গত আট মাসে কামরাঙ্গীরচরের কাছে আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল পুনরুদ্ধারের কাজে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যায়নি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ২০২২ সালের জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শুরু করলেও প্রাথমিক কাজ এখনও শেষ হয়নি। প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে সীমানা নির্ধারণ কার্যক্রম, উচ্ছেদ অভিযান, পুনঃখনন ও বর্জ্য অপসারণ।
দূষণ ও দখলের কারণে গৌরব হারানো আদি চ্যানেলটির অবস্থান বুড়িগঙ্গা নদী থেকে পুরান ঢাকার শহীদনগর-হাজারীবাগের বেড়িবাঁধ আর কামরাঙ্গীরচরের মাঝ বরাবর।
গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে দূষণ আর দখলের থাবায় প্রাণ হারিয়েছে নদীর চিরচেনা রূপ। প্রায় ৭ কিলোমিটার জায়গার দুই পাশ দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা।
তবে আদি বুড়িগঙ্গার গৌরব ফিরিয়ে আনতে ডিএসসিসি গত বছরের জুন মাসে দখলদারদের কাছ থেকে চ্যানেলটি পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেয়। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও কর্তৃপক্ষ এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে কাজ করছে।
ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে ডিএসসিসির কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে চ্যানেলটি উদ্ধারে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু: বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জীবন ও অবস্থার পরিবর্তন
ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ প্রায় ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে তিন ধাপে রাজধানীর লাইফলাইন হিসেবে পরিচিত বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলটি পুনরুদ্ধারের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
তারা বলেন, চ্যানেলটি পুনরুদ্ধারের ফলে ঢাকার হাজারীবাগ, লালবাগ, ধানমন্ডি ও কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দারা জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে।
সাত কিলোমিটার দীর্ঘ এই চ্যানেলটি ঢাকাবাসীর জন্য বুড়িগঙ্গা থেকে তুরাগ নদীতে যাতায়াত সহজ করবে এবং খরচ কমার কারণে পণ্য পরিবহনও সহজ হবে।
ডিএসসিসি জানায়, নান্দনিক ডিজাইনের পাশাপাশি চ্যানেলের দুই পাশে গড়ে তোলা হবে ওয়াকওয়ে ও আলাদা সাইকেল লেনসহ আধুনিক নানান সুযোগ-সুবিধা।
২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর কামরাঙ্গীরচরে এক নির্বাচনী জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল দখলকারীদের হাত থেকে পুনরুদ্ধারের পদক্ষেপ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মেয়রকে নির্দেশও দেন তিনি।
বিস্তারিত পরিকল্পনার পর ডিএসসিসি চ্যানেলটিকে দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করার প্রকল্প হাতে নেয়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী চ্যানেলের দুই পাশে ১৪ কিলোমিটার হাঁটার পথ ও সাইকেল লেন নির্মাণ করা হবে। রাজধানীর বাসিন্দাদের পাশাপাশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে সেতু নির্মাণ করা হবে।
ডিএসসিসি জানায়, এ বিষয়ে বিস্তারিত যাচাই-বাছাই ও পরিকল্পনা শেষে ২১ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে তিনটি প্যাকেজে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছে ডিএসসিসি। প্রথম পর্বের কাজ বর্তমানে চলমান।
তিনটি প্যাকেজের মধ্যে প্রথম প্যাকেজের আওতায় আদি বুড়িগঙ্গার প্রান্ত স্লুইস গেট থেকে ইসলামবাগ পর্যন্ত পলি, রাবিশ ও আবর্জনা অপসারণ করা হবে। এখানে ১২০০ মিটার খনন কাজ ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সোবহান ইউএনবিকে বলেন, ‘বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল রক্ষায় শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে (সিএস) রেকর্ড অনুযায়ী উদ্ধার ও খনন করতে হবে।’
আরও পড়ুন: ৮টি বিমানবন্দরের অবকাঠামো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে চলতি বছরেই: বেবিচক প্রধান
তিনি আরও বলেন, ‘বুড়িগঙ্গা আদি চ্যানেল দখল ও ভরাট করে নির্মাণ করা কারখানা ও বাড়িঘরের পানি বিদ্যুৎ গ্যাসসহ সব নাগরিক সুযোগ এখনই বন্ধ করে দেয়া এবং অবিলম্বে সব দখল, ভরাট ও দূষণমুক্ত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। সিএস রের্কড অনুযায়ী বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলের সীমানা নির্ধারণ করে স্থায়ী পিলার স্থাপনের দাবি জানাচ্ছি।’
ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন ইউএনবিকে জানান, ‘আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল দখল করে অবৈধভাবে যেসব ভবন ও প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলো ইতোমধ্যে ডিএসসিসি, রাজউক, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন, গণপূর্ত অধিদপ্তর, বিআইডব্লিউটিএ, জেলা প্রশাসন, জরিপ অধিদপ্তর চিহ্নিত করেছে। চিহ্নিত করা সেসব ভবনের অবৈধ বর্ধিতাংশ ভেঙে ফেলতে মেয়র আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছি এবং তা অব্যাহত থাকবে। একইসঙ্গে উদ্ধার করা অংশে আদি চ্যানেল পুনরুদ্ধার কার্যক্রমও চলমান রয়েছে।’
এ বিষয়ে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ইউএনবিকে বলেন, ‘দখলদারদের নানাবিধ বাধা উপেক্ষা করেই বুড়িগঙ্গা আদি চ্যানেল পুনরুদ্ধার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এখানে অনেক বাধা ছিল, অনেকগুলো মামলাও করা হয়েছে। হাইকোর্ট ডিভিশনে সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি এবং আমরা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রকল্প অনুযায়ী বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলটি চলমান উদ্ধারকাজ শেষ করতে বদ্ধপরিকর।’
মেয়র বলেন, ‘মাত্র অর্ধশতাধিক বছরে আদি বুড়িগঙ্গা ভরাট হয়েছে ময়লা-বর্জ্য দিয়ে। এই প্রথম আমরা আদি বুড়িগঙ্গাকে পুনরুদ্ধারের কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। কাজটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও দুরূহ। চারপাশ দখল করে এটাকে সংর্কীর্ণ করে ফেলা হয়েছে। কিন্তু এখন আমরা এটার প্রশস্ততা প্রায় ১০ গুণ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি এবং আমাদের কার্যক্রম চলমান।’
শেখ তাপস বলেন, ‘প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা নিজস্ব অর্থায়নে অর্থ বরাদ্দ দিয়েছি। সেটার আওতায় আমরা কাজ আরম্ভ করেছি। এছাড়াও এরই মাঝে আমরা পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছি এবং নতুন করে প্রকল্প প্রাক্কলনের কাজ চলমান রয়েছে। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো নদীটাকে পুনরুদ্ধার করা এবং স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা। যাতে আর কেউ এটা দখল করতে না পারে এবং ময়লা-বর্জ্য ফেলার সুযোগ না পায়। তাছাড়া নদীর দুই পাশ দিয়ে হাঁটার পথ, সাইকেল চালানোর পথ, গণপরিসর ব্যবস্থা করা হবে, যাতে করে নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। যাতে করে পর্যটকরা এখানে আসতে পারেন এবং আনন্দ উপভোগ করতে পারেন সে ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে।’
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন এ বছরই চালু হবে: রেলমন্ত্রী