প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের ‘তলোয়ারের বিপরীতে রাইফেল বা তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ানো’ বক্তব্যে বিস্ময় ও হতাশা প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
এছাড়া নির্বাচন কমিশনের মতো একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান প্রধানের সহিংসতাকে উসকে দেয়ার শামিল এমন আত্মঘাতী ও অপরিণামদর্শী বক্তব্যকে অবিলম্বে প্রত্যাহারের আহবান জানিয়েছে সংস্থাটি।
রবিবার টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে দেখা যায়, রবিবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরুর দিনে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) সঙ্গে সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘সব দল সহযোগিতা না করলে আমরা সেখানে ব্যর্থ হয়ে যাব। আপনাদের সমন্বিত প্রয়াস থাকবে, কেউ যদি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ায়, আপনাকে রাইফেল বা আরেকটি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়াতে হবে। আপনি যদি দৌড় দেন, তাহলে আমি কী করব?’
আরও পড়ুন: বিদেশে পাচার করা অর্থ দেশে আনার সুযোগ বাতিলের আহ্বান টিআইবির
গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এমন সংবাদে গভীর বিস্ময় ও হতাশা প্রকাশ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন একটি দায়িত্বশীল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এবং সেই প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রের নির্বাচনসমূহ স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক এবং সবার জন্য সমান ক্ষেত্র নিশ্চিত করার দায়িত্ব তার ওপর ন্যস্ত। কিন্তু নির্বাচনে সবার সহযোগিতা চাইতে গিয়ে সম্ভাব্য সহিংসতা প্রসঙ্গে তিনি যে তলোয়ারের বিপরীতে তলোয়ার বা রাইফেল ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেছেন- প্রকান্তরে তা সহিংসতাকেই উসকে দেয়। এ ধরনের সহিংসতা সহায়ক বক্তব্য যে কোনো নাগরিকের জন্য যেখানে অপরাধ প্রবণতার দৃষ্টান্ত, সেখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মতো গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক পদে থেকে জনাব আউয়ালের এমন বক্তব্য আত্মঘাতী, অপরিণামদর্শী এবং অগ্রহণযোগ্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘কেননা সিইসির এমন বক্তব্য নির্বাচন কেন্দ্রিক পেশী শক্তির ব্যবহার, বুথ দখল কিংবা ভোটারদের ভোট দিতে না দিয়ে জোরপূর্বক বাক্স ভরার যে অরাজকতা বিগত কয়েকটি নির্বাচনকে নামমাত্র আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত করেছে, তাকেই উৎসাহিত করার নামান্তর। টিআইবি আশা করে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার এহেন বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেবেন এবং তলোয়ারের বিপরীতে রাইফেল বা তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ানোর পরামর্শটি প্রত্যাহার করে নেবেন।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান আয়োজনও নির্বাচন কমিশনের অঙ্গীকার হওয়া উচিত। কিন্তু নির্বাচনকালীন সহিংসতাকে রোধের নামে পাল্টা সহিংস আচরণের এই পরামর্শ সহিংসতা ঠেকাতে যথোপযুক্ত কৌশল প্রণয়নে কমিশনের ব্যর্থতাকে স্পষ্ট করে দেয়। একই সঙ্গে তা নির্বাচনের বিভিন্ন অংশীজন বা রাজনৈতিক দলগুলোকে বা তাদের ছত্রছায়ায় স্বার্থান্বেষী মহলকে সহিংসতা বেছে নিতেই উৎসাহিত করবে।’
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমরা আশা করি কমিশন এ ধরনের সহিংসতা সহায়ক প্রস্তাবের পথ পরিহার করে নির্বাচনকালীন সম্ভাব্য সহিংসতা রোধে কার্যকর কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে উদ্যোগী হবে। পাশাপাশি কোনো প্রকার সহিংসতা, বিশেষত নির্বাচনকালীন সহিংসতাকে উসকে দেয় এমন কোনো বক্তব্য দেয়া থেকে কমিশন নিজেকে বিরত রাখবে।’
আরও পড়ুন: নির্বাচনে সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিতে আইনি সংস্কারের সুপারিশ টিআইবির