জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অস্থিতিশীলতা ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হতে পারে, যদিও প্রতিনিধিত্বমূলক সরকারগুলো সমাধান প্রদানের জন্য সর্বোত্তম সজ্জিত - বার্ষিক সম্মেলনে একত্রিত বিশেষজ্ঞরা এমনটাই যুক্তি দিয়েছেন।
জাতিসংঘ সমর্থিত অ্যাথেন্স ডেমোক্রেসি ফোরাম শুক্রবার গ্রিসের রাজধানীতে শেষ হয়েছে। এই ফোরামে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা ও চরম আবহাওয়া গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতার ওপর কী প্রভাব ফেলতে পারে সে দিকে মনোনিবেশ করা হয়।
প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির জলবায়ু বিজ্ঞানী মাইকেল ওপেনহাইমার সতর্ক করে দিয়ে বলেন, বৈশ্বিক কর্তৃপক্ষ আবহাওয়াজনিত বারংবার দুর্যোগের কারণে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি রক্ষণাবেক্ষণে খুব ধীর গতিতে কাজ করছে।
ভূবিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক অধ্যাপক এবং প্রিন্সটনের সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড দ্য এনভায়রনমেন্টের পরিচালক ওপেনহাইমার বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুনরুদ্ধারের ব্যবধান সংকুচিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ভারতের বিশাল কৌশলগত গুরুত্বের তুলনায় কানাডার স্বার্থ ফিকে: বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে বিবিসি
তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি পরিস্থিতিতে আছি যেখানে সরকারগুলো যে পরিষেবা সরবরাহ করে এবং অন্যতম প্রধান পরিষেবাগুলোর মধ্যে একটি হলো জীবন ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সুরক্ষা যেভাবে হওয়া উচিৎ সেভাবে ঘটছে না। এবং আমার মতে, এটি গণতন্ত্রের ওপর ঘটতে যাওয়া আরেকটি চাপ।’
৩ দিনব্যাপী অ্যাথেন্স ইভেন্টটিতে শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাবিদদের পাশাপাশি রাজনীতিবিদ ও কমিউনিটি প্রকল্প পরিচালকরা একত্রিত হয়েছিলেন এবং এটি এমন সময় অনুষ্ঠিত হয় যখন দেশটি সবচেয়ে খারাপ দাবানলের শিকার হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরে নধ্য গ্রিসে ব্যাপক বন্যা মোকাবিলায় জাতীয় কর্তৃপক্ষ লড়াই করেছে।
ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক তাপমাত্রা ও বিশ্বের কিছু অংশে অভিবাসনের ত্বরান্বিত হওয়ার কারণে উদ্বেগ অব্যাহত রয়েছে, আগামী দশকগুলোতে সরকারগুলো ক্রমবর্ধমান দুর্লভ সম্পদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে ও নাগরিক অস্থিরতা মোকাবিলায় আরও স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্কের অংশ নিউ আমেরিকা পলিটিক্যাল রিফর্ম প্রোগ্রামের ফেলো অ্যান ফ্লোরিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদে এটি একটি খারাপ ধারণা হবে।
আরও পড়ুন: স্বাধীন ও স্থিতিশীল ইন্দো-প্যাসিফিকের আহ্বান ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সেনাপ্রধানের
তিনি বলেন, ‘স্বৈরতন্ত্র জলবায়ু জরুরি অবস্থার সবচেয়ে খারাপ সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া, কারণ আপনার যা প্রয়োজন তা হলো প্রচুর স্থানীয় ক্ষমতায়ন।’
ফ্লোরিনি বলেন, ‘তারা একটি বড় সৌর বিদ্যুৎ শিল্প গড়ে তুলতে খুব ভালো হতে পারে… কিন্তু একটি স্বৈরতন্ত্রের আগামী কয়েক প্রজন্মের জন্য জলবায়ু জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তথ্য ব্যবস্থা ও নমনীয়তা এবং স্থিতিস্থাপকতা থাকতে চলেছে এই ধারণাটি আমার কাছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে হাস্যকর।’
তিনি জোর দেব, কেবলমাত্র উন্মুক্ত সমাজগুলো তাদের সুদূরপ্রসারী পরিবেশগত প্রভাবের কারণে প্রয়োজনীয় শক্তি, কৃষি ও পানি ব্যবস্থায় পদ্ধতিগত রূপান্তরকে উৎসাহিত করতে পারে।
সুইডেনের উপসালা ইউনিভার্সিটির আর্থ সায়েন্সেস বিভাগের জ্যেষ্ঠ গবেষক ড্যানিয়েল লিন্ডভাল বলেন, গণতান্ত্রিক সরকারগুলোকে স্থানীয় পর্যায়ে জনগণের সঙ্গে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সুবিধাগুলো ভাগ করে নেওয়া দরকার।
তিনি বলেন, ‘আপনি যদি একটি বায়ু ফার্ম তৈরি করেন এবং সুবিধা ও মুনাফার কিছু অংশ স্থানীয় সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে দেব, তবে আপনার কাছে তারা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার পরিবর্তে এটিকে সমর্থন করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জ্বালানির স্বাধীনতার সমস্ত সুবিধা তখন পুতিন (রাশিয়া) ও সৌদি আরবের মতো স্বৈরাচারী শাসকদের কাছ থেকে ক্ষমতার পালাবদল হবে।’
আরও পড়ুন: পর্যটনশিল্পকে অবশ্যই নিরাপদ করতে হবে: জাতিসংঘ মহাসচিব