আট দিনের ব্যবধানে এখানে ছয়টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। আত্মহননকারীদের মধ্যে দুজন করে কিশোর, কিশোরী ও গৃহবধূ রয়েছেন।
আরও পড়ুন: কীভাবে ‘আত্মহত্যা’ করতে হয়, দেখাতে গিয়ে ফাঁস লেগে যুবকের মৃত্যু
আত্মহত্যার এসব ঘটনায় সচেতন নাগরিকরা বেশ উদ্বিগ্ন। সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়, সাংসারিক টানাপোড়েন, ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাব ও মোবাইল ফোন কেন্দ্রিক অপরাধ থেকে এই প্রবণতা বাড়ছে বলে মনে করছেন তারা।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি মাঝরাতে প্রবাসে থাকা স্বামীর সাথে ফোনে কথা বলার একপর্যায়ে শারমীন আক্তার (২০) নামে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেন। ফরিদগঞ্জের রূপসা উত্তর ইউনিয়নের গাব্দের গাঁও গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শারমীন ওই গ্রামের সৌদি প্রবাসী মোহন মিয়ার স্ত্রী ও এক সন্তানের জননী।
আরও পড়ুন: বনভোজনে যেতে বাধা দেয়ায় আত্মহত্যা
নিহতের শ্বশুর দেলোয়ার হোসেন জানান, প্রতিদিনের মতো ওই দিন রাতে খাবার খেয়ে শারমীন তার রুমে ঘুমাতে যায়। পরে মাঝরাতে তার বাচ্চার চিৎকার শুনে ওর দাদি ছুটে যায়। এ সময় ডাকাডাকি করেও শারমীনের সাড়া না পেয়ে জানালার উপর দিয়ে উঁকি মেরে দেখা যায় তিনি সিলিং ফ্যানের সাথে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলে রয়েছেন। পরে জাতীয় জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশকে ঘটনা জানালে তারা এসে দরজা খুলে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
ফরিদগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জামাল হোসেন জানান, খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো এবং এ ব্যাপারে অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়।
তবে, গৃহবধূর বাবা মানিক পাটওয়ারী অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার মেয়েকে তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন মেরে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রাখে। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।’
আরও পড়ুন: সাভারে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে স্কুলছাত্রীর ‘আত্মহত্যা’
এর আগে, ৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় সদর উপজেলার আশিকাটি ইউনিয়নে প্রেমের সম্পর্ক মেনে না নেয়ায় এ কলেজছাত্রী বিষপানে আত্মহত্যা করে।
নিহত স্মৃতি আক্তার (১৭) ওই ইউনিয়নের চাঁদখার বাজার এলাকার মো. হারুন খানের মেয়ে ও বাবুরহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পাস করেছিল।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন জানান, স্মৃতির সাথে মতলব দক্ষিণের মুন্সিরহাট এলাকার এক যুবকের দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি তার বাবা হারুন খান কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি। এ কারণে স্মৃতি গোপনে ঘরে থাকা কীটনাশক খেয়ে ফেলে। পরে গোঙানির শব্দ শুনে পরিবার দ্রুত স্মৃতিকে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
একই দিন পরপর আরও দুটি ঘটনা ঘটে ফরিদগঞ্জ উপজেলায়। ওই দিন বিকালে সন্তোষপুর গ্রামের রাঢ়ি বাড়ির রাকিব হোসেনের স্ত্রী ও দুই সন্তানের জননী সুইটি আক্তার (২৪) গলায় ফাঁস দিয়ে এবং রাতে ফরিদগঞ্জ পৌরসভার পশ্চিম বড়ালি গ্রামের আবুল বাসারের ছেলে শামীম হোসেন (১৭) ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ও চিঠি লিখে পরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।
আরও পড়ুন: চাকরি চলে যাওয়ায় আত্মহত্যার চেষ্টা, ৯৯৯ ফোনকলে উদ্ধার
ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদ হোসেন জানান, নিহত শামীম হোসেন ছিল মাদকাসক্ত।
তার আগে, ৩১ জানুয়ারি একই উপজেলার বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়নের সোসাইরচর গ্রামের বাইশা বাড়ির দেলোয়ার হোসেনের ছেলে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান (১৯) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। আর ২৮ জানুয়ারি গোবিন্দপুর গ্রামে হাসি আক্তার ঝর্না (১৬) নামে এক কিশোরী গৃহবধূ বিষপানে আত্মহত্যা করে।
পুলিশ সূত্র ও এলাকাবাসী জানায়, পারিবারিক কলহ এসব ঘটনার প্রধান কারণ।
আরও পড়ুন: ঘুমের ওষুধ খেয়ে ৯৯৯ নম্বরে যুবকের ফোন, হাসপাতালে নিল পুলিশ