বার্সেলোনার পরবর্তী দুই ম্যাচ বায়ার্ন মিউনিখ ও রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে। ম্যাচদুটির আগে নিজেদের মানসিক অবস্থা চনমনে রাখতে যেমন জয়ের প্রয়োজন ছিল, আজ তা-ই করে দেখিয়েছেন হান্সি ফ্লিকের শিষ্যরা।

কাতালুনিয়ার অলিম্পিক স্টেডিয়ামে লা লিগার অষ্টম ম্যাচে রবিবার রাতে সেভিয়াকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে হাই ভোল্টেজ ম্যাচদুটির ভালো প্রস্তুতি সেরেছে বার্সেলোনা।

বার্সেলোনার পক্ষে রবের্ট লেভানডোভস্কি ও পাবলো তোরে জোড়া গোল করেন। অন্য গোলটি আসে পেদ্রির পা থেকে। অন্যদিকে, সেভিয়ার পক্ষে একমাত্র গোলটি করেন দলটির তরুণ বেলজিয়ান মিডফিল্ডার স্টানিস ইদুম্বো-মুজাম্বো।

মাঠের খেলায় এদিন বার্সেলোনার ধারেকাছেও ছিল না সেভিয়া। ৬৭ শতাংশ সময় বলের দখল নিজেদের কাছে রেখে মোট ২১টি শট নেয় বার্সা, যার ৯টি লক্ষ্যে ছিল। অন্যদিকে, ৭টি শট নিলেও গোল করা ওই একটি মাত্র শট লক্ষ্যে রাখতে পারে সেভিয়া।

আরও পড়ুন: লেভানডোভস্কির হ্যাটট্রিকে দারুণ জয় বার্সেলোনার

ম্যাচের শুরু থেকেই পজেশনাল ফুটবলে সেভিয়াকে চেপে ধরে বার্সেলোনা। তবে নবম মিনিটে প্রথম বিপজ্জনক আক্রমণে ওঠে সফরকারীরাই। ডান পাশ ধরে ক্ষিপ্র গতিতে পাল্টা আক্রমণে উঠে বার্সার বক্সের সামান্য বাইরে থেকে দুর্দান্ত এক শট হানেন সেভিয়া উইঙ্গার দদি লুকেবাকিও। তবে তার শটটি ক্রসবারে বেশ ওপর দিয়ে চলে যায়।

সপ্তদশ মিনিটে প্রথম সুযোগ তৈরি করে বার্সেলোনা, কিন্তু আনসু ফাতির শটটিও পোস্টের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায়।

দুই মিনিট পর বার্সার হাই লাইন ডিফেন্স ভেঙে আরও একটি দারুণ আক্রমণে ওঠে সেভিয়া, এবারের আক্রমণটি কর্নারের বিনিময়ে প্রতিহত করেন বার্সা ডিফেন্ডাররা।

২২তম মিনিটে ডি বক্সের মধ্যে মধ্যে রাফিনিয়াকে ফেলে দিয়ে পেনাল্টি দিয়ে বসেন সেভিয়ার এক খেলোয়াড়। তা থেকে বার্সাকে ম্যাচের প্রথম গোলটি এনে দেন রবের্ট লেভানডোভস্কি।

এরপর পেদ্রির গোলে ২৮তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ হয় কাতালানদের। ডান পাশ ধরে বল নিয়ে এগিয়ে গিয়ে বক্সের বাইরে মাঝামাঝি থাকা জুল কুন্দেকে পাস দেন লামিন ইয়ামাল। পেছনে পেদ্রিকে দেখে ডামি দেন কুন্দে, আর বল পেয়েই ডান পায়ের জোরালো শটে ঠিকানা খুঁজে নেন ২১ বছর বয়সী এই তরুণ মিডফিল্ডার।

