বুধবার তিনি বলেন, ‘আপনার শিশুকে শিল্প ও সংস্কৃতি চর্চায় অনুপ্রাণিত করুন। কোভিড-১৯ মহামারি অনেক কিছুই বদলে দিয়েছে। তবে আমি আশা করি একটি নতুন বিশ্ব গড়ায় শিল্পীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।’
রাজধানীর কসমস সেন্টারে ‘শেখ হাসিনা: অন দ্য রাইট সাইড অব হিস্ট্রি’ শীর্ষক দুই মাসব্যাপী চলমান শিল্পকর্ম প্রদর্শনী পরিদর্শন শেষে তিনি এ কথা বলেন।
আরও পড়ুন: কসমস সেন্টারে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে প্রদর্শনী দেখলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত
কসমস গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ জামিল খান রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানান এবং প্রদর্শনীর বিষয়ে তাকে অবহিত করেন।
শিল্প ও সংস্কৃতিমনা রাষ্ট্রদূত রেজা নফর কোভিড-১৯-এর কারণে তার পরিবারের কয়েকজন বন্ধুসহ সবার মৃত্যুতে প্রতি গভীর শোক জানান।
তিনি করোনাভাইরাসের কারণে প্রতিটি জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উল্লেখ করে কোভিড-১৯ পরবর্তী যুগে সবকিছুকে নতুন করে চিন্তা-ভাবনা করার কথা বলেন।
আরও পড়ুন: শিল্পকে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে: দোরাইস্বামী
ইরানের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখের বিষয় কোভিড-১৯ মহামারি বৈশ্বিক অর্থনীতি, রাজনীতি এবং শিল্প ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পরিবর্তন নিয়ে এসেছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে তার সাক্ষাতের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, শিল্প ও সংস্কৃতির প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও বিশেষ অনুরাগ রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে রাষ্ট্রদূত রেজা নফর বলেন, ছোটবেলায় প্রধানমন্ত্রীকে ঘুম পাড়ানোর সময় তার মা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পারস্যের কবি খাজা শামস-উদ-দীন মোহাম্মদ হাফিজ-ই সিরাজির কবিতা আবৃত্তি করে শুনাতেন। যিনি হাফেজ বা হাফিজ ছদ্মনামে লিখতেন।
আরও পড়ুন: গ্যালারি কসমসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘটনাবহুল জীবন প্রদর্শিত
শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজকদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘এ শিল্প প্রদর্শনী পরিদর্শনে আসতে পারা আমার জন্য সম্মানের। শিল্পকর্মের প্রতি আমার স্ত্রী ও মেয়েরও বিশেষ আগ্রহ আছে। পরিদর্শনটি আমাকে কোভিড-১৯-এর কারণে যে বন্দীদশা তৈরি হয়েছে তা থেকে বের হয়ে আসার সুযোগ করে দিয়েছে।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে এই প্রদর্শনীর বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে।
‘এখানে শিল্পকর্ম প্রদর্শনী দেখতে এসে আমি এক বৃহত্তর পৃথিবীর সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি,’ বলেন তিনি।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে গ্যালারি কসমসের আর্ট ক্যাম্প
এক পৃথক বার্তায় আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, করোনভাইরাস বিশ্বকে এক দুঃখের সাগরে ফেলে দিয়েছে এবং বর্তমান পরিবর্তিত এ পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে নতুন পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে। শিল্প একমাত্র মাধ্যম যা মানুষের মানসিক পরিস্থিতি ভালো করে দিতে পারে।
