দেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ভারত কী বলে, তা নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দরকার, আমাদের মানুষ কী বলে। মানুষ খুব পরিষ্কার করে বলছে, বিদায় হও। আর সময় নেই। যেতে হবে। এই সরকারকে যেতেই হবে।’
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শুক্রবার (আগস্ট) আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে আ. লীগ দেশে সংঘাত সৃষ্টির চেষ্টা করছে: মির্জা ফখরুল
তিনি বলেন, পৈশাচিক সরকারের বিরুদ্ধে অপ্রতিরোধ্য প্রতিরোধ গড়ে তুলে তাদের অবশ্যই পরাজিত করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের পুরো জাতিকে একত্রিত করে এবং মৃত্যুর ভয়কে সাহসী করে একটি ভয়ানক লড়াই চালিয়ে এই শাসনকে পরাজিত করতে হবে এবং অপসারণ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এই সরকারকে সরাতে হবে। আমাদের সামনে বিকল্প কোনো পথ নেই। ফিরে যাওয়ার কোনো পথ নেই। আমাদের অস্তিত্বের জন্য, জাতির অস্তিত্বের জন্য সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
তিনি বলেন, সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, জনগণের সরকার গঠন করতে হবে। বর্তমান শাসনের পতন ঘটলে মিথ্যা মামলা ও তাদের নির্দেশিত রায় টিকবে না। আসুন সবাই সেই সংকল্প নিয়ে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে এগিয়ে যাই।
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, সরকার বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার, জেল, সাজা, এমনকি মৃত্যুদণ্ড দিয়েও বিএনপিকে দমন করতে পারবে না।
তিনি বলেন, আমরা রাস্তায় নেমেছি এবং আমরা আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। এই শাসনের পতন নিশ্চিত করাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জুবাইদা রহমানকে সাজা দেওয়ার প্রতিবাদে এই সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপির ঢাকা দক্ষিণ, উত্তর মহানগর ও জেলা ইউনিট।
এদিকে হাজার হাজার নেতা-কর্মী টানা বৃষ্টিতে নয়াপল্টন এলাকায় হাঁটু পানিতে হেঁটে দল ও সহযোগী সংগঠনের সমাবেশে যোগ দেন। দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও নয়াপল্টন এলাকায় বৃষ্টির পানিতে জমে যাওয়ায় এক ঘণ্টা দেরি হয়।
এ ছাড়া দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মুখে বিএনপি নেতা-কর্মীরা মিছিলে সমাবেশস্থলে জড়ো হয়ে সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। কর্মসূচি শেষ হওয়া পর্যন্ত তারা সেখানে জল এবং বৃষ্টির মধ্যে অবস্থান করে।
বিএনপি মহাসচিব দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও বৃষ্টি উপেক্ষা করে সমাবেশ সফল করার জন্য দলীয় পদমর্যাদা ও ফাইলের প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, আমি জানি আপনারা কঠোর পরিশ্রম করছেন। আপনারা এখানে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন।
তিনি বলেন, পুলিশের অভিযানে আপনারা রাতে ঘুমাতে পারেন না।
তিনি অভিযোগ করেন, সরকার দিনের বেলায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। কিন্তু বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করে রাতে তাদের বাড়িতে অভিযান চালায়।
রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার না করে রাজপথে বিএনপির মোকাবিলা করতে ক্ষমতাসীন দলকে আহ্বান জানিয়েছেন এই নেতা।
বিচারের দিনে (কেয়ামতের দিনে) বিচারকরাই আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি জবাবদিহি করবেন উল্লেখ করে তিনি বিচারকদের প্রতি অন্যায়ভাবে শাস্তি না দেওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আমাদের নেতা-কর্মীদের অন্যায়ভাবে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য আপনাকেও একদিন দেশের জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
ফখরুল বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা ব্যাপক দুর্নীতি ও লুটপাট করে বিপুল অর্থ উপার্জন করছে।
বিএনপি নেতা আক্ষেপ করে বলেন, সরকার দেশকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরাও এখন দুর্নীতিতে লিপ্ত হচ্ছেন।
তিনি বলেন, এ বছর ডেঙ্গুতে রেকর্ড সংখ্যক লোক মারা গেছে। কিন্তু সরকার এ নিয়ে কম চিন্তা করছে। কারণ তাদের একমাত্র ফোকাস হচ্ছে কীভাবে নির্বাচন ছাড়াই আবার ক্ষমতায় আসা যায়।
তিনি আরও বলেন, আমরা তাদের এটি করতে দেব না।
এর আগে গত বুধবার ঢাকার একটি আদালত ২০০৭ সালের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা একটি দুর্নীতির মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ৯ বছরের কারাদণ্ড এবং তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এই রায় দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ বিএনপির। এর প্রতিবাদে দেশব্যাপী প্রতিবাদ সমাবেশের ঘোষণা ডাক দেয় দলটি।
আদালতের রায়ের প্রতিবাদে বিএনপির অন্যান্য মহানগর ও জেলা শাখাও একই ধরনের কর্মসূচি পালন করেছে।