ঘরে কিংবা বাইরে কোথাও নিরাপদ নয় নারী ও কন্যাশিশুরা। জন সমাগমস্থল ও চলার পথকে নারীদের জন্য নিরাপদ করতে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা ও হয়রানি রোধে জনসচেতনতার কোন বিকল্প নেই। একজন নারীর নিরাপত্তা ও চলার পথকে মসৃণ করতে হলে, তাঁকে অবশ্যই উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি এগিয়ে আসতে হবে তরুণ সমাজকে।
বরিশালে শুক্রবার ‘জনস্থানে নারীর নিরাপত্তা ক্যাম্পেইন’ বিষয়ক এক বিভাগীয় কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, সেন্টার ফর রিসার্চ এন্ড ইনফরমেশন’র (সিআরআই) ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের যৌথ উদ্যোগে যুব স্বেচ্ছাসেবকদের দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
আরও পড়ুন: গ্রামীণ নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ই কমার্স সবাস্তবায়নে চুক্তি সই
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি-ইউএনডিপি'র হিউম্যান রাইটস প্রোগ্রাম-এর সহযোগিতায় আয়োজিত কর্মশালাটিতে বরিশালের ২৫ জন যুব সংগঠক অংশগ্রহণ করে নারীর প্রতি নিরাপদ চলাচল নিশ্চিতে অঙ্গীকার করেন। নগরীর এবিসি ফাউন্ডেশনে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় ক্যাম্পেইনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, অংশগ্রহণমূলক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ, অংশীদার বিশ্লেষণ এবং তাদের দায়িত্ব নির্ধারণসহ প্রচারাভিযান সফল করার মূলনীতি নিয়ে আলোচনা এবং দলীয় কাজের উপস্থাপন করা হয়। সহায়ক হিসেবে কর্মশালা পরিচালনা করেন জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা সাজ্জাদ পারভেজ ও ইয়ুথনেটের সমন্বয়কারী সোহানুর রহমান।
আরও পড়ুন: দেশের নারী উদ্যোক্তাদের জন্য অনুঘটক হিসেবে আবির্ভূত কোভিড
কর্মশালায় নারীর প্রতি জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা ও যৌন হয়রানি নিয়ে আলোচনা করেন ইউএনডিপির জেন্ডার বিশেষজ্ঞ বিথিকা হাসান এবং হয়রানির শিকার হওয়া নারীদের দোষারোপের সংস্কৃতি নিয়ে কথা বলেন আভাসের নির্বাহী পরিচালক রহিমা সুলতানা কাজল। অনলাইনে যুক্ত হয়ে ইয়ুথনেটের প্রধান সমন্বয়কারী শাকিলা ইসলাম এবং ইয়ং বাংলার অ্যাসিস্ট্যান্ট কোর্ডিনেটর ইসরাত জাহান তন্বী জানান, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীকে তাঁর যোগ্য সম্মান ও অর্জিত জ্ঞান প্রয়োগের তেমন কোন সুযোগই দেয়া হয়না। ঘর থেকে বেরোনোর পরই এক অজানা আতঙ্কে দিন কাটাতে হয় প্রায় প্রতিটি নারীকে। নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবেই হারিয়ে যায় হাজারও সম্ভাবনাময় নারী ঠিক কিছু কুৎসিত মানুষের চিন্তাধারার মতো চির অন্ধকারে। তাই পুরুষতান্ত্রিক আচরণের পরিবর্তনের মাধ্যমে জনস্থানকে নারীর জন্য নিরাপদ করে তোলাই এই প্রচারাভিযানের উদ্দেশ্য।
ক্যাম্পেইনটি অনলাইন প্লাটফর্মে সারা দেশব্যাপী পরিচালিত হলেও বিশেষ বিবেচনায় বাংলাদেশের ১০টি এলাকায় সিআরআই - এর ইয়ুথ প্লাটফর্ম ইয়ং বাংলার ১০টি সংগঠনের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে পরিচালিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণ: আবারও পেছাল সাক্ষ্যগ্রহণ
ইউএনডিপির কমিউনিকেশন এক্সপার্ট আলি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ চৌধুরী অনলাইনে প্রশিক্ষণার্থীদের সাথে যুক্ত হয়ে একজন নারী সহিংসতার শিকার হলে তার কী কী করণীয় কিংবা একজন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে তরুণদের কী করণীয়, কাদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে এসব বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা দেন। তাছাড়াও একটি ক্যাম্পেইন পরিচালনা করতে হলে শক্তি, দুর্বলতা সুযোগ এবং হুমকির সম্মুখীন হয়ে কিভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়, এগুলো বিশ্লেষণ করে ক্যাম্পেইন পরিচালনা করতে হবে যাতে নিরাপদে ক্যাম্পেইন করা যায় এ সকল বিস্তারিত আলোচনা হয়। এলাকাভিত্তিক (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার, জনসমাগমের স্থান, রেলওয়ে স্টেশন, সমাবেশের স্থান, সেবা প্রতিষ্ঠান, সাইবার জগৎ) স্টেকহোল্ডারদের খুঁজে বের করে প্রচারাভিযান পরিচালনার জন্য তরুণদের দলে বিভক্ত করে দল গঠন ও দায়িত্ব বন্টন করা হয়।
কর্মশালায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রতীকী যুব সংসদের চেয়ারপার্সন আমিনুল ইসলাম (ফিরোজ মোস্তফা), প্রোগ্রাম ম্যানেজার ময়ূরী আক্তার টুম্পা ও আভাসের প্রকল্প অফিসার আলী আহসান প্রমুখ।