উত্তর আফগানিস্তানের বাঘালানের প্রাদেশিক রাজধানীর পার্শ্ববর্তী এলাকায় আকস্মিক বন্যায় শত শত মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এতে নিখোঁজ রয়েছেন আরও অনেকে। বন্যা কবলিত এলাকার একজন বাসিন্দা ব্যবসায়ী নাজের মোহাম্মদের বর্ণনায় বন্যার ভয়াবহতা উঠে এসেছে।
বন্যার আঘাতের বর্ণনায় তিনি বলছিলেন, আকস্মিক বন্যার খবর পেয়ে তিনি দ্রুতই বাড়িতে যান। কিন্তু, তিনি যখন বাড়িতে পৌঁছান, ততক্ষণে তার পাঁচ সদস্যের পরিবারসহ কিছুই অবশিষ্ট থাকেনি। বন্যার তোড়ে ভেসে গেছে সব।
৪৮ বছর বয়সী মোহাম্মদ বন্যার ক্ষতির দৃশ্য তুলে ধরে বলছিলেন, ‘সবকিছু হঠাৎ করেই ঘটে গেল। আমি বাড়িতে ফিরে আসি, কিন্তু সেখানে কোনও বাড়ির অস্তিত্ব ছিল না, পরিবর্তে আমি সমস্ত আশেপাশের কাদা এবং পানিতে ডুবে আছে।’
আরও পড়ুন: বিদেশিদের জন্য ৩০ দিনের একক প্রবেশ ভিসার বর্তমান ফি বহাল রাখবে শ্রীলঙ্কা
তিনি বলেন, তিনি তার স্ত্রী এবং ১৫ এবং ৮ বছর বয়সী দুই ছেলেকে কবর দিয়েছেন। তবে তিনি এখনও ৬ ও ১১ বছর বয়সী দুই মেয়ের সন্ধান করছেন।
জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা ধারণা করছে আফগানিস্তানে অস্বাভাবিক ভারী মৌসুমী বৃষ্টিপাতের ফলে শুক্রবারের বন্যায় ৩০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এতে ধ্বংস হয়েছে কয়েক হাজার বাড়িঘর। আর এসব ক্ষতির বেশিরভাগই হয়েছে উত্তরাঞ্চলীয় বাঘলান প্রদেশে।
রবিবার (১২ মে) মোহাম্মদ বলেন, শুক্রবার গভীর রাতে বাগলান প্রদেশের রাজধানী পুলি খুমরির নিকটবর্তী এলাকায় তিনি তার স্ত্রী ও দুই ছেলের লাশ দেখতে পান।
কান্না চেপে রেখে তিনি বলেন, 'আশা করি কেউ আমার মেয়েদের জীবিত খুঁজে পেয়েছে। ‘চোখের পলকে আমি সবকিছু হারিয়েছি- পরিবার, বাড়ি, জিনিসপত্র, এখন আমার কাছে কিছুই অবশিষ্ট নেই।’
ত্রাণকর্মীদের দল, ওষুধ, কম্বল ও অন্যান্য ত্রাণ পাঠাচ্ছে এমন আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা ইউনিসেফের মতে, নিহতদের মধ্যে অন্তত ২৪০ জনের মধ্যে ৫১ শিশুও রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, তারা ওষুধসহ সাত টন জরুরি উপকরণ সরবরাহ করেছে।
আরও পড়ুন: আফগানিস্তানে আকস্মিক বন্যায় নিহত ৫০, নিখোঁজ অনেক
ত্রাণ সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, বন্যায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বাঘলানের পাঁচটি জেলায় প্রায় ছয় লাখ মানুষ বাস করে, যাদের অর্ধেকই শিশু।
গ্রুপটি আরও বলেছে যে, তারা শিশু এবং তাদের পরিবারকে সহায়তা করার জন্য ভ্রাম্যমান স্বাস্থ্য ও শিশু সুরক্ষা দলের সঙ্গে একটি ‘ভাসমান একটি চিকিৎসা কেন্দ্র’ পাঠিয়েছে।
সেভ দ্য চিলড্রেনের কান্ট্রি ডিরেক্টর আরশাদ মালিক বলেন, 'অনেক প্রাণ ও জীবিকার উপকরণ ভেসে গেছে। ‘আকস্মিক বন্যায় গ্রামগুলো ভেসে গেছে, ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং গবাদি পশুও মারা গেছে। শিশুরা সবকিছু হারিয়েছে। যে পরিবারগুলো তিন বছরের খরার অর্থনৈতিক প্রভাবে ভুগছে, তাদের জরুরি সহায়তা প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, আফগানিস্তান এমন একটি দেশ যা জলবায়ু পরিবর্তনের ধরন মোকাবিলায় সবচেয়ে কম প্রস্তুত। এ জন্য ভারী মৌসুমি বৃষ্টিপাত মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে সহায়তা প্রয়োজন।
এর আগে গত এপ্রিলে দেশটিতে ভারী বৃষ্টিপাত ও আকস্মিক বন্যায় কমপক্ষে ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও প্রায় দুই হাজার বাড়ি, তিনটি মসজিদ এবং চারটি স্কুল ধ্বংস করেছে।
আরও পড়ুন: আফগানিস্তানে আকস্মিক বন্যায় নিহত ৩ শতাধিক: জাতিসংঘ