ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাথে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিয়ানমার বলেছে যে তারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে। কিন্তু প্রত্যাবাসনের জন্য দুটি তারিখ দেয়ার পরেও তারা কাউকে ফেরত নেয়নি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমার কোনো চাপ অনুভব করে না এবং তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে বাংলাদেশের আহ্বানে সাড়া দেয় না। এ বিষয়ে আমরা যদি শতবার জানতে চাই, তারা দু’বার জবাব দেয়।’
রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার জন্য মিয়ানমার দু’বার তারিখ দেয় এবং বাংলাদেশ তখন পুরোপুরি প্রস্তুত ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারা (মিয়ানমার) যাচাই-বাছাই শেষে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি।’
ড. মোমেন বলেন, মিয়ানমার ইউরোপীয় দেশগুলোসহ বিভিন্ন দেশের সাথে ব্যবসা করছে এবং বিনিয়োগ পাচ্ছে।
‘রাশিয়া এবং চীন সবাইকে দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমস্যা সমাধানে উৎসাহিত করেছে। সমাধানের জন্য আমরা দ্বিপক্ষীয়, ত্রিপক্ষীয় এবং বহুপক্ষীয়- সব ফ্রন্টে নিযুক্ত আছি,’ বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: মিয়ানমারে সরকার গঠনের পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
তিনি বলেন, চীন স্বেচ্ছায় বাংলাদেশকে সহায়তা করতে এসেছিল তবে এর অর্থ এই নয় যে মিয়ানমার সব সময় চীনের কথা শুনবে।
ড. মোমেন বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের জীবনযাত্রা উন্নয়নের দিকে বেশি মনোনিবেশ করছে। তবে বাংলাদেশের লক্ষ্য যত দ্রুত সম্ভব তাদের ফিরিয়ে দেয়া।
সরকার এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসান চরে স্থানান্তর করবে কিন্তু এখনও এর কোনো তারিখ নির্ধারিত হয়নি জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কোনো বড় ঘোষণা না করে তাদের ছোট ছোট দলে বিভক্ত করে স্থানান্তর করব।’
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও এনজিও কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে স্থানান্তর করতে বাধা সৃষ্টি করছে বলেও জানান তিনি।
মঙ্গলবার ড. মোমেন বলেছিলেন, মিয়ানমারে নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা পুনরায় শুরু করার জন্য যোগাযোগ করবে এবং রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে।
কোভিড-১৯ মহামারি এবং মিয়ানমারের সাধারণ নির্বাচনের কারণে প্রত্যাবাসন আলোচনা স্থগিত রয়েছে।
মন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ-চীন-মিয়ানমার ত্রিপক্ষীয় আলোচনা প্রক্রিয়াও পুনরায় শুরু করবে বাংলাদেশ যাতে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায়। ইতোমধ্যে এ জাতীয় তিনটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: দায়মুক্তি অব্যাহত থাকলে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের সম্ভাবনা কম: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রতিশ্রুতি দিলেও গত তিন বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও ফিরিয়ে নেয়নি মিয়ানমার।
বাংলাদেশ বলছে, নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে একটি আস্থার ঘাটতি রয়েছে যার সমাধান মিয়ানমারের পক্ষ থেকেই করা উচিত।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে যদি স্বদেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ না দেয়া হয় তাহলে তারা ‘আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলবে’।
উল্লেখ্য, মিয়ানমার সরকারের প্রতি রোহিঙ্গাদের ‘আস্থার অভাবের’ কারণে ২০১৮ সালের নভেম্বরে এবং ২০১৯ সালের আগস্টে দুই দফায় প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
২০১৭ সালে ২৩ নভেম্বর প্রত্যাবাসন চুক্তিতে স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার।