মঙ্গলবার বিকালে নিজ কার্যালয়ে কয়েকজন সাংবাদিকের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমরা শুনেছি সেখানে কিছু রোহিঙ্গা নেতার উদয় হয়েছে। তারা কোনো রোহিঙ্গার (তাদের মাতৃভূমিতে) ফেরা চায় না। তারা ফিরতে চাওয়াদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করছেন। কিছু আইএনজিও এবং এনজিও তাদের (রোহিঙ্গা) প্ররোচনা দিচ্ছে।’
বাংলাদেশ যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবাসন দেখতে চায় জানিয়ে তিনি বলেন, দুই দেশ বৃহস্পতিবার থেকে স্বল্প মাত্রায় প্রত্যাবাসন পুনরায় শুরুর চেষ্টা করছে।
‘আমরা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও সুরক্ষিত ফেরা এবং তাদের নিজেদের অঞ্চলে স্বাধীনভাবে ঘোরাফেরা চাই। মিয়ানমার এ বিষয়ে একমত হয়েছে,’ উল্লেখ করে ড. মোমেন যোগ করেন যে অনেক রোহিঙ্গা ফিরে যেতে ইচ্ছুক।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, রোহিঙ্গারা মূলত নাগরিকত্ব চায় এবং তাদের দাবি অনুযায়ী, নাগরিকত্ব না পাওয়া পর্যন্ত তারা যাবে না।
‘মিয়ানমার বলছে এটা একটি প্রক্রিয়া,’ জানিয়ে ড. মোমেন বলেন, রোহিঙ্গারা ফেরার পর কার্ড পাবে এবং তারপর তারা নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রক্রিয়ায় আসবে।
রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবাসনের আগে যাচাইয়ের জন্য ২৯ জুলাই ছয় হাজার পরিবারের ২৫ হাজার রোহিঙ্গার নতুন একটি তালিকা মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৫ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা পেল মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে প্রায় আট হাজারের পরিচয় যাচাই করা হয়েছে।
ড. মোমেন বলেন, মিয়ানমার প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য মাত্র ৩,৪৫০ জন রোহিঙ্গাকে ছাড়পত্র দিয়েছে। আমরা যত দ্রুত সম্ভব তাদের ফিরে যাওয়া চাই।’
বাংলাদেশে তাদের অবস্থান দীর্ঘস্থায়ী হলে এ অঞ্চলের শান্তি বিনষ্ট হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ অঞ্চলের শান্তি রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের ওপর নির্ভর করছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ড. মোমেন বলেন, এ বিষয়ে চীন খুব ভালোভাবেই জড়িত এবং তারা মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য বোঝাতে বাংলাদেশকে সাহায্য করছে।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে সফররত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শংকরের সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।
এ বিষয়ে জয়শংকর বলেন, তারা একমত যে রোহিঙ্গাদের নিজেদের ভূমি রাখাইন রাজ্যে ‘নিরাপদ, দ্রুত ও টেকসই’ প্রত্যাবাসন তিন দেশ- বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও ভারতের জাতীয় স্বার্থের বিষয়।
‘বাস্তুচ্যুত মানুষদের বাংলাদেশে আরও সহযোগিতা দিতে এবং রাখাইন রাজ্যে আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে আমাদের প্রস্তুত থাকা আমরা পুনর্ব্যক্ত করেছি,’ বলেন তিনি।
রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত বিপুল মানুষকে সহযোগিতায় বাংলাদেশের মানবিক আচরণের প্রশংসা করেন ভারতীয় মন্ত্রী। সেই সাথে তিনি এসব মানুষের মিয়ানমারে নিরাপদ, দ্রুত ও স্থায়ীভাবে ফেরার জন্য ভারতের অব্যাহত সমর্থনের আশ্বাস দেন।
বাংলাদেশে বর্তমানে ১১ লাখের অধিক রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়ে আছেন। তাদের বেশির ভাগই মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর বর্বর অভিযান থেকে জীবন বাঁচাতে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর চুক্তি সই করে। পরে দুই দেশ ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম এগিয়ে নিতে ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ নামে চুক্তি করে।
‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ অনুযায়ী, প্রত্যাবাসন শুরুর দুই বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল।
রোহিঙ্গাদের প্রথম দলের ফেরার কথা ছিল গত বছরের ১৫ নভেম্বর। কিন্তু রাখাইনে অনুকূল পরিবেশ না থাকায় রোহিঙ্গারা ফিরতে রাজি না হওয়ায় এ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।