৩৬তম মিনিটে একটি পাল্টা আক্রমণে উঠে নিজের দ্বিতীয় গোলটি পেয়েই যাচ্ছিলেন লেভানডোভস্কি, কিন্তু গোলরক্ষক এগিয়ে এসে কোনোমতে তা প্রতিহত করেন। তবে এর তিন মিনিট পর আর তাকে রুখতে পারেনি কেউ।

কর্নার থেকে পেদ্রির দেওয়া ক্রস বক্সের মধ্যে থেকে ফিরিয়ে দিলে বক্সের সামনে তা পেয়ে যান রাফিনিয়া। সেখান থেকে বাঁ পায়ের বুলেট শটে লক্ষ্যভেদ করার চেষ্টা করেন তিনি, কিন্তু বল পোস্টের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে দেখে বুটের আলতো ছোঁয়ায় তা গন্তব্যে পাঠিয়ে দেন লেভানডোভস্কি। এ নিয়ে চলতি মৌসুমে ১০ ম্যাচে ১২ গোল করলেন এই পোলিশ তারকা।

সেইসঙ্গে ইউরোপীয় সেরা পাঁচ লিগের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে বায়ার্ন মিউনিখ কিংবদন্তি গের্ড মুলারকে (৩৬৫) টপকে তৃতীয় স্থানে উঠে এলেন ৩৬ বছর বয়সী এই পোলিশ স্ট্রাইকার। লিগে তার ক্যারিয়ার গোলসংখ্যা হয়েছে ৩৬৬। এখন তার উপরে রয়েছেন শুধু ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো (৪৯৫) ও লিওনেল মেসি (৪৯৬)।

আরও পড়ুন: বার্সেলোনাকে খুশি করে সমতায় শেষ মাদ্রিদ ডার্বি

প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে আরও একটি দারুণ সুযোগ তৈরি করে বার্সেলোনা, তবে লামিনের ট্যাপ-ইন পোস্টের ধারেকাছেও ছিল না। ফলে স্কোরলাইন ৩-০ বানিয়ে প্রথমার্ধ শেষ করে বার্সেলোনা।

প্রথমার্ধে ৬৯ শতাংশ সময় বলের ওপর নিয়ন্ত্রণ রেখে মোট ১০টি শট নেয় কাতালান জায়ান্টরা। এর মধ্যে চারটি শট লক্ষ্যে রাখতে সক্ষম হয় তারা, যার মধ্যে তিনটি থেকেই গোল আদায় করে হান্সি ফ্লিকের দল। অপরদিকে, মোট তিনটি শট নিয়ে তার একটিও লক্ষ্যে রাখতে ব্যর্থ হয় সেভিয়া।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই সেভিয়াকে চেপে ধরে বার্সেলোনা। দ্বিতীয় মিনিটেই বক্সের বাইরে থেকে বুটের অগ্রভাগ দিয়ে এক দারুণ শটে লক্ষ্যভেদ করার চেষ্টা করেন লামিন, কিন্তু ক্রসবারঘেঁষে বল ভেতরে ঢোকার মুখে হাত দিয়ে উপরে উঠিয়ে দেন সেভিয়া গোলরক্ষক।

এর কিছুক্ষণ পর লামিনের বাড়ানো বল ধরে সেভিয়ার ডিফেন্স ভেঙে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন রাফিনিয়া, কিন্তু তার গোলটি অফসাইডে কাটা পড়ে।

৫৮তম মিনিটে হঠাৎ করে পাল্টা আক্রমণে উঠে বার্সা গোলরক্ষককে ফাঁকায় পেয়ে যান সেভিয়ার ইসাক রোমেরো। এ সময় পাউ কুবারসি এসে তাকে ফেলে দিলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি, কিন্তু অফসাইডের কারণে তাদের সেই সুযোগটিও হাতছাড়া হয়।