তিনি বলেন, এই মূল্যবান ও হৃদয়ে দাগ কেটে যাওয়ার মতো চিত্রকর্মগুলোতে দক্ষ শিল্পীরা হৃদয়ে ধারণ করা জাতীয় ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের প্রতিটি চেতনা এবং ভালোবাসাকে দৃশ্যমান সূক্ষ্ম শিল্পকর্মের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।
ইরানের রাষ্ট্রদূত বলেন, নিঃসন্দেহে এই প্রদর্শনীর প্রতিটি চিত্রকর্ম স্বাধীনতচেতা বাঙালি শিল্পীরা তাদের মাতৃভূমির প্রতি কতটা যত্নশীল তার বহিঃপ্রকাশ।
‘সমৃদ্ধ এ প্রদর্শনীতে আসতে পারার বিশেষ সুযোগ পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছি,’ যোগ করেন তিনি।
এ সময় মাসুদ খান বলেন, সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে শিল্প ও সংস্কৃতির বিশাল ভূমিকা মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে শিল্পীরা চমৎকার কাজ করেছেন: তথ্যমন্ত্রী
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বছরব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শিল্প ছাড়া আজকের বিশ্ব কল্পনাই করা যায় না। প্রতিটি শিল্পকর্ম তার নিজস্ব উপায়ে সমাজে শান্তি নিয়ে আসে। কোভিড-১৯ মহামারির এই সংকটময় সময়ে আমাদের সমাজের জন্য শিল্প আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।’
মাসুদ খান ইরানকে বাংলাদেশের অনেক পুরোনো বন্ধু উল্লেখ করে বাংলাদেশ ও ইরানের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারের গুরত্বারোপ করেন।
গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ আনুষ্ঠানিকভাবে এ শিল্প প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন।
কসমস ফাউন্ডেশনের সহায়তায় গ্যালারি কসমস সম্প্রতি কসমস আতেলিয়ার৭১-এর সাথে যৌথভাবে বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে এক আর্ট ক্যাম্পের আয়োজন করে।
আরও পড়ুন: গ্যালারি কসমসের আয়োজনে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রথম ভার্চুয়াল প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত
ক্যাম্পে প্রখ্যাত শিল্পী অলকেশ ঘোষ, আহমেদ শামসুদ্দোহা, শেখ আফজাল, নাসির আলী মামুন, বিশ্বজিৎ গোস্বামী, রত্নেশ্বর শুত্রধর, রাসেল কান্তি, মনজুর রশিদ, সৌরভ চৌধুরী, মানিক বনিক, জয়ন্ত সরকার, আজমল হোসেন, ফিদা হোসেন, অমিত নন্দী, দিদারুল লিমন, তামান্না আফরোজ, ফাহিম চৌধুরী, মিসকাতুল আবির, প্রসূন হালদার, হাসুরা আক্তার রুমকি ও সুরভী আক্তার অংশ নেন। আর্ট ক্যাম্পে অংশ নিয়ে তাদের আঁকা শিল্পকর্মগুলো দিয়েই প্রদর্শনীটি করা হচ্ছে।
কসমস সেন্টারে প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রদর্শনীটি অব্যাহত থাকবে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এখানে একসাথে মাত্র ২০ জন দর্শনার্থী পরিদর্শনের সুযোগ পাচ্ছেন। পরিদর্শনের সময় দর্শনার্থীদের সব সময় মাস্ক পরে থাকা এবং পরস্পর থেকে যথাযথ দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হচ্ছে।
এর আগে, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী, ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন, তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তুরান এবং মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার এ শিল্প প্রদর্শনী পরিদর্শন করেছেন।
ইরানের রাষ্ট্রদূত কসমস সেন্টারে সংবাদ সংস্থা ইউএনবি’র নিউজরুম, কসমস গ্রুপের বিভিন্ন বিভাগ এবং ওয়াইল্ডটিমের কার্যালয় পরিদর্শন করেন।
এ সময় অন্যদের মধ্যে ওয়াইল্ডটিমের সিইও এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম আনোয়ারুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে অসাধারণ এ পরিদর্শনী দেখার আমন্ত্রণ ও আতিথেয়তার জন্য কসমস গ্রুপকে ধন্যবাদ জানান ইরানের রাষ্ট্রদূত।