ্বতন কার্যনির্বাহী হুমায়ুন কবির ইউএনবিকে বলেন, ভোক্তাদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে টিসিবি এখন ১০ থেকে ১২ শতাংশ পণ্য সরবরাহ করছে যা আগে এটি ছিল মাত্র এক থেকে দুই শতাংশ। চাহিদা বাড়ায় ট্রাকসেল বাড়ানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টিসিবি ডিলারের ৬ মাসের কারাদণ্ড
হুমায়ুন কবির বলেন, টিসিবির পণ্য সারা বছরই বিক্রি হচ্ছে। গত এক বছরে প্রতি মাসেই বিক্রি হয়েছে। কোনো মাস বাদ যায়নি। পণ্য বিক্রির পরিমাণও পর্যায়ক্রমে বাড়বে।
তবে ক্রেতারা টিসিবির সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি দাবি করেছেন সরকারের কাছে। যাতে তাদের খরচ কিছুটা হলেও সাশ্রয় হয়।
টিসিবি কর্মকর্তারা জানান, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় রাখতে এ উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সাপ্তাহিক ছুটির দিন ‘ট্রাক সেল’ বন্ধ থাকছে। ট্রাক সেলে সাশ্রয়ী মূল্যে তিনটি পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১০০ টাকা এবং মসুর ডাল ও চিনি প্রতি কেজি ৫৫ টাকা দরে বিক্রি হবে।
এক একটি ট্রাকে ৫০০-৮০০ লিটার তেল, ৪০০-৬০০ কেজি চিনি এবং ৪০০-৬০০ কেজি মসুরের ডাল বরাদ্দ থাকে বলে জানান।
আর খোলা বাজারে সয়াবিন তেল প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা, চিনি ৭৮ টাকা এবং দুই প্রকারের মসুরের ডাল ১০০ ও ৮০ টাকা করে।
আরও পড়ুন: আ’লীগ নেতার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ টিসিবির পণ্য উদ্ধার