বিএনপি নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনা করতে কোথাও যাবে না বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘চলমান সংলাপ অর্থহীন মহড়ায় পরিণত হবে, কারণ এটি ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার জন্য সরকারের নতুন কৌশলের অংশ হিসেবে করা হচ্ছে।’
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপির নারী মঞ্চ ও শিশু অধিকার ফোরাম আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তৃতাকালে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি বলেন, বর্তমান সরকার আবারও ক্ষমতায় বসতে নানা কৌশল অবলম্বন করছে। রাষ্ট্রপতি আলোচনা করছেন...তবে ইতোমধ্যেই অনেক রাজনৈতিক দল এই আলোচনা বয়কট করে স্পষ্টই বুঝিয়ে দিয়েছে যে এই আলোচনায় কোনো ফল হবে না বলেই সবাই মনে করছে।
এসময় তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির বর্তমান সংলাপ অর্থহীন, কারণ নির্বাচনের সময় নিরপেক্ষ সরকার না থাকলে বিশ্বাসযোগ্য ভোট নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনের কিছুই করার নেই।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা আরও বলেন, জনগণের ভোটাধিকার ‘পুনরুদ্ধার’ এবং দেশের রাজনৈতিক ‘সংকট’ কাটিয়ে উঠতে সরকারকে অবশ্যই খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ মুক্ত করে একটি নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য একটি নিরপেক্ষ ইসি গঠন করা হবে বলে মন্তব্য করে তিনি জানান, এটাই আমাদের স্পষ্ট কথা এবং এটাই সংকট সমাধানের একমাত্র উপায়।
গত ২০ ডিসেম্বর নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপতি ইতোমধ্যেই দেশের নিবন্ধিত ২৮টি রাজনৈতিক দলকে বঙ্গভবনে আলোচনায় যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার কিছু হলে সরকারকে ‘হত্যা মামলার আসামি’ করার হুঁশিয়ারি বিএনপির
তবে বিএনপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি-রব) আলোচনায় না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জনগণের ভোটাধিকারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান ফখরুল।
তিনি বলেন, আমি সকল রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিবিদদের দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানাতে চাই। আসুন জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি এবং জনগণের সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ি।
দারিদ্র্যসীমার অবনতি
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, সারাদেশের মানুষ আওয়ামী লীগের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। অথচ ক্ষমতাসীনরা বিপুল অর্থ উপার্জন করে ধনী হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেছেন তার শাসনামলে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো তার এই ১৩ বছরের শাসনামলে সাধারণ মানুষ দরিদ্র হয়েছে এবং দরিদ্র মানুষ আরও দরিদ্র হয়েছে।
এসময় বিএনপি নেতা আরও বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে চার কোটি মানুষ বেকার এবং নয় কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বিভিন্ন সুযোগ - সুযোগ নিয়ে অবৈধভাবে বিপুল অর্থ উপার্জন করছেন মন্তব্য করে তিনি জানান, তারা এখন তাদের অবৈধ পথে অর্জিত অর্থ বিদেশে পাচার করছে।
আরও পড়ুন: ইসি নিয়ে সংলাপ: যাবে না বিএনপি
গণমানুষের দাবি
খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসাকে দেশের গণমানুষের দাবি আখ্যায়িত করে ফখরুল বলেন, সরকারকে এই দাবি মেনে নিতেই হবে।
খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার গণদাবি অস্বীকার করলে সরকারকে ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
এই বিএনপি নেতা বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে প্রায় দুই মাস ধরে শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে আন্দোলন করছি আমরা। সারাদেশে অনেক সমাবেশ করেছি আমরা এবং সেসব কর্মসূচি থেকে লাখ লাখ মানুষ তার (খালেদা জিয়ার) মুক্তির স্লোগান দিয়েছে।
এসময় খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম প্রমুখ।