২০০০ সালে বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস পেলেও এখন পর্যন্ত এই ফরমেটে বেশ দুর্বল দল হিসেবেই বিশ্বে বিবেচিত। চলমান বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে পাঁচটি ম্যাচ খেললেও এখনো কোনো জয় পায়নি। গত দু’বছরে বাংলাদেশ মাত্র একটি টেস্ট জিতেছে। তাও আবার দুর্বল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের আগে বাংলাদেশের অধিনায়ক মুমিনুল হক বলেছেন, তারা হতাশ হয়েছেন যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ একটি শক্তিহীন দল পাঠাচ্ছে। কোভিড-১৯ এর আশঙ্কায় ক্যারিবীয় দলের ১০ জনেরও বেশি শীর্ষ ক্রিকেটার বাংলাদেশ সফর থেকে তাদের নাম প্রত্যাহার করে নেন। তবে টেস্ট সিরিজ শেষে এই ‘শক্তিহীন’ দলই টাইগারদের বিপক্ষে ভালো করেছে।
আরও পড়ুন: আইপিএলের জন্য শ্রীলঙ্কায় টেস্ট খেলবেন না সাকিব
পারলেন না মিরাজ, ঢাকা টেস্টেও হার
সিরিজ শেষে মুমিনুল বলেন, ‘কঠিন ভাগ্য বলতেই হয়। যেই রানটা ছিল সেটি তাড়া করা যেত। টপঅর্ডার থেকে মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার কারণে রান তাড়া করতে পারিনি। উইকেটে ব্যাট করা ভালো ছিল। খুব বেশি বাউন্স হয়নি। কর্নওয়াল কিছু বাউন্স পেয়েছে তার উচ্চতার জন্য। আমাদের মানিয়ে নেয়া উচিত ছিল। সেটা আমরা করতে পারিনি। ফলে দ্বিতীয় টেস্টটাও হাত থেকে চলে গেছে।’
চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টে জিততে ওয়েস্ট ইন্ডিজের চতুর্থ ইনিংসে ৩৯৫ রানের বড় লক্ষ্য ছিল। কাইল মায়ার্সের অভিষেকে দুর্দান্ত ডাবল সেঞ্চুরিতে সেটা করতে সক্ষম হয় সফরকারী দল।
চট্টগ্রাম টেস্টে হারের পর মুমিনুল জানিয়েছিলেন, তার কাছে অবিশ্বাস্য লাগছে এটি। তবে ঢাকায় পরাজয় তার কাছে আর তেমন মনে হচ্ছে না।
‘আমি মনে করি না এটি অবিশ্বাস্য ছিল। প্রথম ইনিংস শেষে তারা আমাদের চেয়ে এগিয়ে ছিল। দ্বিতীয় ইনিংসেও তারা দুর্দান্ত বোলিং করেছে। তামিম (ইকবাল) এবং সৌম্য (সরকার) যেভাবে শুরু করেছিল ভেবেছিলাম আমরা এই খেলায় জিতব। তবে দ্রুত কিছু উইকেট হারানোর পর আমরা গতি হারিয়ে ফেলি। তবে মিরাজ (মেহেদী হাসান) শেষদিকে সত্যিই দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছে। মাঝখানে একটু উল্টোপাল্টা হয়ে গিয়েছে, যার কারণে আমরা আর ফিরতে পারিনি,’ বলেন তিনি।
সিরিজে বাংলাদেশের পরাজয়ের পেছনে সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিকে অন্যতম কারণ বলে মনে করা হয়। এই সিরিজ দিয়ে টেস্টে প্রত্যাবর্তন করা সাকিব কাঁধের ইনজুরির কারণে চট্টগ্রাম টেস্টে বেশিরভাগ সময় মাঠের বাইরে ছিলেন। ঢাকা টেস্টে তিনি একাদশে ছিলেন না।
সাকিবের বদলি হিসেবে ঢাকা টেস্টে নির্বাচকরা সৌম্য সরকারকে দলে ফেরান। যাকে সাম্প্রতিক সময়ে টেস্টের জন্য বিবেচনা করা হয়নি। সৌম্য প্রথম ইনিংসে কোনো রানই করতে পারেননি, আর দ্বিতীয় ইনিংসে করেন ১৩ রান।
