তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনে বক্তব্যকালে বলেন, ‘বিভিন্ন মাদক সহজেই সারা দেশে পাওয়া যায়। দেশে মাদক প্রবেশের অন্যতম পথ কুমিল্লা। মাদক স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে গেছে। শিক্ষার্থীদের অবশ্যই এসব এড়িয়ে চলতে হবে।’
নানা ধরনের মাদকের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন যে তাদের সময়ে তারা এমনকি এসবের নামই শুনেননি। ‘মাদকের বিরুদ্ধে প্রসিদ্ধ ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও জনপ্রতিনিধিদের সামাজিক আন্দোলন করা উচিত।’
আবদুল হামিদ বলেন, সমাজ থেকে মাদক দূর এবং দেশে কেউ যাতে মাদক গ্রহণ ও ব্যবসা করতে না পারে সে জন্য জনগণকে উৎসাহিত করতে শিক্ষার্থীদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। ‘মাদকের বিরুদ্ধে তোমাদের (শিক্ষার্থী) নীরব বিপ্লব শুরু করতে হবে।’
এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি তোমাদের অন্য শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি লোকজনকেও অনুপ্রাণিত করার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি। না হলে পুরো দেশ এবং ভবিষ্যত প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাবে।’
রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়মিত পাঠদানের সাথে গুণগত গবেষণার জন্য উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘পাঠদানের পাশাপাশি গুণগত মানসম্মত গবেষণার মাধ্যমে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা যাতে বাংলাদেশের সম্পদ ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে দেশের অগ্রযাত্রায় শামিল হতে পারে তার উদ্যোগ নিতে হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়কে জ্ঞানচর্চা, মুক্তচিন্তা ও মানবিক মূল্যবোধ বিকাশের ক্ষেত্র হিসেবে বর্ণনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আবদুল হামিদ বলেন, এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দিয়ে নতুন নতুন জ্ঞানের ক্ষেত্র এবং সে বিষয়ে কার্যকর, প্রাসঙ্গিক ও ব্যবহারিক কার্যক্রম প্রণয়ন করতে হবে।
তার মতে, বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে শিক্ষার্থীদের আধুনিক ও প্রযুক্তি জ্ঞানে সমৃদ্ধ হতে হবে।
বাংলাদেশের বিশাল তরুণ সমাজকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করার জন্য আনুপাতিক হারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন আবদুল হামিদ।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার প্রায় প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ‘২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে এ উদ্যোগ ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।’
শিক্ষার্থীদের সবসময় সত্য ও ন্যায়কে সমুন্নত রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নৈতিকতা ও দৃঢ়তা দিয়ে দুর্নীতি ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে।’
বিশ্ববিদ্যালয় লেখাপড়া ও জ্ঞানার্জনের স্থান, র্যাগিং বা টাকা পয়সা রোজগারের জায়গা নয় উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘বাবা-মা অনেক কষ্ট করে এমনকি অনেকে সর্বস্ব ত্যাগ করে তোমাদের লেখাপড়ার খরচ যোগায়। তাই খেয়ালের বসে বা লোভ-লালসায় পড়ে নিজেদের জীবন নষ্ট করবে না এবং পরিবার ও সমাজের জন্যও বিপর্যয় ডেকে আনবে না। অতীতকে মনে রেখে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখবে। মানবতার কল্যাণ করবে। জীবনের চড়াই-উৎরাই পথে হতাশ হবে না। বরং সাহসের সাথে মোকাবিলা করবে।’
অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী জনাব মহিবুল হাসান চৌধুরী, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এমরান কবির চৌধুরী।
মোট ২ হাজার ৮৮৮ জন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সমাবর্তনে যোগ দেন। তাদের মধ্যে ১৪ জন স্বর্ণপদক পান।
দেশের ২৬তম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাতটি বিভাগ নিয়ে ২০০৬ সালে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে এখানে ১৯ বিভাগে ২৫৩ শিক্ষক এবং ৭ হাজার ৫৫ শিক্ষার্থী রয়েছেন।