সম্ভাব্য বাণিজ্য ঝুঁকি এড়াতে বাংলাদেশ তৃতীয় কোনো দেশের সহায়তায় রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করতে পারে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘রাশিয়ার তেল আমদানিতে প্রতিবেশি ভারত এক্ষেত্রে বাংলাদেশের তৃতীয় পছন্দের দেশ হতে পারে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘বর্তমানে ভারত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাশিয়ার তেল আমদানি করছে। ভারতের আসাম রাজ্যের নুমালিগড় তেল শোধনাগার থেকে পরিশোধিত তেল কেনার বিষয়ে ভারতের সঙ্গে একটি দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি আছে বাংলাদেশের।’
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘যদি দুই দেশের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি থাকে, তাহলে এই ধরনের ব্যবসা করা সম্ভব।’
তিনি আরও বলেন, কম খরচে রাশিয়ার তেল আমদানির ঝুঁকি এড়ানোর ভালো উপায় হতে পারে এটি।
একটি রুশ কোম্পানি বাংলাদেশের কাছে সস্তায় পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম; বিশেষ করে ডিজেল বিক্রির প্রস্তাব দেয়ায়, রাশিয়া থেকে পেট্রোলিয়াম আমদানির সম্ভাবনার বিষয়টি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আলোচনায় আসে।
মস্কোভিত্তিক রুশ তেল কোম্পানি রুশনেফট সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি) প্রতি ব্যারেল পেট্রোলিয়াম ৫৯ ডলারে বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে, বর্তমানে যার বৈশ্বিক বাজার মূল্য ব্যারেল প্রতি ১০০ ডলারের বেশি।
এছাড়া, রুশ কোম্পানিটি পরিবহন খরচসহ পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম এই মূল্যে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।
তবে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে রুশ কোম্পানির এই প্রস্তাব সম্পর্কে কিছু জানায়নি।
জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এ প্রস্তাবের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বৃহস্পতিবার তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত (এ বিষয়ে) কোনো আপডেট নেই।’
বিপিসি সূত্রে জানা যায়, রাশিয়া কাছ থেকে তেল আমদানি করার বিষয়টি, অন্য দেশ থেকে জ্বালানি আমদানির মতো না।
তারা জানায়, বাংলাদেশ রাশিয়া থেকে পেট্রোলিয়াম আমদানির সম্ভাব্য ঝুঁকি মূল্যায়ন করছে। কারণ এই ধরনের আমদানির ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা ক্ষুব্ধ হতে পারে।
আরও পড়ুন:সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ২০ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব
ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর পর থেকে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের আরোপিত বিশাল অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে।
কর্মকর্তারা বলেছেন, যদি কোন দেশ সরাসরি রাশিয়ান তেল আমদানি করে তবে একই ধরনের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে পারে। তাই এ বিষয়ের যেকোনও পদক্ষেপ শুধুমাত্র বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে না।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, ‘রাশিয়ার কাছ থেকে পেট্রোলিয়াম আমদানির প্রস্তাব পাওয়ার পর বর্তমানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সম্ভাব্য ঝুঁকি ও বিভিন্ন বিষয় মূল্যায়ন করছে।’
গত ১৬ আগস্ট একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, সরকার রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল, সার ও গম কিনতে চায়।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, তিনি তার মূখ্য সচিবকে রুশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার দায়িত্ব দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে পারে, আমরা তাদের (রাশিয়া) কাছ থেকে আমাদের নিজস্ব মুদ্রা দিয়ে জ্বালানি তেল সংগ্রহ করব। কারণ সুইফট বন্ধ এবং ডলারের দাম অনেক বেশি।’
এদিকে পাওয়ার সেলের পরিচালক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, সরকার যদি কম দামে ডিজেল আমদানির ব্যবস্থা করতে পারে তাহলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আবার চালু করা হবে।
উল্লেখ্য, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে সরকার গত ১৯ জুলাই থেকে দেশের ডিজেল-চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর কার্যক্রম স্থগিত করে এবং ডিজেল আমদানি কমাতে ও বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং চালু করে।
এক ঘণ্টা এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং করার কথা থাকলেও সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় একাধারে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং থাকার অভিযোগ করে ভোক্তারা। তাদের দাবি গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে আরও বেশি সময় ধরে লোডশেডিং চলে।
সরকার ৭ জুলাই থেকে মার্কেট ও শপিংমল রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশনা দেয়।
এছাড়া, কমিউনিটি সেন্টার, শপিংমল, দোকান, অফিস ও বাড়িতে বিভিন্ন সামাজিক জমায়েতে আলোকসজ্জা নিষিদ্ধ করা হয়।
সবশেষে বিদ্যুৎ ও প্রাকৃতিক গ্যাস সংরক্ষণ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত ১১ আগস্ট থেকে শিল্পাঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন ছুটির দিন ঘোষণা করে সরকার।
আরও পড়ুন:জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট