‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছিল। সুতরাং, আমরা যে বিজয়ী জাতি সেই ইতিহাস ধরে রাখতে আমি আপনাদের অনুরোধ করতে চাই। আমরা যুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় ছিনিয়ে এনেছি। আমাদের আরও এ জাতীয় চলচ্চিত্র তৈরি করা দরকার যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের বিজয়ের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারে,’ বলেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মহামারি পরিস্থিতিতে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ অনুষ্ঠানে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।
২৬টি বিভাগে ৩৩ জনকে ২০১৯ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার ও সার্টিফিকেট তুলে দেন।
এর আগে দেশের চলচ্চিত্রে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৯ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করে তথ্য মন্ত্রণালয়।
আরও পড়ুন: জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিতরণ করলেন প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা চলচ্চিত্রসমূহে মুক্তিযুদ্ধের দুর্দান্ত সাফল্য, ইতিহাস, আদর্শ ও চেতনা ফুটিয়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার চলচ্চিত্র শিল্পকে আধুনিকায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছু করবে।
‘আমরা উপজেলা পর্যায়ে অবকাঠামোগত বিকাশের জন্য একটি তহবিল গঠন করছি যাতে সেখানে সিনেমা যথাযথভাবে প্রদর্শিত হয় এবং লোকেরা বিনোদনের সুযোগ পেতে পারে,’ তিনি বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সিনেমার সুদিন পৃথিবীতে আবারও ফিরে এসেছে কারণ মানুষ এখন তাদের ঘরে বসে চলচ্চিত্র দেখছে। তবে সিনেমা হলগুলোতেও সিনেমা দিয়ে দর্শকদের আকর্ষণ করতে হবে, তিনি বলেন।
তিনি চলচ্চিত্র নির্মাতাদের পরিবারের সাথে একসাথে উপভোগ করা যায় এমন চলচ্চিত্র নির্মাণের আহ্বান জানান।
চলচ্চিত্র জগতে অবদানের জন্য আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে মাসুদ পারভেজ (সোহেল রানা) ও কোহিনূর আক্তার সুচন্দাকে।
সেরা চলচ্চিত্র বিভাগে যৌথভাবে পুরস্কার পেয়েছে ‘ন ডরাই’ ও ‘ফাগুন হাওয়ায়’ সিনেমা।
আরও পড়ুন: পর্দা নামলো সিনেম্যাকিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের
‘আবার বসন্ত’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন তারিক আনাম খান এবং ‘ন ডরাই’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন সুনেরাহ বিনতে কামাল। ‘সাপলুডু’র জন্য শ্রেষ্ঠ খল অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন জাহিদ হাসান।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকের শুটিং জানুয়ারিতে শুরু
এছাড়া জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০১৯ এর অন্যান্য ক্যাটাগরিতে বিজয়ীদের তালিকা:
শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র: নারী জীবন
শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র: যা ছিলো অন্ধকারে
শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক: তানিম রহমান অংশু (ন’ডরাই)
শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা: ফজলুর রহমান বাবু (ফাগুন হওয়ায়)
শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী: নারগিস আক্তার (মায়া- দ্য লস্ট মাদার)
শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী: নাইমুর রহমান আপন (কালো মেঘের ভেলা) ও আফরীন আক্তার (যদি একদিন)
শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক: মোস্তাফিজুর রহমান ইমন (মায়া- দ্য লস্ট মাদার)
শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক: হাবিবুর রহমান (মনের মতো মানুষ পাইলাম না)
শ্রেষ্ঠ গায়ক: মৃণাল কান্তি দাস (তুমি চাইয়া দেখো- শাটল ট্রেন)
শ্রেষ্ঠ গায়িকা: মমতাজ বেগম ও ফাতিমা-তুয যাহুরা ঐশী।
শ্রেষ্ঠ গীতিকার: নির্মলেন্দু গুণ (ইস্টিশনে জন্ম আমার- কালো মেঘের ভেলা) ও কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী (চল হে বন্ধু- মায়া- দ্য লস্ট মাদার)
শ্রেষ্ঠ সুরকার: প্লাবন কোরেশী (বাড়ির ওই পূর্বধারে- মায়া দ্য লস্ট মাদার) ও তানভীর তারেক (আমার মায়ের আঁচল- মায়া দ্য লস্ট মাদার)
শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার: মাসুদ পথিক (মায়া-দ্য লস্ট মাদার)
শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার: মাহবুব উর রহমান (ন’ ডরাই)
শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা: জাকির হোসেন রাজু (মনের মতো মানুষ পাইলাম না)
শ্রেষ্ঠ সম্পাদক: জুনায়েদ আহমেদ হালিম (মায়া- দ্য লস্ট মাদার)
শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক: মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বসু ও ফরিদ আহমেদ (মনের মতো মানুষ পাইলাম না)
শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক: সুমন কুমার সরকার (ন’ ডরাই)
শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক: রিপন নাথ (ন’ ডরাই)
শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজ-সজ্জা: খন্দকার সাজিয়া আফরিন (ফাগুন হাওয়ায়)
শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান: রাজু (মায়া- দ্য লস্ট মাদার)
তথ্যমন্ত্রী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ রেজা বিশেষ অতিথি এবং তথ্য সচিব খাজা মিয়া স্বাগত বক্তব্য দেন।