সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর পানি কমতে থাকায় তীব্র ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এ ভাঙ্গনে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার পাঁচঠাকুরী গ্রামের নদীপাড়ের প্রায় দুইশ’ মিটার যমুনাগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
হঠাৎ করে এ নদী ভাঙনে ওই এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙ্গনের মুখ থেকে অনেক ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এখন হুমকির মুখে পড়েছে।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রনজিৎ কুমার সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, রবিবার সকাল থেকে আকস্মিক ভাবে ভাঙন শুরু হয় এবং সোমবার সকাল পর্যন্ত সদর উপজেলার পাঁচঠাকুরী গ্রামে যমুনা নদীর তীব্র ভাঙনে প্রায় দুইশ’ মিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, যমুনার পানি দ্রুত কমতে থাকায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যেই এ ভাঙন রোধে সেখানে বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। একারণে বর্তমানে ভাঙন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
আরও পড়ুন: কয়রায় নদীভাঙন: ১১ বছরে বাড়ি ছেড়েছে ১৬ হাজার পরিবার
তিনি আরও বলেন, গত বছর পাচঁঠাকুরী গ্রামের সিমলা স্পারের পাশে পাঁচঠাকুরীর অনেক অংশ ভেঙ্গে যাওয়ায় সেখানে অস্থায়ীভাবে মেরামত করা হয়েছিল। স্থায়ী মেরামতের জন্য ইতোমধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হলেও কাজ এখনো শুরু করা হয়নি। এ অবস্থায় সেখানে আবারও ভাঙন দেখা দেয় এবং ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে রয়েছে নদীতীর রক্ষা বাঁধের ওপরে নির্মিত রানীগ্রাম-রতনকান্দি আঞ্চলিক সড়ক। এছাড়া যমুনা তীরবর্তী অনেক স্থানেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে এনায়েতপুরে ভাঙন রোধে কাজ চলছে।
এদিকে পাঁচঠাকুরী গ্রামের ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকেই বলেন, একাধিকবার যমুনার ভাঙনে সর্বশান্ত হয়েছি। গত দুই দিনের ভাঙনেও ৫/৬টি বাড়ি, বসতভিটা ও গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
একটি প্রভাবশালী মহল যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় এ তীব্র ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে বলে তাদের অভিযোগ।
এ অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে এলাকাবাসী জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান ও মানববন্ধন পালন করা হলেও এখনো অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি।
তারা আক্ষেপ করে আরও বলেন, এ বালু উত্তোলন ও বিক্রি করে এলাকার অনেকেই এখন কোটিপতি হয়েছেন আর ভাঙনে এলাকার অনেকেই সর্বশান্ত হয়ে পথে বসেছে। তবে অজ্ঞাত কারণেই এ বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না।
এ বিষয়ে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, যমুনা নদীতে পানি কমতে থাকায় এ ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে নদীর তলদেশে ঘূণাবর্তের সৃষ্টি হয়ে মাটি সরে যাওয়ায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।
ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে এবং এতে আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আরও পড়ুন: নদীভাঙন: সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর তীরে সহস্রাধিক পরিবারের মানবেতর জীবনযাপন