পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ফলে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে কিনা তা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করবে।
শনিবার (১১ ডিসেম্বর) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
আইজিপি ও র্যাবের ছয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তা মনে করি না, তবে এটা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘যেসব দেশ, সরকার উন্নয়ন ও জনকল্যাণে ভালো কাজ করেছে, তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে।’
তিনি বলেন, ‘কোনো দেশ বা সরকার ভালো কাজ করলে সমস্যা দেখা দেয়, এর অনেক উদাহরণ রয়েছে। দেশের মানুষের কল্যাণে কিছু করলে, ঈর্ষার বশবর্তী হয়ে অনেকেই অনেক কিছু করে।’
ড. মোমেন বলেন, দেশকে সন্ত্রাসমুক্ত করতে র্যাবের ভূমিকা থাকায় ‘শৃঙ্খলাবদ্ধ’ এই বাহিনীর ওপর দেশের মানুষের আস্থা রয়েছে।
আরও পড়ুন: আইজিপিসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রত্যাখান ঢাকার
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব মূল্যায়ন ছাড়াও কিছু এনজিও এবং মানবাধিকার গোষ্ঠী র্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে।’
ড. মোমেন বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ছয় লাখ মানুষ নিখোঁজ হয় এবং কীভাবে তারা নিখোঁজ হয় তা মার্কিন সরকার জানে না। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর প্রায় এক হাজার মানুষ পুলিশের হাতে মারা গেলেও কোনো সংস্থার প্রধানকে শাস্তি দেয়া হয় না।
যুক্তরাষ্ট্র র্যাব সম্পর্কে যা বলেছে তা বাস্তবতার ভিত্তিতে নয় মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের বিশ্লেষণ আরও সুনির্দিষ্ট এবং আরও তথ্যভিত্তিক হওয়া উচিত।
গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে কেন নিমন্ত্রণ করা হলো না, এ প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি পরিপক্ব দেশ। সেখানে অনেক পণ্ডিত মানুষের বাস। কিন্তু সেদেশও অনেক সময় অপরিপক্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অনেক সময় দেখা গেছে, তাদের নেয়া সিদ্ধান্ত প্রফিটেবল হয়নি।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান মহাপরিদর্শক বেনজির আহমেদ এবং বাংলাদেশের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ছয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট।
আরও পড়ুন: র্যাব কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা: মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি নিষেধাজ্ঞা কর্মসূচির অধীনে র্যাবের এই সাতজন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজির আহমেদ ছাড়াও নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা অন্যরা হলেন-র্যাব ইউনিট-৭ এর সাবেক কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ, র্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মোহাম্মদ আনোয়ার লতিফ খান।
২০১৮ সালের কক্সবাজারের টেকনাফে পৌর কাউন্সিলর একরামুল হকের ‘বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ এর ঘটনাটি উল্লেখ করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।
এ কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন নির্বাহী আদেশ (ইও) ১৩৮১৮ জারি করা হয়েছে। এর মানে হলো দেশটিতে এ কর্মকর্তাদের কোনো সম্পত্তি থাকলে তা জব্দ করা হবে। এ প্রথম বাংলাদেশের কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: আইজিপিসহ র্যাবের ৭ কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা