মারিউপোলের একটি বিধ্বস্ত ভবন থেকে শ্রমিকরা অসংখ্য লাশ উদ্ধার করেছে। অন্যদিকে বুধবার দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইউক্রেনের অবরুদ্ধ বন্দর দিয়ে শস্য রপ্তানি করতে না পারার কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকটের আশঙ্কা বেড়েছে।
মারিউপোল শহরের মেয়রের সহকারী পেট্রো অ্যান্ড্রুশচেঙ্কো জানান, মারিউপোলের অনেক বিল্ডিংয়ে শ্রমিকরা ৫০ থেকে ১০০টি করে লাশ খুঁজে পাচ্ছেন।
ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ অনুমান করেছে, কয়েক মাসের টানা অবরোধের কারণে মারিউপোলের কমপক্ষে ২১ হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
অন্যদিকে ইউক্রেনীয় এবং রাশিয়ান বাহিনী বর্তমানে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের সিভিয়ারোডোনেস্টকের কেন্দ্রস্থল ডনবাস নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রচণ্ড লড়াই করেছে।
যুদ্ধ যতই দীর্ঘস্থায়ী হয়, এর মানবিক সংকটও ততই বাড়তে থাকে। যুদ্ধের ফলে পূর্ব ইউরোপের বাইরেও খাদ্য সংকট বাড়ছে। এছাড়া সরবরাহকৃত খাদ্যের দামও কয়েক গুণ বেড়ে গেছে।
আরও পড়ুন: লুহানস্কের ৯৭ শতাংশ নিয়ন্ত্রণের দাবি রাশিয়ার
ইউক্রেন ‘ইউরোপের রুটির ঝুড়ি’- হিসেবে পরিচিত। এছাড়াও গম, ভুট্টা ও সূর্যমুখী তেলের বিশ্বের বৃহত্তম রপ্তানিকারকদের মধ্যে অন্যতম এ দেশ। তবে যুদ্ধ ও কৃষ্ণ সাগর উপকূলে ইউক্রেনের বন্দরে রাশিয়ার অবরোধের কারণে খাদ্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। দেশটিতে আনুমানিক ২২ মিলিয়ন টন শস্য মজুদ রয়েছে। এসব শস্য রপ্তানি না করতে পারায় অনেক উন্নয়নশীল দেশে, বিশেষ করে আফ্রিকাতে খাদ্য সরবরাহকে বাধাগ্রস্ত করছে।
বুধবার সাগরে একটি নিরাপদ করিডোর তৈরির ব্যাপারে জাতিসংঘের এক প্রস্তাবে সমর্থন প্রকাশ করেছে রাশিয়া। এর ফলে ইউক্রেন পুনরায় শস্য রপ্তানি শুরু করতে পারবে।
ইউরোপীয় কাউন্সিলের সভাপতি চার্লস মিশেল বুধবার ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে ‘খাদ্য সরবরাহকে বাধাগ্রস্ত করার’ অভিযোগ করেছেন।
বিশ্বের অন্যতম শস্য রপ্তানিকারক দেশ রাশিয়া অভিযোগ করছে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার জন্য ক্রমবর্ধমান খাদ্য সংকট দায়ী। ইউরোপীয় ইউনিয়ন মস্কোর এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে যে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালানোর দায় সম্পূর্ণ রাশিয়ার।
ইউরোপীয় কাউন্সিলের সভাপতি চার্লস মিশেল আরও বলেন, রুশ জাহাজ এবং ক্ষেপণাস্ত্রের কারণে ইউক্রেন শস্য রপ্তানি করতে পারছে না। রাশিয়ান ট্যাঙ্ক, বোমা ও মাইনের জন্য ইউক্রেনে ফসল রোপণ এবং ফসল ঘরে তোলা সম্ভব হচ্ছে না।
পশ্চিমারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে দেয়া নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে শস্য এবং অন্যান্য খাদ্যকে অব্যাহতি দিয়েছে। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ রুশ জাহাজের বিরুদ্ধে ব্যাপক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আরোপ করেছে।
মস্কো বলছে, এসব বিধিনিষেধগুলোর কারণে শস্য রপ্তানির জন্য তাদের জাহাজগুলো ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না অন্যান্য শিপিং সংস্থাগুলোও তাদের পণ্য বহন করতে ইচ্ছা পোষণ করছে না।
আরও পড়ুন: যুদ্ধ, জলবায়ু বিপর্যয় বহুমুখী খাদ্য সংকট সৃষ্টি করছে: জাতিসংঘ
তুরস্ক যুদ্ধের অবসান ঘটাতে এবং শস্যের চালান পুনরায় শুরু করার জন্য আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা রাখতে চাইছে।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু বুধবার রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তবে ইউক্রেনকে এই আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সিভিয়েরোডোনেটস্ককে ডনবাসের যুদ্ধের ‘কেন্দ্র’ এবং সম্ভবত যুদ্ধের সবচেয়ে কঠিন অংশগুলোর মধ্যে একটি বলে অভিহিত করেন।
তিনি বলেন, ইউক্রেনের সেনাবাহিনী তাদের অবস্থান ধরে রেখেছে।
জেলেনস্কির অফিসের একজন উপদেষ্টা বলেন,রাশিয়ান বাহিনী যুদ্ধে তাদের কৌশল পরিবর্তন করেছে। তারা শহর থেকে পিছু হটছে, তবে তারা কামান ও বিমান হামলা বাড়িয়েছে।
লুহানস্কের গভর্নর সের্হি হাইদাই রাশিয়ান বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ের অসুবিধার কথা স্বীকার করে বলেছেন, ‘হয়তো আমাদের পিছু হটতে হবে, কিন্তু এই মুহূর্তে শহরে যুদ্ধ চলছে।’
আরও পড়ুন: চলতি বছরে তেলের দাম ৪২ শতাংশ বাড়তে পারে: বিশ্বব্যাংক