ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও দেশটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারির একটি আইন পাস হয়েছে।
গত মাসে ইসরায়েল ও হামাসের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে আইসিসির এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানানো হয়। এরপর ২৪৭টি ‘হ্যাঁ’ ভোটে (১৫৫টি ‘না’ ভোট) প্রস্তাবটি পাস হয়। হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতি তীব্র আকার ধারণ করলেও যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত ইসরায়েলের প্রতি ঐক্য প্রদর্শনেরই প্রকাশ।
অবশ্য, মঙ্গলবার সিনেটে প্রস্তাবটি সমালোচিত হওয়ার পর তা সামান্য ব্যবধানে সমর্থন পেয়েছে। ‘বাড়াবাড়ি’ হিসেবে উল্লেখ করে হোয়াইট হাউস থেকেও এই আইনের বিরোধিতা করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় দলের নেতারাই বলছেন, প্রশ্নবিদ্ধ এই বিলটি আইনে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা নেই এবং এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে আরও আলোচনার দরজা খোলা রয়েছে।
আরও পড়ুন: বাইডেনের গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব সমর্থন করতে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান
রিপাবলিকান পার্টির মুখপাত্র ও বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির সভাপতি মাইক ম্যাককল বলেন, ‘এই কমিটিতে, বিশেষ করে জাতি হিসেবে আমরা যখন কথা বলি, তখন আমরা সবসময় এক ও শক্তিশালী; আইসিসি ও বিচারকদের বিষয়েও তা ভিন্ন নয়। পক্ষপাতমূলক বিল উত্থাপন আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমরা এখানেই আছি।’
তবে বিলটির বিরুদ্ধে প্রশাসনের বিরোধিতা পুনর্ব্যক্ত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাট মিলার।
তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে দিয়েছি যে আইসিসির গৃহীত সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলেও আমরা এটাকে (বিল) উপযুক্ত মনে করি না, বিশেষ করে যখন ইসরায়েলের ভেতরে চলমান তদন্ত চলছে। (আইসিসির সিদ্ধান্তের) প্রতিক্রিয়ায় আমাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) জবাব কেমন হবে, সে বিষয়ে আমরা কংগ্রেসের সঙ্গে কাজ করতে চাই। তবে আমরা নিষেধাজ্ঞা সমর্থন করি না।’
আইসিসি ও আন্তর্জাতিক বিচার আদালত উভয়ই গাজায় গত সাত মাসের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে হামাস ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ওঠা গণহত্যার অভিযোগের তদন্ত করছে।
আরও পড়ুন: বাইডেনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে উভয়সংকটে নেতানিয়াহু
গত মাসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গালান্ট এবং তিনি হামাস নেতা- ইয়াহিয়া শিনওয়ার, মোহাম্মদ দেইফ ও ইসমাইল হানিয়াকে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করেন আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম খান।
নেতানিয়াহু ও অন্যান্য ইসরায়েলি নেতারা আইসিসির এই পদক্ষেপকে ‘লজ্জাজনক ও ইহুদিবিরোধী’ বলে নিন্দা করেন। ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার সমর্থন করে আইসিসিকে কাঠগড়ায় তোলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ দেশটির কংগ্রেস সদস্যরাও।
উল্লেখ্য, ইসরায়েল আইসিসির সদস্য রাষ্ট্র নয়। ফলে ওই পরোয়ানায় নেতানিয়াহু বা দেশটির কোনো নেতার গ্রেপ্তার হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কারণে বৈদেশিক সফর করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে পারেন তারা।
আরও পড়ুন: যুদ্ধাপরাধে ইসরায়েল ও হামাসের শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তারের আবেদন