চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্মিত ২৩টি দোকান প্রভাব খাটিয়ে বরাদ্দ দেয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলা থেকে আওয়ামী লীগ নেতাসহ ২০ জনকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মুন্সী আব্দুল মজিদ তাদের অব্যাহতির এ আদেশ দেন।
মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়া ব্যাক্তিরা হলেন- মো. জাহেদুল আলম চৌধুরী, খোরশেদ আলম চৌধুরী, বখতিয়ার উদ্দিন খান, এ এম মাইনুল হক ও তার স্ত্রী নাজনীন সুলতানা, মোবারক উল্লাহ, নেজামুল হক, হোসনে আরা বেগম, মো. ইউনুস, শেখ সোহরাওয়ার্দী, ইশতিয়াক আহমদ চৌধুরী, মো. এরশাদুল হক, হাসিনা ভূঁইয়া, নূর নাহার বেগম, হাসান মুরাদ, দিদারুল ইসলাম, মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, গোলমান আরা বেগম, আঞ্জুমান আরা বেগম মিনু ও মাহবুব মিন্টু।
মামলার এজাহারের প্রধান আসামি সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী মারা যাওয়ায়, মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত।
আরেও পড়ুন: কোম্পানীগঞ্জে ছিনতাইকারী সন্দেহে ৩ পুলিশ সদস্য আটক
মামলার সকল আসামি অব্যাহতি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী। তিনি বলেন, এ মামলায় মোট আসামি ছিল ২৪ জন। সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী মৃত্যুর কারণে মামলা থেকে অব্যাহতি পান। দুদক অভিযোগপত্র দেয়ার সময় আরও তিনজনকে অব্যাহতির সুপারিশ করে। বাকি ২০ জনের দুদক আদালতে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। তাই আমরা আদালতের কাছে সম্পূরক অভিযোগপত্রভুক্ত সব আসামিকেই বেকসুর খালাস চেয়ে আবেদন করলে আদালত সবাইকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, নগরীর মুরাদপুরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্মিত ২৩টি দোকান ১৯৯৭ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মধ্যে বরাদ্দ দেয়া হয়। পত্রিকায় টেন্ডার ছাড়া, যাচাইবাছাই ছাড়া দোকানগুলো বরাদ্দ দেয়ার অভিযোগে ২০০২ সালের ১৩ অক্টোবর কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা করে দুদক।
দুদকের তৎকালীন পরিদর্শক সামছুল আলম বাদি হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় তৎকালীন মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীসহ ২৪ জনকে আসামি করা হয়। মামলার বাদী প্রথমে আদালতে সাক্ষ্য স্মারক জমা দেন। পরে সামছুল আলম বদলি হলে মামলা দুদকের আরেক পরিদর্শক মো. মবিনুল ইসলাম তদন্ত করে তিনিও আদালতে সাক্ষ্য স্মারক জমা দেন।
আরেও পড়ুন: দূতাবাসে চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণা, গ্রেপ্তার ১
অভিযোগ পত্রে কেবিএম সিরাজ উদ্দিন, হাফেজ আহমদ ও খায়রুল আনোয়ার মৃত্যুবরণ করায় তাদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেয়ার আবেদন জানানো হয়। এর আগে এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী মারা যাওয়ায় ২০১৮ সালের ৩০ মে আদালত তাঁকে অব্যাহতি প্রদান করেন। পরে এজাহার নামীয় ২০ জন আসামি মূল বেনিফিশিয়ারি হিসেবে ২০টি দোকানের পজিশন গ্রহণ করে ১৯৪৭ সনের ২নং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অপরাধের সাথে পরস্পর যোগসাজশে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র অনুমোদন চেয়ে প্রধান কার্যালয়ে প্রতিবেদন দেন তদন্ত কর্মকর্তা।
মবিনুল ইসলামের সাক্ষ্য স্মারকে উল্লেখ করা হয়, মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী উক্ত দোকান ইজারা সংক্রান্ত পত্রিকায় কোন বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেননি। প্রতিটি আবেদনপত্রের ওপর নিজের মনগড়া দোকানের মূল্য ও মাসিক ভাড়া নির্ধারণ পূর্বক লিখিত বরাদ্দ আদেশ প্রদান করেন। পরবর্তীতে আরেক পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম আগের দুই তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য স্মারক পর্যালোচনা করে ২০০৬ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করেন।
এরপর মহিউদ্দিন চৌধুরীর রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত ২০০৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মামলাটির কার্যক্রমের উপর স্থগিতাদেশ দেন। পরবর্তীতে ২০১২ সালের ৬ ডিসেম্বর রিট পিটিশন সংক্রান্ত রুল খারিজ করে দিয়ে মামলার কার্যক্রমের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেন হাইকোর্ট। এরপর মামলাটির বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্ট আদালত। আদালতের নির্দেশে দুদক প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর সহকারী পরিচালক মো. ফখরুল ইসলাম মামলাটি তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র জমা দেন।
আরেও পড়ুন: ভুয়া করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট: র্যাবের হাতে আটক ১৪