পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশকে উন্নয়ন সহায়তা প্রদানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তদবির করার জন্য বিএনপি ও জামায়াত আটটি সংস্থাকে নিয়োগ করেছে।
বুধবার জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ৩০০ ধারায় বক্তব্য দেয়ার সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, সরকারের কাছে প্রমাণ রয়েছে যে বিএনপি লবিস্ট নিয়োগের মাধ্যমে র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের সঙ্গে জড়িত ছিল এবং র্যাবকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিষেধাজ্ঞার জন্য জাতিসংঘের শান্তি অপারেশন বিভাগের কাছে আবেদন করেছে।
মন্ত্রী বলেন, দুঃখজনক যে বিএনপির নিয়োগকৃত লবিস্টরা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এমন বিবৃতি দিয়েছে যা দেশের মানুষকে ক্ষুব্ধ করবে। বিএনপি তাদের (যুক্তরাষ্ট্রকে) বলেছে, বাংলাদেশের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে।
আব্দুল মোমেন বলেন, মার্কিন আইন অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ বৈধ। ভারত, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব এবং অন্যান্য দেশ এবং বিশ্বের অনেক সংস্থা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য লবিস্ট নিয়োগ করে।
আরও পড়ুন: লবিস্ট নয় ভুল ধারণা পরিবর্তনে পিআর ফার্ম নিয়োগ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
তিনি বলেন, তবে এখানে মূল বিষয় হচ্ছে লবিস্ট (বিএনপির) নিয়োগের উদ্দেশ্য।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপি-জামায়াত মোট আটটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছে।
২০১৪ সালে, জামায়াত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার জন্য একটি ফার্ম নিয়োগ করেছিল। এ জন্য তারা দেড় লাখ মার্কিন ডলার পরিশোধ করেছে। তারা তাদের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করার জন্য আরেকটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছে।
তিনি বলেন, ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত প্রতি মাসে রিটেইনার ফি হিসেবে এক লাখ ২০ হাজার ডলার এবং প্রতি বছর ২৭ লাখ ডলার ব্যয় করেছে বিএনপি।
মোমেন বলেন, বিএনপি ২০১৭ সাল পর্যন্ত চারটি এবং ২০১৯ সালে একটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছে। এছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে জামায়াত-বিএনপি যৌথভাবে তিনটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপির তৃণমূলের কেউই চাইবে না দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাক। শুধুমাত্র তাদের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা তাদের না জানিয়ে এমন কাজ করেছেন।
আরও পড়ুন: জাতিসংঘে চিঠি শান্তিরক্ষা মিশনে কোন প্রভাব ফেলবে না: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মন্ত্রী তার বিবৃতিতে বলেছেন, সরকার লবিস্ট নিয়োগ করেনি বরং একটি পিআর ফার্ম নিয়োগ করেছে।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার এমন কোনো সংস্থাকে নিয়োগ দেয়নি যারা সিনেট এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টে লবিং করবে।
তিনি আরও বলেন, সরকার দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বন্ধ করতেই এটা করেছে। দেশের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে তা মোকাবিলা করতেই সত্য প্রচার করা হয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৪-১৫ সালে বিজিআর নামে একটি সংস্থা নিয়োগ করা হয়েছিল। বাংলাদেশ বিরোধী অভিযান রুখতে বিজিআর নিয়োগ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, দেশের স্বার্থে, দেশের মানুষের জন্য, দেশের মঙ্গলের জন্য এবং বিদেশে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বন্ধে বাংলাদেশ সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
মন্ত্রী ওইসব লবিস্ট ফার্মকে টাকা দিতে বিএনপি যে বিপুল অর্থ ব্যয় করেছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং কীভাবে ওই টাকা বিদেশে পাঠানো হয়েছে তা তদন্তের দাবি জানান।
তিনি বলেন, সরকার ও বিএনপির মধ্যে মতপার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু তাতে দেশের কোনো ক্ষতি হতে পারে না।
র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা
মোমেন বলেন, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে সময় লাগবে এবং সঠিক তথ্য দেয়া হলে যুক্তরাষ্ট্র তা তুলে নেবে।
তিনি আরও বলেন, সরকার দেশের নির্ভরযোগ্য অপরাধ দমনকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কাজ করছে এবং আগামী মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সংলাপের কাজ শুরু হবে।
তিনি আরও বলেন, এপ্রিল মাসে নিরাপত্তা সংলাপ হবে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করার প্রক্রিয়া চলছে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্র র্যাবকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছি। ইনশাআল্লাহ, যখনই আমরা তাদের কাছে সঠিকভাবে তথ্য সরবরাহ করতে সক্ষম হব, আমি বিশ্বাস করি র্যাবের মতো একটি ভাল সংস্থার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে। তবে প্রক্রিয়াটি আগামীকাল (শিগগিরই) শুরু হবে না। সময় লাগবে। আমাদের ধৈর্য্য ধরতে হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কোনো ধরনের পূর্ব আলোচনা ছাড়াই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বিভিন্ন লবিস্ট ফার্মের প্রচারণার কারণে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। তারা শুধু মার্কিন সরকারের কাছে মিথ্যা তথ্যই প্রকাশ করেনি, বিশ্বের বিভিন্ন বৃহৎ মানবাধিকার সংস্থাকেও তারা মতামত দিয়ে আসছে যে র্যাব খুবই খারাপ একটি সংগঠন।
তিনি বলেন, র্যাব জনগণের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। তারা দেশের সন্ত্রাস, মাদক, মানব পাচার বন্ধ করেছে। এই বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কিছু লোক মিথ্যা তথ্য দেয়ায় এই নিষেধাজ্ঞা আসে।
তিনি বলেন, র্যাব এমন কোনো খারাপ কাজ করেনি যে, বিশ্বে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচিত হবে। বরং এটি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কাজ করছে।
মোমেন বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার প্রধানদের কাছে চিঠি দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তারা ওই চিঠিতে দেশকে সব ধরনের সাহায্য বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়াও তারা বাংলাদেশের কারণে আমেরিকার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার বিষয়েও অপপ্রচার চালিয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।