করোনাকালীন চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের বরাদ্দের টাকা ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেও বহাল তবিয়তে আছেন কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শামীমা শিরিন (লুবনা)।
তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটির তদন্তে টাকা আত্মসাতের ঘটনা প্রমাণিত হলেও স্বাস্থ্য বিভাগ তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, করোনাকালীন সময়ে আবাসিক হোটেলে থাকা বাবদ ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে ৫৭ হাজার ৬০০ টাকা ও হোটেলে খাওয়া বাবদ ৯৬ হাজার টাকা তুলে নেন ডা. শামীমা শিরিন (লুবনা)। এই নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শামীম কবিরকে প্রধান করে গঠিত হয় তদন্ত কমিটি।
আরও পড়ুন: শ্রীপুর পৌরসভায় ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
২০২০ সালের ২৭ ডিসেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগমের দপ্তরে পাঠানো হয়। ২০২১ সালের ৫ জানুয়ারি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিভিল সার্জন অফিস প্রতিবেদনটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. হাসান ইমামের কাছে পাঠিয়ে দেন। কিছু সংশোধন ও সংযুক্তির জন্য পরিচালকের (প্রশাসন) দপ্তর থেকে তদন্ত প্রতিবেদনটি ফেরত পাঠিয়ে দ্বিতীয় দফা তদন্ত প্রতিবেদনটি পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে চট্টগ্রামে রেল কর্মকর্তা আটক
পরবর্তীতে গত ৪ এপ্রিল ২৫৩ নং স্মারকে ডা. শামীমা শিরিন লুবনার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দফায় প্রমাণাদিসহ তদন্ত প্রতিবেদনটি পাঠানো হয়। দুই মাসের বেশি সময় ধরে তদন্ত প্রতিবেদনটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক (প্রশাসন) দপ্তরে পড়ে আছে বলে জানা যায়।
তদন্ত কমিটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্য জানান, আমরা সাধ্যমতো তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেছি। আবাসিক হোটেল ও খাবার হোটেলের মালিক ও ম্যানেজারদের সঙ্গে কথা বলে টাকা আত্মসাতের সত্যতা পেয়েছি। করোনাকালীন সময়ে রহমানিয়া হোটেলের ভাড়া করা কক্ষগুলো বন্ধ ছিল। সেখানে কোনও ডাক্তার নার্স থাকেনি। কিন্তু ভাড়া দেওয়া হয়েছে। তবে খাবার হোটেলে কেউ খাবার খাননি। রহমানিয়া হোটেলে রান্না বা খাবার বিক্রি করা হয় না বলেও তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় চাল আত্মসাতের অভিযোগে চেয়ারম্যান কারাগারে
তদন্ত কমিটির প্রধান ঝিনাইদহ সদর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শামীম কবির বলেন, আমরা তদন্তে যা পেয়েছি তাই প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছি। একই কথা জানান কমিটির আরেক সদস্য ডা. মিথিলা ইসলাম।
বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডাঃ সেলিনা বেগম বলেন, ‘প্রথমে যে প্রতিবেদন পাঠিয়েছিলাম তা ফেরত দিয়ে কিছুটা সংযুক্তি জুড়ে দিয়েছিল পরিচালকের দপ্তর। দ্বিতীয় দফায় আমরা আবার প্রতিবদেন পাঠিয়েছি। এখন ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক (প্রশাসন) দপ্তরের।’
আরও পড়ুন: হবিগঞ্জে ইউএনও'র স্বাক্ষর জাল করে অর্থ আত্মসাৎ, গ্রেপ্তার ১
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শামীমা শিরিন লুবনা আগেই জানিয়েছিলেন, হোটেলে থাকা নিয়ে রহমানিয়া হোটেলের ম্যানেজার সঠিক তথ্য দেন নি। ডাক্তাররা রোস্টার ডিউটি করেছেন। ওই সময় তারা হোটেলটিতে ছিলেন। কোনও টাকা আত্মসাৎ হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।
তবে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মাঝহারুল ইসলাম জানান, শুরু থেকেই তিনি কোভিড-১৯ এ দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি কখনো হোটেলে থাকেননি।
আরও পড়ুন: অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতির মামলায় কুষ্টিয়ায় কোর্ট পরিদর্শকের কারাদণ্ড
আরেক চিকিৎসক আর্জুবান নেছা বলেন, তিনি বিভিন্ন সময় হোটেলে থেকেছেন। কিন্তু তারিখ বা কোন মাসে থেকেছেন সেটা তিনি জানাতে পারেননি। তবে তিনি প্রণোদনার টাকা পাননি।
এছাড়া হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত স্টাফরাও কোন প্রকার সরকারি প্রণোদনার টাকা পাননি বলে জানিয়েছিলেন।