করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
করোনাভাইরাসের ফলে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী সরকারগুলো সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউনে গেলে তা অর্থনৈতিক কার্যকলাপে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের আমদানি (পণ্য ও পরিষেবা উভয়) ৫৫.৬ বিলিয়ন ডলারে (৪ লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকা) দাঁড়িয়েছে, যা ২০১৮-১৯ সালে ৬২.৯ বিলিয়ন ডলার (৫ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি) ছিল। অর্থাৎ হ্রাস পেয়েছে ১১.৬ শতাংশ।
আরও পড়ুন: ২০২২-২৩ অর্থবছরে করের অনুপাত ১২.২ শতাংশে বাড়ানোর পূর্বাভাস
রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে ২০১৯-২০ অর্থবছরে আমদানি করা পণ্য ছিল ২৫ হাজার ৬৩১ কোটি ৭ লাখ টাকা, যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ৩০ হাজার ৮৩০ কোটি টাকার তুলনায় প্রায় ১৭ শতাংশ কম। যার অর্থ ইপিজেডে আমদানি সার্বিক আমদানির চেয়ে বেশি কমেছে।
সরকারি নথি অনুসারে, চলতি অর্থবছরের জন্য আমদানিতে প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। তারপর ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য যথাক্রমে ৮ শতাংশ এবং ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
২০১৯-২০ অর্থবছরে আমদানির প্রবৃদ্ধি প্রাথমিকভাবে ১০ শতাংশ থেকেও বাড়ার পূর্বাভাস ছিল, কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এটি ১০ শতাংশের কম হয়।
সরকারি তথ্য অনুসারে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমদানি প্রবৃদ্ধি ছিল ১ দশমিক ৮ শতাংশ।
আরও পড়ুন: ২০২২-২৩ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি রাখার লক্ষ্য ৫.২ শতাংশ
চলতি অর্থবছরে দেশের জিডিপিতে প্রবৃদ্ধি হবে ১.৬ শতাংশ: বিশ্বব্যাংক
নথিতে বলা হয়, গত অর্থবছরের প্রথমার্ধ থেকে আমদানি প্রবৃদ্ধিতে ধীর প্রবণতা দেখা যায়। জানুয়ারিতে চীনের উহানে করোনাভাইরাসের উদ্ভব এবং বিশ্বব্যাপী লকডাউনের কারণে অর্থনৈতিক স্থবিরতা আরও বেড়ে যায়।
জুলাই থেকে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত আমদানির পরিমাণ ছিল ৪৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৮১ শতাংশ কম।
জুলাই থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সামগ্রিক লেটার অব ক্রেডিট বা এলসির প্রবৃদ্ধি ছিল মাইনাস ১ দশমিক ০৪ শতাংশ। মূলধনী যন্ত্রপাতির জন্য এলসি খোলার প্রবৃদ্ধি ছিল মাইনাস শূন্য দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে এটি ছিল মাইনাস ১ দশমিক ২৪ শতাংশ।
আরও পড়ুন: তিন অর্থবছরে ২২৫৬.৭ বিলিয়ন টাকা ঋণের সুদ হিসাবে পরিশোধ করবে সরকার
বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০২১ অর্থবছরে ৬.৮ শতাংশ হবে: এডিবি
নথিতে উল্লেখ করা হয়, ২৬ মার্চ থেকে দেশে ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটির কারণে বেশির ভাগ অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে যায়। ২০২০ সালের মে থেকে মিল এবং কারখানাগুলো সীমিত আকারে খোলা হয়।
নথি অনুসারে, রপ্তানি খাতে নতুন করে গতি আনার জন্য সরকার মূলত আমদানি করা কাঁচামাল এবং মূলধনী যন্ত্রপাতিগুলোর ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া সরকার একটি আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি ফিরিয়ে আনার জন্য ব্যবসা এবং কর্মসংস্থানের ওপর করোনা মহামারির প্রভাবকে হ্রাস করতে সাধারণ ছুটির প্রথম পর্যায়ে সরকার ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে, যা দেশের জিডিপির ৪ দশমিক ৩ শতাংশের সমান।
রপ্তানিমুখী শিল্পসহ মোট ১৮ অর্থনৈতিক ক্ষেত্র, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প, কৃষি, মাছ চাষ, হাঁস-মুরগি ও প্রাণিসম্পদকে এ প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় আনা হয়।