সিরিজ শেষে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন সাকিবের বদলি হিসেবে তার প্রথম পছন্দ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ না নিয়ে সৌম্যকে নেয়ার জন্য নির্বাচক এবং টিম ম্যানেজমেন্টের সমালোচনা করেন।
শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ঢাকা টেস্টের পর গণমাধ্যমকে নাজমুল বলেন, ‘যখন আমি জানতে পারলাম সাকিব ইনজুরিতে এবং আমাদের বদলি খেলোয়াড় প্রয়োজন, তখন আমি তাদের চার-পাঁচটি বিকল্প দিয়েছিলাম। আকরাম (খান), নান্নু (মিনহাজুল আবেদীন), সুমন (হাবিবুল বাশার) উপস্থিত ছিলেন। আমি তাদের বলেছিলাম মাহমুদউল্লাহ, মোসাদ্দেক (হোসেন), শেখ মেহেদী (হাসান) বা সৌম্য সরকার। মাহমুদউল্লাহ প্রথম বিকল্প ছিল, তবে নির্বাচকরা সৌম্যকে বাছাই করে।’
দল বাছাই করা সবসময় নির্বাচকদের কাজ যা স্বতন্ত্র হওয়ার কথা, কিন্তু নাজমুল গত কয়েক বছর ধরে এই প্রক্রিয়াটি বাধাগ্রস্ত করার প্রবণতা তৈরি করেছেন।
তিনি বলেন, ‘তারা (টিম ম্যানেজমেন্ট) আমাকে ঢাকায় কমপক্ষে দু'জন পেসার খেলাবে বলে নিশ্চিত করেছে, কিন্তু তারা তা করেনি। আমরা তাদের কাছে ব্যাখ্যা চাইব। তাদের এই জবাব দিতে হবে। শেষ দুটি সিরিজ পর্যবেক্ষণ করার পর আমরা বুঝতে পারছি যে কিছু সমস্যা আছে। সুতরাং সেগুলো আমাদের খুঁজে বের করতে হবে এবং একটি বিষয় পরিষ্কার যে আমাদের পেসাররা আমাদের স্পিনারদের চেয়ে ভালো।’
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম টেস্ট: হেরেই গেল বাংলাদেশ
নিউজিল্যান্ড সফরের জন্য টাইগারদের দল ঘোষণা
বিসিবিতে নতুন ভূমিকায় আসতে যাচ্ছেন শাহরিয়ার নাফীস
বিসিবি সভাপতি দলে আরও পেসার অর্ন্তভুক্ত করার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের এখন আরও বেশি পেসার রয়েছে। আগের কিছু ঘরোয়া খেলায় দেখুন, যেখানে পেসাররা সত্যিই দুর্দান্ত পারফর্ম করেছে। আমরা আরও পেসার পেলে কেন খেলাব না? তারা দলে পাঁচজন পেস বোলারকে বাছাই করেছে কিন্তু তারা খেলেনি। আমাদের সমাধান বের করতে হবে। আমরা এটিকে এভাবে ছেড়ে যেতে পারি না। আফগানিস্তানের কাছে টেস্ট হারার পর আমি বেশি কিছু বলিনি, তবে আজ আমি অনেক কিছুই বলছি। আমাদের কিছু পরিবর্তন করতে হবে।’
বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক মনে করেন, টাইগারদের আরও বেশি ব্যাটিংয়ে কাজ করা দরকার এবং টেস্ট দল হিসেবে উন্নতি করতে এটিই তাদের একমাত্র উপায়।
মুমিনুল ঢাকা টেস্টের পর গণমাধ্যমকে বলেন ‘আমাদের আরও ব্যাটিং করতে হবে। পরবর্তী সিরিজে আমরা শ্রীলঙ্কা যাব। আমি মনে করি আমরা তাদের বিরুদ্ধে আরও ভালো করতে পারব। আমাদের পক্ষে ইতিবাচক ফল পেতে ব্যাটসম্যানদের টেস্টে দীর্ঘ সময় ধরে ইনিংস খেলতে হবে।’