সিলেট নগরীর একটি আবাসিক হোটেলে দুই তরুণীকে আটকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মামলায় ছাত্রদল নেতা নাবিল রাজা চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) র্যাবের একটি টিম অভিযান চালিয়ে তাকে সিলেট নগরী থেকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তার নাবিল রাজা চৌধুরী (৩৫) সুনামগঞ্জ জেলার সদর থানার হরিণাপাটি গ্রামের ফরহাদ রাজা চৌধুরীর ছেলে। তিনি মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। বর্তমানে তিনি সিলেট মহানগরীর এয়ারপোর্ট থানাধীন জালালাবাদ আবাসিক এলাকার ৪৭/১০ নং বাসার বাসিন্দা।
এ ঘটনায় আরও দুইজন ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন। তারা কারাগারে আছেন।
আরও পড়ুন: ধর্ষণের শিকার হলে নারীর মর্যাদা কমে না: দীপু মনি
গত ২৩ আগস্ট দিবাগত রাতে মহানগরীর পাঠানটুলাস্থ জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পার্শ্ববর্তী গ্রিন হিল আবাসিক হোটেলের দুটি কক্ষে দুই তরুণীকে আটকে রেখে রাতভর পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে।
এ ঘটনায় ভিকটিম দুই তরুণী সিলেটের জালালাবাদ থানায় পৃথক মামলা দায়ের করেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার এক তরুণী (১৮) কয়েক মাস আগে আইএলটিএস পড়ার জন্য সিলেট মহানগরীতে এসে আরেক নাট্যশিল্পী তরুণীর (২৫) সঙ্গে শাহজালাল উপশহরের একটি বাসায় থাকতে শুরু করেন। উপশহর এলাকায় থাকার সুবাধে ওই এলাকার স্নেহা বিউটি পার্লারের কর্মী তানজিনা আক্তার তানিয়া (২৫) নামের এক তরুণীর সঙ্গে পরিচয় হয়।
তানিয়া সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়সিদ্দি গ্রামের দবির মিয়ার মেয়ে। তিনি শাহজালাল উপশহরের এইচ ব্লকের ৪ নং রোডের আলী ভিলা নামক ৫ তলা বাসায় ভাড়া থাকেন।
পরিচয়ের এক পর্যায়ে তানিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে সিলেটে আইএলটিএস করতে আসা সেই তরুণীর। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সুবাধে ২৩ আগস্ট রাত সাড়ে ৮টার দিকে তানিয়া ফোন করে ওই তরুণীকে বলেন, তার ভাইয়ের জন্য এবি পজেটিভ রক্ত প্রয়োজন। ওই তরুণীর এবি পজেটিভ রক্ত হওয়ায় তিনি যেন এক ব্যাগ রক্ত দেয়ার জন্য রাগীব-রাবেয়া হাসপাতালে যান।
এমন ফোন পেয়ে ওই তরুণী তার বন্ধবীকে (২৫) নিয়ে তৎক্ষণাৎ রাগীব-রাবেয়া হাসপাতালের সামনে যান। সেখানে গিয়ে তানিয়াকে দেখতে পেয়ে রক্ত দেয়ার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি ওই দুই তরুণীকে জানান, রক্ত দেয়ার আগে তার এক কাজিনের বাসায় একটু প্রয়োজন আছে। প্রয়োজন শেষ করে তারা হাসপাতালে যাবেন।
এ কথা বলে কৌশলে ওই দুই তরুণীকে জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পার্শ্ববর্তী গ্রিন হিল আবাসিক হোটেলের ৪র্থ তলায় নিয়ে যান তানিয়া এবং তাদের দুইজনকে আলাদা আলাদা কক্ষে বসিয়ে রাখেন।
এ সময় তানিয়ার সহযোগী কয়েকজন তরুণ ও যুবক এসে ওই দুই তরুণীকে আটকে রাখেন এবং রাত সাড়ে ১১টার থেকে একের পর এক ১০-১২ জন যুবক তাদের দুইজনকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।
এছাড়াও এক তরুণীর (১৮) কাছ থেকে তার মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা নিয়ে যান তানিয়া ও ধর্ষকরা।
পরদিন (২৪ আগস্ট) দুপুর ১টার দিকে দুই তরুণীকে এক কক্ষে নিয়ে তাদের কাছ থেকে ‘ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেনি’এ মর্মে স্বীকারোক্তি নেয়া হয় এবং এ কথাগুলো মোবাইল ফোনে ভিডিও করে তাদের ছেড়ে দেয় তানিয়া ও তার সহযোগিরা।
ঘটনার পর দুই তরুণী জালালাবাদ থানায় পৃথক মামলা করেন।
তানিয়া ছাড়াও এই দুই মামলার আসমিরা হলো, সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার নগর গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে মোহাইমিন রহমান রাহি (৩৩), সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক থানার গোবিগন্দগঞ্জ গ্রামের মৃত তহুর আলীর ছেলে জুবেল (৩১), সিলেট নগরীর পাঠানটুলা এলাকার আলী আকবরের ছেলে রানা আহমদ শিপলু ওরফে শিবলু (৩৫), সুনামগঞ্জ সদর থানার হরিনাপাট গ্রামের ফরহাদ রাজা চৌধুরীর ছেলে নাবিল রাজা চৌধুরী (৩৫) ও সুজন (৩৫) এবং অজ্ঞাত আরও পাঁচ থেকে ছয় জন।
এদিকে, এ ঘটনায় দায়ের করা পৃথক মামলায় মোহাইমিন রহমান রাহি ও তানজিনা আক্তার তানিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ এবং র্যাব।
এর মধ্যে রাহি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: ৯ মাসে ৩৪ নারী ধর্ষণের পর হত্যা: আসক