একদিনের ব্যবধানে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের হিমছড়ি পয়েন্টে আরও একটি মৃত তিমি ভেসে এসেছে।
শনিবার ভোরে এই মৃত তিমি সৈকতের বালুচরে দেখতে পায় স্থানীয়রা।
পরে জেলা প্রশাসন, বনবিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর, মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে তিমিটির প্রাথমিক তদন্ত করেন। এই সময় তারা তিমিটির মাপ, ওজন নির্ণয় করেন। সেই সাথে তিমিটির শরীরে আঘাত আছে কিনা তা দেখেন।
মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আশরাফুল হক জানান, এই তিমিটিও এর আগের দিন পাওয়া তিমির প্রায় সমান সাইজ। ওজন প্রায় আনুমানিক আড়াই টন। এটি ৪৬ ফুট দৈর্ঘ্য , ডায়া (প্রস্থ) ২০ ফুট ও উচ্চতা ৯ ফুট। আগের দিনের তিমিটি ৪৪ ফুট দীর্ঘ ও ২৬ ফুট ডায়া ছিল।
এর আগে, ৯ এপ্রিল কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মেরিনড্রাইভ সড়কের হিমছড়ি সৈকতে ভেসে এসেছে বিশালাকৃতির মৃত তিমি। তখনো পুরোপুরি জোয়ারের পানি নেমে যায়নি। জোয়ারের পানি নেমে যাওয়ার পর পূর্ণ ভাটায় সাগরের বালুতটে পড়ে থাকা মৃত তিমি স্পষ্ট দৃশ্যমান হয়। আনুমানিক ১৬ থেকে ১৭ বছর বয়সী এ তিমি দুইটি হয়তো সপ্তাহ পূর্বে মারা গেছে বলে জানান মেরিন লাইফ বিশেষজ্ঞ জহিরুল ইসলাম।
আরও পড়ুন: হিমছড়ি সমুদ্র সৈকতে ভেসে উঠেছে বিশালাকৃতির মৃত নীল তিমি
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট কক্সবাজারের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুরর রহমান জানান,এই দুইটি নীল তিমি নয়। এরা কুঁজো (হাম্পব্যাক হোয়েল) তিমি। বিশ্বেএই কুঁজো তিমি বিরল। বিরল প্রজাতির এই তিমি মহাসাগরে বিচরণ করে। দলবেঁধে বিচরণ করাই তাদের স্বভাব। একে অপরের প্রতি তাদের খুব মায়া মমতা থাকে।
তিনি ধারণা করেন, এই তিমি দুইটি দলছুট হয়ে যাওয়ায় মৃত্যু হয়। এরা খুব অভিমানি হয় তাই তাদের দল থেকে বের করে দেয়ায় এই তিমি হয়তো আত্মহত্যা করেছে। নিজেদের বিচরণ স্থান ত্যাগ করে খাদ্য গ্রহণ না করাসহ নানা বিপদের সম্মুখীন হয়ে মৃত্যু হতে পারে। বাংলাদেশের জলসীমার বাইরে মৃত্যু হয়ে পরে বঙ্গোপসাগর হয়ে কক্সবাজারের হিমছড়িতে ভেসে এসেছে।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু ধারণা করে বলেন, সাগরে কোনো বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এই তিমি দুইটির মৃত্যু হতে পারে। অথবা বড় কোনো জাহাজ থেকে ফেলা বিস্ফোরক দ্রব্য খেয়ে তাদের মৃত্যু হতে পারে। এছাড়া সাগরে পরিবেশ দূষণের কারণে এসব জলজ প্রাণীর মৃত্যু হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ভেসে আসা বিশাল আকারের এই দুইটি তিমি পঁচে গন্ধ ছড়াচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এটি মাটিতে পুঁতে ফেলা না হলে দুর্গন্ধে পরিবেশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। তিনি তার আগে তিমি দুইটির মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে ময়নাতদন্তের দাবি জানান।
কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম খালেকুজ্জামান বলেন, এ প্রজাতির তিমি আমাদের বঙ্গোপসাগরে রয়েছে। বিশেষ করে সুন্দরবনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এসব তিমি দেখা যায়।
তিনি বলেন, 'মৃত তিমিটির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে কি কারণে মারা গেছে সেটি জানা যাবে ময়নাতদন্তের পর।'
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আমিন আল পারভেজ মৃত তিমি পরিদর্শন শেষে বলেন, প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর, মৎস্য সম্পদ অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি করে মৃত্যুর কারণ উদঘাটন করা হবে। তবু কোন কারণে তিমি দুইটি মারা গেছে, তা নির্ণয়ের চেষ্টা করা হবে।