কয়রা উপজেলার চার ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রাম লোনা পানিতে প্লাবিত হয়েছে। কপোতাক্ষ, কয়রা, শাকবাড়িয়া নদীর পানি ৬-৭ ফিট বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার ১১ স্থানের বেড়িবাঁধ ভেঙে ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ উপচে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে।
লোনা পানি ঢুকে ফসলি জমি, মৎস্য, গবাদিপশুসহ প্রায় ৩৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এর মধ্যে মৎস্য ঘের ডুবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। ২ হাজার ৫৫০ ঘের ও পুকুর ডুবে প্রায় ১৫ কোটি টাকার মৎস্য সম্পদ নষ্ট হয়েছে।
আরও পড়ুন: ইয়াসে সাতক্ষীরায় ৪ হাজারেরও বেশি বাড়িঘর, ৮ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে
দশহালিয়ার ৩ কিলোমিটার, মঠবাড়ি, তেতুলতলার চর, আংটিহারা, মঠবাড়ি, গোবরা ঘাটাখালী, কয়রা সদরের তহশিল অফিস সংলগ্ন বেড়িবাঁধ, কাটকাটা, কাশির হাটখোলা, কাটমারচর, ২ নম্বর কয়রা, ৪ নম্বর কয়রা, পবনা, কাশির খালের গোড়া, হোগলা, উত্তর বেদকাশি গাতির ঘেরি, শাকবাড়িয়া, সুতির অফিস, নয়ানি, খোড়লকাটি, জোড়শিংসহ কয়েক স্থানের বেড়িবাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকেছে।
মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিএম আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, দশহালিয়া গ্রামে স্বেচ্ছাসেবীরা ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ মেরামত করেছিলেন। কিন্তু অসংখ্য জায়গা দিয়ে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। প্লাবিত হয় লোকালয়। বাঁধ সংস্কারের জন্য চেষ্টা করেও যথাসময়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে কাজের অনুমতি না পাওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে।
কয়রা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সাগর হোসেন সৈকত বলেন, ‘উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। ২৬ মে ৩৫ গ্রাম প্লাবিত হয়। পরদিন আরও কয়েক গ্রাম প্লাবিত হয়। প্রায় ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি। ৩৫ কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করেছি আমরা।’
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় ইয়াস: ভোলায় ১১ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত
তিনি বলেন, উপজেলার সাত ইউনিয়নের সব এলাকায় কমবেশি ক্ষতি হয়েছে। অনেক এলাকায় ঘর ভেঙে গেছে। কিছু এলাকায় ঘরের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের সংখ্যা ৭ হাজার ৫০। এর মধ্যে ৫০ ঘর সম্পূর্ণ, ১ হাজার ২০০ আংশিক ও ৫ হাজার ৮০০ কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত।
উপজেলা (ভারপ্রাপ্ত) মৎস্য কর্মকর্তা এসএম আলাউদ্দিন হোসেন বলেন, জরিপ অনুযায়ী প্রায় ২ হাজার ৫০০ হেক্টর মৎস্য ঘের ও পুকুর প্লাবিত হয়েছে। চাষিদের ক্ষতির পরিমাণ ১৫ কোটি টাকার বেশি।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, বাঁধ বাঁধার কাজ চলছে। ইতোমধ্যে অনেক বাঁধ মেরামত সম্ভব হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সহযোগিতা করা হবে।
পাইকগাছা উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ১০ ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভার ৮৬ কিলোমিটার রাস্তা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ এবং ২৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৬৬০ হেক্টর চিংড়ি ঘের তলিয়ে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। প্লাবিত এলাকায় ভেঙে পড়ে পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে ২ কোটি ৭৫ লাখ ৬০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ১০ হাজার।
আরও পড়ুন: জোয়ারে ডুবছে সুন্দরবন: ভেসে আসা ৬টি হরিণ উদ্ধার
সোলাদানা ইউনিয়নের কয়েকটি আবাসন প্রকল্পের কয়েকশ’ পরিবার পানিতে বসবাস করছে। রাস্তাঘাট, পুকুর জলাশয়, নলকূপ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছে মানুষ।
পাইকগাছা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ইমরুল কায়েস বলেন, ২৬ মে'র চেয়ে ২৭ মে নদীর পানি কয়েক ফুট বৃদ্ধি পায়। এতে লতা ইউনিয়নের কাঠামারি এলাকার বাঁধ ভেঙে কয়েক গ্রাম প্লাবিত হয়।
পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী সোলাদানা ইউনিয়নের নুনিয়াপাড়া, পতন, পারিশামারি, বেতবুনিয়াসহ কয়েক এলাকা পরিদর্শন করেন। এসময় বেড়িবাঁধ মেরামত কাজ তদারকি ও আশ্রয়কেন্দ্রের মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন তারা।
ইউএনও খালিদ হোসেন বলেন, ‘১০ ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভায় কমবেশি অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।'