উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) উপজেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ঘোষণা সংক্রান্ত বিধান অবৈধ এবং সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।
এছাড়া দুটি রিটের চূড়ান্ত শুনানি করে বুধবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে পৃথক রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কেসি, ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম ও মিনহাদুজ্জামান লিটন।
আরও পড়ুন: নওগাঁয় র্যাব হেফাজতে মৃত সুলতানার সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তলব হাইকোর্টের
পরে হাসান এম এস আজিম বলেন, উপজেলা পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও আর্থিক শৃঙ্খলা আনয়নসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনের বিধানসংবলিত উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ ধারা অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।
তিনি বলেন, ৩৩ ধারাকে সংবিধানের ৫৯ ও ৬০ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া ইউএনওরা বিভিন্ন আমন্ত্রণপত্রে উপজেলা পরিষদ না লিখে উপজেলা প্রশাসন লিখে থাকেন- এটাও অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, তবে উপজেলা পরিষদ আইনের ২৯ ধারায় উপজেলা পরিষদের যেসব কমিটি রয়েছে সগুলো সেভাবে এবং সরকার যেসব কমিটি করে দেবে সগুলো সেভাবে পরিচালিত হবে।
এছাড়া কমিটির ব্যাপারে আদালত কোনো হস্তক্ষেপ করেননি।
তিনি আরও বলেন, হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণে বলেছেন এখন থেকে ইউএনওরা সাচিবিক সহায়তা দেবেন উপজেলা পরিষদকে এবং উপজেলা পরিষদের কাছে জবাবদিহিতা করবেন।
এর আগে উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দুমকি উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খান বীরু, উপজেলা চেয়ারম্যান রিনা পারভীন, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম আহম্মেদ ও ভাইস চেয়ারম্যান রাশেদা আক্তার বাদী হয়ে এ বিষয়ে রিট করেন।
একই সঙ্গে আইনজীবী মো. মিনহাদুজ্জামান লীটন একটি রিট করেন।
২০২১ সালে এ দু’টি রিটের প্রেক্ষিতে প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। রুলে উপজেলা পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও আর্থিক শৃঙ্খলা আনয়নসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনের বিধান সংবলিত উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ ধারা কেন অবৈধ ও সংবিধানের ৭, ৫৯ ও ৬০ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।
এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, স্থানীয় সরকার সচিবসহ ১৫ সচিবকে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল। এ রুলের পর চূড়ান্ত শুনানি করে হাইকোর্ট বুধবার রায় দেন।
আরও পড়ুন: জেসমিনকে উঠিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে র্যাবের জুরিসডিকশন নিয়ে প্রশ্ন হাইকোর্টের
রিট দায়েরের পর রিটকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম বলেছিলেন, উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ ধারা চ্যালেঞ্জ করে রিটটি করা হয়েছে। আইনের ৩৩ ধারার (১) উপধারায় বলা হয়েছে—উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হইবেন এবং তিনি পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করিবেন।
এছাড়া ৩৩-এর (২) উপধারায় বলা হয়েছে—পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন, আর্থিক শৃঙ্খলা প্রতিপালন এবং বিধি দ্বারা নির্ধারিত অন্য কার্যাবলি পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সম্পাদন করিবেন।
এই আইনজীবী আরও বলেছিলেন, পরিষদ কোনো সিদ্ধান্ত দিলে তা ইউএনও বাস্তবায়ন না করলে পরিষদের করণীয় কিছু থাকে না। কারণ উপজেলা পরিষদের কাছে ইউএনওর জবাবদিহির বাধ্যবাধকতা আইনে রাখা হয়নি।
স্থানীয় সরকারব্যবস্থার স্বাধীনতাকে এই একটি ধারার মাধ্যমে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এই ৩৩ ধারা সংবিধানেরও ৭ ও ৫৯ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি। ৫৯ (১)-এ স্থানীয় শাসন সম্পর্কে বলা হয়েছে—আইনানুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানসমূহের ওপর প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক প্রশাসনিক একাংশের স্থানীয় শাসনের ভার প্রদান করা হইবে।
ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম আরও বলেছিলেন, মাঠ প্রশাসন কোনো চিঠিপত্র লিখলে বা অনুষ্ঠান করলে দাওয়াতপত্র বা ব্যানারে উপজেলা পরিষদ না লিখে লিখছে উপজেলা প্রশাসন। এই উপজেলা প্রশাসন কোথাও উল্লেখ নেই।
এর মাধ্যমে ইউএনওরা স্থানীয় সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহার করে থাকেন।
এছাড়া সরকারি কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে যতগুলো কমিটি গঠন করা হয়, তার সবগুলোতে ইউএনওকে চেয়ারম্যান করা হয় এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের করা হয় উপদেষ্টা।
আবার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় উল্লেখ থাকে, ইউএনও ইচ্ছে করলেই আরও সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন। এর মধ্য দিয়ে উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রায় নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়।
এমনি অনেক ক্ষেত্রে আয়-ব্যয়ের হিসাবও তাদের দেওয়া হয় না। যা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক ও স্থানীয় সরকার পদ্ধতির চেতনার পরিপন্থি।
আরও পড়ুন: ঢাবিতে শিক্ষার্থীদের কান-মুখ খোলা রাখতে দেয়া নোটিশের কার্যকারিতা হাইকোর্টে স্থগিত