উপজেলার ১১ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার প্রতিটি এলাকা সব ধরনের ফসল উৎপাদনে অত্যন্ত উপযোগী। এ জনপদের কৃষকরা এমন একটি সময় পার করেছেন যখন মাঠে ফসল উৎপাদনে সার হিসেবে গোবর ব্যবহার করতেন। সে সময়ে জমিতে ফসলের ফলন কম হলেও প্রতিটি এলাকার জমি ছিল অত্যন্ত উর্বর। ৭০ কিংবা ৮০’র দশকে কৃষক জমিতে একবার গোবর সার প্রয়োগ করে সারা বছরই ফসল উৎপাদন করেছে। কিন্তু ধীরে ধীরে গোবর সারের ব্যবহার কৃষক ভুলতে বসে। আর সেখানে স্থানটি দখল করে নেয় রাসায়নিক সার।
আরও পড়ুন: ভাসমান সবজি চাষে সাবলম্বী খুলনার ভূমিহীন কৃষকরা
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বছরের পর বছর জমিতে রাসায়নিক সার প্রয়োগে এখন নানামুখী সমস্যায় আছেন চাষিরা। বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরে এ অঞ্চলের কৃষকরা আবারও গোবর সার ব্যবহারে মনোযোগী হয়ে উঠেছেন।
উপজেলার স্বরুপদাহ, নারায়ণপুর ও সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম এলাকার মাঠে দেখা যায়, আমন ধান কেটে কৃষক বাড়িতে নিয়ে গেছে বেশ আগেই, ফসলি জমি এখন খালি। এই সময়ে তারা জমিতে গোবর ফেলা শুরু করেছেন। বিঘার পর বিঘা জমিতে ফেলে রাখা হয়েছে গোবর সার, কেউ কেউ ওই সার জমিতে ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিচ্ছেন।
আরও পড়ুন: ডুমুরিয়ায় শিমের বাম্পার ফলন, দাম না পেয়ে হতাশ চাষিরা
স্থানীয় কৃষক মুজাহিদ, গোলাম মোস্তফা, হারুন অর রশিদ ও জামাল হোসেন বলেন, বছরের পর বছর রাসায়নিক সার জমিতে ব্যবহার করে মনে হচ্ছে জমির শক্তি কমে গেছে। আগে যেখানে পাঁচ কেজি রাসায়নিক সার দিলে ফসল হতো এখন সেই জমিতে ২০ কেজি সার দিতে হচ্ছে। তারপরও ভালো ফলন হচ্ছে না। এছাড়া বেশ কয়েক বছর ধরে খেতে কোনো কেঁচো বা অন্যান্য কীটপতঙ্গ দেখা যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন: গম চাষে উৎসাহিত করতে নাটোরে বিনামূল্যে বীজ বিতরণ
‘মনে হচ্ছে সার ও বিষ প্রয়োগে জমি থেকে এসব কিছু হারিয়ে গেছে। তাই রাসায়নিক সারের আদলে জৈব সার অর্থাৎ গোবর সার ব্যবহার করা শুরু করেছি। তবে জমির যে অবস্থা তাতে মনে হয় না শুধু গোবর সার দিয়ে ফসল হবে, পরিস্থিতি বুঝে অল্পস্বল্প রাসায়নিক সার ব্যবহার করব,’ বলেন তারা।
আরও পড়ুন: দেশে কাজু বাদাম চাষের সম্ভাবনা উজ্জ্বল: কৃষিমন্ত্রী
কৃষি সংশ্লিষ্টরা জানান, রাসায়নিক সার আর কীটনাশক ব্যবহার করে কৃষকরা নানা দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এসব ব্যবহার করে সমস্যা থেকে উত্তরণের প্রচেষ্টা উল্টো তাদের বিপদে ঠেলে দিয়েছে। কেননা রাসায়নিক সার ও কীটনাশক অতি প্রয়োগের ফলে কৃষকরা দেখেছেন যে ফসলগুলোতে রোগ ও পোকার আক্রমণের হার যেন বেড়েই যাচ্ছে। এছাড়া জমিতে ঘাস মারা বিষ প্রয়োগের ফলে জমির শক্তি বহুলাংশে কমে যাচ্ছে। স্বল্প সময়ের ভেতরে সমস্যা সমাধানে কৃষক রাসায়নিক সার, আগাছানাশক ও কীটনাশক ব্যবহার করেন। এতে করে পরিবেশের তো ক্ষতি হচ্ছেই পাশাপাশি মাটির ভেতরে থাকা অনুজীবগুলো বিষক্রিয়ায় মৃত্যুবরণ করছে।
আরও পড়ুন: সবজি চাষে স্বাবলম্বী মাদারীপুরের সোহেল
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শৈলেন দাস বলেন, ‘এসব অনুজীব ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাণীগুলো মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। অতীতে শহরের আবহাওয়া দূষিত আর গ্রামের আবহাওয়া দূষণমুক্ত মনে করা হতো। বর্তমানে জমিতে অতিমাত্রায় রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের ফলে বাতাসও দূষিত হচ্ছে, উৎপাদন খরচ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই প্রক্রিয়া থেকে বের হওয়া জরুরি। গ্রামের সব কৃষককে জৈব সার ব্যবহারে আরও বেশি বেশি উদ্বুদ্ধ করতে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে।’