আরও পড়ুন: আয়ের ‘ভুল তথ্য’ দিয়ে জরিমানা গুনতে হচ্ছে বার্সেলোনার

৭১তম মিনিটে গোলমুখে উড়ে আসা ক্রসে হেডারে গোল পেয়েই গিয়েছিলেন ফাতি, তবে বল সরাসরি গোলরক্ষকের হাতে চলে যায়। পরের মিনিটে পাল্টা আক্রমণে উঠে দারুণ একটি গোল করেন লুকেবাকিও। কিন্তু এবারও অফসাইডের পতাকা উঠলে হতাশ হয় সেভিয়া।

৮২তম মিনিটে অবশেষে চতুর্থ গোলের দেখা পায় বার্সা। প্রতিপক্ষের বক্সের মধ্যে ডান পাশ থেকে পেদ্রির বাড়ানো পাস ধরে মাঝ বরাবর পাস দেন জুল কুন্দে, পেনাল্টি স্পটের কাছ থেকে জোরালো শটে বল ঠিকানায় পাঠিয়ে দেন দ্বিতীয়ার্ধে বদলি নামা পাবলো তোরে।

এরপরই চোট থেকে প্রায় এক বছর পর মাঠে ফেরেন পাবলো গাভি। প্রবল করতালিতে তাকে বরণ করে নেয় ব্লাউগ্রানা সমর্থকরা।

৮৬তম মিনিটে পঞ্চম গোলটি পেয়েই গিয়েছিল বার্সেলোনা, কিন্তু গোলমুখ থেকে মার্ক কাসাদোর নেওয়া শট গোলরক্ষকের গায়ে লেগে ফিরে আসে।

এর পরমুহূর্তেই দুর্দান্ত এক পাল্টা আক্রমণে উঠে সেভিয়ার সান্ত্বনাসূচক গোলটি করেন ইদুম্বো-মুজাম্বো।

দুই মিনিট পর বক্সের বেশ বাইরে ফ্রি কিক থেকে নেওয়া অসাধারণ এক শটে বল জালে জড়িয়ে দেন পাবলো তোরে।

যোগ করা চার মিনিটেও আরও একবার আক্রমণ হেনেছিল বার্সা, তবে সেভিয়া গোলরক্ষক তা লুফে নিয়ে আর ব্যবধান বাড়াতে দেননি। ফলে ৫-১ গোলের বড় জয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুই ম্যাচের প্রস্তুতি সারে হান্সি ফ্লিকের শিষ্যরা।

আরও পড়ুন: শুরুতেই লাল কার্ড, হেরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শুরু বার্সেলোনার

এর ফলে লিগের প্রথম ১০ ম্যাচে ৩৩ গোল করল বার্সেলোনা। এ সময় তারা গোল হজম করেছে দশটি। আর ১০ ম্যাচের ৯টিই জিতে ২৭ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষস্থান সংহত করল তারা।

সমান সংখ্যক ম্যাচে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ দ্বিতীয়, ২০ পয়েন্ট নিয়ে আতলেতিকো মাদ্রিদ তৃতীয় এবং ১৮ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ভিয়ারিয়াল। এছাড়া ১০ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে সেভিয়া রয়েছে টেবিলের ১৩তম স্থানে।

আগামী বুধবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচে বায়ার্ন মিউনিখকে আতিথ্য দেবে হান্সি ফ্লিকের দল। এরপর শনিবার রাতে মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোয় সান্তিয়াগো বের্নাবেউতে খেলতে নামবে বার্সেলোনা।

লিগে টানা ৪২ ম্যাচ অপরাজিত রয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। শনিবার হার এড়াতে পারলে বার্সেলোনারই সর্বোচ্চ অপরাজিত থাকার রেকর্ড (৪৩) স্পর্শ করবে মাদ্রিদ জায়ান্টরা। তাই শুধু লিগে নয়, ঐতিহ্য ও আত্মসম্মানের দিক থেকেও দুই দলের কাছে বিশেষ গুরুত্ব পাবে ম্যাচটি।