জেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের জরিপে দেখা গেছে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪৮৩টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৬৭টি, বালিয়াডাঙ্গীতে ১৪১টি, পীরগঞ্জে ১০৫টি, রানীশংকৈলে ৫৫টি এবং হরিপুর উপজেলায় ১৫টি অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এসব অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ২ কোটি ৩৭ লাখ টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে।
জরিপে চুলার আগুন, বৈদ্যুতিক গোলযোগ, বিড়ি সিগারেটের আগুন এবং ছোট বাচ্চাদের আগুন নিয়ে খেলা করাকে অগ্নিকাণ্ডের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: গাজীপুরে কারখানায় অগ্নিকাণ্ড, আগুনে পুড়ে শ্রমিকের মৃত্যু
ফেনীতে স্টারলাইন কারখানায় আগুন, হেলে পড়েছে তিন তলা ভবন
ঠাকুরগাঁও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তদন্তে দেখা গেছে, সদর উপজেলায় সংঘঠিত অগ্নিকাণ্ডের ৪১টি চুলার আগুন থেকে, বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে ৫৩টি, বিড়ি সিগারেটের আগুন থেকে ২৭টি, চুলার ফেলে দেয়া ছাই থেকে ১৫টি এবং ছোট বাচ্চাদের আগুন নিয়ে খেলতে গিয়ে ৯টি অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ঠাকুরগাঁও স্টেশনের স্টেশন অফিসার মফিদার রহমান ইউএনবিকে বলেন, ‘বৈদ্যুতিক কারণে অগ্নিকাণ্ডের অনেকগুলো কারণ আছে- এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো অতিরিক্ত লোড, নিম্নমানের তার সুইচ ব্যবহার, পিলারে পাখির বাসা এবং কখনো কখনো বিদ্যুৎ ব্যবহার করে চালিত যন্ত্রের ঘর্ষণ থেকে সৃষ্ট স্ফুলিঙ্গের কারণে।’
তিনি বলেন, ‘এছাড়াও অগ্নিনির্বাপন করতে গিয়ে নির্বাপক দল সবচেয়ে বড় যে সমস্যায় পড়েন তা হলো প্রশস্ত রাস্তার অভাব। শহর কিংবা গ্রাম সবখানেই এখন রাস্তাঘাট অপ্রশস্ত হয়ে গেছে।’
মফিদার রহমান বলেন, ‘শহরাঞ্চলে ওয়াটার রিজার্ভার ট্যাংক এবং গ্রামাঞ্চলে পুকুর না থাকা অন্যতম সমস্যা। ঠাকুরগাঁও স্টেশনে এখন দুটি পানির গাড়ি আছে, এর একটি ১ হাজার ৮০০ লিটার এবং অপরটি ৪ হাজার ৩০০ লিটার পানি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন। সাধারণত বড় গাড়ি নিয়েই অগ্নিকাণ্ড স্থলে যেতে হয়। বড় অগ্নিকাণ্ডে গাড়ির পানি শেষ হয়ে গেলে অসহায়ের মতো দেখা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না।’
আরও পড়ুন: নারায়ণগঞ্জে গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে শিশুসহ দগ্ধ ৫
মাতারবাড়ীতে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে শিশুসহ নিহত ৩
বরগুনায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নিহত ১, আহত অর্ধ শতাধিক
‘দুর্ভোগের সাথে যুক্ত হয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে পর্যাপ্ত জনবলের অভাব। অগ্নিকাণ্ড দুর্ঘটনা কমাতে আমাদের জনসচেতনতাও তৈরি করতে হবে,’ বলেন তিনি।
বাংলাদেশে অগ্নিকাণ্ড
অগ্নিকাণ্ড বাংলাদেশে একটি সাধারণ ঘটনা এবং এ দুর্ঘটনায় প্রতিবছর অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
অনলাইন ডাটাবেস ডেটাফুলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালে দেশে আবাসিক ভবনগুলোতে ৮ হাজার ৪৬১ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, যার অধিকাংশই ঢাকা বিভাগে।
২০১৯ সালে পুরান ঢাকায় প্রায় ৭০ জন, বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২৬ জন মারা গেছেন।
বিশেষজ্ঞরা নগর পরিকল্পনায় মনযোগ এবং অগ্নিনিরাপত্তা সম্পর্কিত একটি কমিটি গঠনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তারা ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবন’ নির্মাণ অবিলম্বে বন্ধ করারও পরামর্শ দিয়েছেন।