বাংলাদেশকে ‘দীর্ঘদিনের বন্ধু ও উত্তম অংশীদার’ বলে মন্তব্য করে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, তার দেশ সমতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও একে অপরের স্বার্থ বিবেচনার নীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে।
রূপপুর প্রকল্পের আওতায় সহযোগিতার অংশ হিসেবে তিনি বলেন, রাশিয়া বাংলাদেশের পারমাণবিক খাতের জন্য অত্যন্ত যোগ্যতাসম্পন্ন বিশেষজ্ঞদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
পুতিন বলেছেন, পারমাণবিক সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে চান এমন ৮০ জনেরও বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে রাশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তাদের পড়াশোনা শেষ করেছেন এবং এ সংখ্যা বাড়তে থাকবে।
তিনি বলেন, ‘আসলে আমরা কেবল একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছি না, বরং একটি সম্পূর্ণ পারমাণবিক সেক্টর তৈরি করছি। বাংলাদেশে একটি শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শিল্প গড়ে উঠেছে এবং আমরা আপনাদের সঙ্গে মিলে এটি করছি।’
বৃহস্পতিবার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইউনিট ১-এ রাশিয়া থেকে পারমাণবিক জ্বালানি সরবরাহ উপলক্ষে একটি আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অংশ নেন।
শুক্রবার রাশিয়ান পক্ষের দেওয়া তার বক্তৃতার ইংরেজি অনুলিপি অনুসারে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, এই ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্পটি দুই দেশের স্বার্থ পূরণ করে এবং পারস্পরিক সহযোগিতা আরও জোরদার করতে সহায়তা করে।
আরও পড়ুন: রাশিয়ার দূতাবাসের পক্ষ থেকে বাংলাদেশিদের ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা
তিনি বলেনি, ‘অবশ্যই এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এবং জ্বালানি নিরাপত্তা জোরদার করতে একটি বাস্তব ও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।’
পুতিন বলেন, ‘এই তরুণ প্রজাতন্ত্রকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রথম কয়েকটি দেশের মধ্যে আমাদের দেশও ছিল এবং এর অর্থনীতির উন্নয়নে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলাম আমরা। পাশাপাশি আমরা প্রধান শিল্প ও জ্বালানি কাঠামোগুলো নির্মাণে সহায়তা করছি, যাতে বাংলাদেশের জনগণ এর সুফল পেতে থাকে।’
শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তির একজন স্বীকৃত বিশ্বনেতা হিসেবে তিনি বলেন, রোসাটম সবচেয়ে কঠোর নিরাপত্তা মানদণ্ডের পাশাপাশি পরিবেশগত ও সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার উপর ভিত্তি করে সবচেয়ে উন্নত প্রকৌশল সমাধান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সির (আইএইএ) নিয়মকানুন ও সুপারিশ কঠোরভাবে মেনে নির্মাণ ও উৎক্ষেপণের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, উদ্ভিদের শারীরিক সুরক্ষা ব্যবস্থা উন্নত ও নির্ভরযোগ্য।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এই প্রকল্পে তাদের সহায়তার জন্য আইএইএ-কে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’
পুতিন বলেছেন, স্বাভাবিকভাবেই রাশিয়ার প্রচেষ্টা কেবল স্থাপনা নির্মাণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ‘আমরা পারমাণবিক প্রকল্পের সমগ্র জীবনচক্র জুড়ে আমাদের বাংলাদেশি অংশীদারদের সহায়তা করব। যার মধ্যে চুল্লির জ্বালানির দীর্ঘমেয়াদি সরবরাহ, উদ্ভিদ রক্ষণাবেক্ষণ ও পারমাণবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্যও আমাদের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।’
গত বছর থেকে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য একটি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু রয়েছে।
আরও পড়ুন: রাশিয়া থেকে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের পণ্য নিয়ে জাহাজ মোংলা বন্দরে
সেখানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিশেষজ্ঞরা প্ল্যান্টে প্রাথমিক প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়াগুলো তদারকি করবেন। এক হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি নাগরিক ইতোমধ্যে তাদের প্রশিক্ষণ শেষ করেছেন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘তাদের প্রয়োজনীয় পেশাগত দক্ষতা এবং জ্ঞান তাদের শুধু পারমাণবিক শিল্পেই নয়, বাংলাদেশের অন্যান্য অনেক অর্থনৈতিক খাতেও নিয়োগের সুযোগ দেবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন আমাদের অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে আমরা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের এনার্জি ইউনিট ১-এ রাশিয়ান পারমাণবিক জ্বালানি সরবরাহের একটি প্রশংসাপত্র আমাদের বাংলাদেশি সহকর্মীদের কাছে হস্তান্তর করব। এর পরে রূপপুর সরকারি পারমাণবিক সুবিধার মর্যাদা পাবে।’
প্রেসিডেন্ট পুতিন শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার প্রতি তার ব্যক্তিগত মনোযোগের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
অন্যান্য অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন- ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সির (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রসি; স্টেট অ্যাটমিক এনার্জি কর্পোরেশন রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ; বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান; রূপপুর প্রকল্প পরিচালক শওকত আকবর এবং রূপপুর এনপিপি নির্মাণের একটি সাধারণ ঠিকাদারের সিইও আন্দ্রেই পেট্রোভ।
স্টেট কর্পোরেশন রোসাটম ২০১১ সালে স্বাক্ষরিত একটি আন্তঃসরকারি চুক্তির অধীনে পাবনা জেলায় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে।
প্ল্যান্টটি ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসহ দুটি প্রজন্মের ৩+ চুল্লি নিয়ে গঠিত হবে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ সাইটে কাজ করছেন ৪ হাজারেরও বেশি রাশিয়ান নাগরিকসহ ২০ হাজার বিশেষজ্ঞ।
আরও পড়ুন: রাশিয়ার নিকট যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ দাবির জাতিসংঘের প্রস্তাবে ভোট দেয়নি বাংলাদেশ