বাংলাদেশে আশ্রিত প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গার নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন, সে দেশের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাত নিরসন ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো এবং অন্যান্য অংশীদারদের সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে জোর আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় শুক্রবার (৩১ মে) বিকালে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সাধারণ পরিষদের সভাপতি, মিয়ানমার বিষয়ে মহাসচিবের বিশেষ দূত, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার এবং জাতিসংঘের ৬ উন্নয়ন সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে পৃথক চার বৈঠকে এ আহ্বান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা সংকট: বাংলাদেশের বন্ধ সীমান্ত নীতি প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি ডেনিস ফ্রান্সিসের সঙ্গে বৈঠককালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৭ সালে মিয়ানমারে সহিংসতা থেকে বাঁচতে প্রায় ১০ লাখ বাংলাদেশে পালিয়ে এলে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের মানুষ তাদের মমতা দিয়ে গ্রহণ করেছিল। কিন্তু ক্রমেই রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে বিভিন্ন স্থানে কর্মসংস্থানে যুক্ত হচ্ছে আর ক্যাম্পগুলো মানব পাচার, মাদক চোরাচালান, জঙ্গি কার্যক্রমে যুক্ত হওয়াসহ নানা অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। ফলে স্থানীয়দের জীবন অতিষ্ঠপ্রায়।’
আরেকটি বৈঠকে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডির সঙ্গে আলাপকালে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের পাশাপাশি গত ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ ও সেনাবাহিনীর প্রায় ৭৫০ সদস্য বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের বেশিরভাগকেই ফেরত পাঠানো হয়েছে এবং বাকিদেরও ফেরত পাঠানো হবে। মিয়ানমারে বিবদমান গোষ্ঠির ছোঁড়া শেল বাংলাদেশে পড়ে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। এসবের পুনরাবৃত্তি রোধ একান্ত প্রয়োজন বেলে উল্লেখ করেন তিনি।
মিয়ানমার বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত অস্ট্রেলিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপের সঙ্গে বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারে চলমান সংঘাতময় পরিস্থিতি কোনো নতুন ঘটনা নয় এবং এটিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিপক্ষে ব্যবহারের অজুহাত তৈরির সুযোগ দেওয়া অনুচিত।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা বিষয়ে ওআইসি দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্রিফিং
এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘ক্রাইসিস, কনফ্লিক্টস অ্যান্ড ইন্টার-এজেন্সি কোলাবরেশন: নেক্সাস অ্যাপ্রোচ' শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। জাতিসংঘের ৬ সংস্থা- ইউএনডিপি, ইউএনএফপিএ, ইউএনওপিএস, ইউএন উইমেন প্রধান ও ইউনিসেফ এবং ডব্লিউএফপির উপপ্রধান এতে অংশ নেন।
এ সময় বিশ্বে সংঘাত প্রভাবিত অঞ্চলগুলোতে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগের সুবিধাগুলো তুলে ধরেন ড. হাছান মাহমুদ।
রাখাইন ও কক্সবাজারের পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে উদ্বাস্তু সংকট নিরসন ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উন্নতির লক্ষ্যে জাতিসংঘের সব সংস্থা, তহবিল এবং কর্মসূচিকে সুসংহতভাবে কাজ করতে আহ্বান জানান তিনি।
বৈঠকগুলোতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আরও ছিলেন- জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ এ মুহিত, মন্ত্রণালয় ও মিশনের অন্যান্য সদস্যরা।
আরও পড়ুন: শনিবার থেকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য ডব্লিউএফপি’র রেশন আংশিক বাড়ছে