লিকুফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস বা এলপিজি’র খুচরা পর্যায়ে মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি লেগুরেটরি কমিশন(বিইআরসি)।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন বা বিপিসি চাহিদা অনুযায়ী গ্যাসের সরবরাহ না করতে পারায় বেসরকারি গ্যাস কোম্পানিগুলোর সিন্ডিকেটের কারণে গ্যাসের বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে বলেও উল্লেখ করছেন অনেকে। এক কথায় খুলনাঞ্চলের গ্যাসের বাজার এখন বেসরকারি কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণে।
আরও পড়ুন: ২০ নয়, এক জায়গায় সব সুবিধা পাবে এলপিজি ব্যবসায়ীরা
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আর করোনা মহামারি-লকডাউনের কারণে মানুষের যখন অর্থনৈতিক দুরবস্থা চলছে ঠিক তখনই অতি প্রয়োজনীয় জ্বালানি গ্যাসের দাম যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
তবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কমিটি বলছে, গ্রাহকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলেই অভিযান চালানো হবে।
এদিকে, আইনের ফাঁক ফোঁকরের কারণে বিস্ফোরকের লাইসেন্সবিহীন দোকানেও অহরহ গ্যাস বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ অনভিজ্ঞ দোকানীরা গ্যাস বিক্রির ফলে সিলিন্ডারের ওয়াসার লিক হয়ে অনেক সময় আগুন দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন অনেকে।
আরও পড়ুন: প্রথমবার এলপিজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করল সরকার
সম্প্রতি নগরীর কেডিএ এভিনিউ-এর একটি বাসায় গ্যাস সিলিন্ডার দুর্ঘটনায় এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এর আগে নগরীর নিরালা, সোনাডাঙ্গা, হাফিজনগর, শেখপাড়ায় গ্যাস সিলিন্ডার দুর্ঘটনায় অনেকের মৃত্যু ও অঙ্গহানি হয়।
এপ্রিল মাসের শেষে বিইআরসি গ্যাসের নতুন মূল্য নির্ধারণ করে অনলাইনে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষণা দেয়। নতুন মূল্য অনুযায়ী ১২ কেজি ওজনের প্রতিটি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারিত হয় ৯০৬ টাকা। চলতি মে মাসে এ মূল্য কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও খুলনার বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর সিন্ডিকেট। বিশেষ করে বিপিসির গ্যাসের সরবরাহ কম থাকায় বেসরকারি কোম্পানিগুলোর প্রতিটি সিলিন্ডার বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন গ্রাহকরা।
আরও পড়ুন: মাতারবাড়ী বন্দরে নতুন এলপিজি টার্মিনাল তৈরির পরিকল্পনা বিপিসির
জাতীয় সম্পদ রক্ষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক সরদার রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, বাস্তব কারণে আজ অনেক ঘরে সিলিন্ডার গ্যাস অনিবার্য হয়ে উঠেছে। করোনাকালে, সাধারণ মানুষ এমনিতেই বিপর্যস্ত। এ অবস্থায় গ্যাসের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখাটা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু বিইআরসি’র সে সিদ্ধান্ত মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন না হওয়া অত্যন্ত দু:খজনক।
তিনি নির্ধারিত মূল্যে গ্যাস বিক্রি নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।
একইসাথে তিনি সরকারি গ্যাস সিলিন্ডারের উৎপাদন বাড়ানোর ওপরও জোর দেন। পাশাপাশি দেশের স্থল ও সমুদ্র ভাগের গ্যাস অনুসন্ধানে অবহেলা না করে দ্রুত গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধান ও উত্তোলনের ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।
তবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শিকদার শাহীনুর আলম বলেন, গ্রাহকদের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই অভিযান চালিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তাছাড়া লাইসেন্সবিহীন দোকানে গ্যাস বিক্রি সম্পর্কে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী আইনের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। যেহেতু সর্বোচ্চ আটটি গ্যাস সিলিন্ডার বিনা লাইসেন্সেও রাখার সুযোগ রয়েছে সেহেতু কিছু দোকানে আটটির কম সিলিন্ডার রেখে এ অবৈধ ব্যবসা করে যাচ্ছেন তারা। এটিকে তিনি নৈতিকতা বিরোধী কাজ বলেও উল্লেখ করেন।
আরও পড়ুন: নীলফামারীতে এলপিজি গ্যাসের দাম বাড়ায় ভোগান্তিতে ক্রেতারা
বিস্ফোরক অধিদপ্তরের সূত্র মতে, কোন দোকানে গ্যাস বিক্রি করতে হলে তাকে ট্রেড লাইসেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্সসহ বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স নিতে হবে। এজন্য দোকানও হতে হবে গ্যাস সিলিন্ডার রাখার জন্য উপযুক্ত মানের।
কিন্তু বেসরকারি গ্যাস কোম্পানিগুলোর পরিবেশকদের কাছ থেকে নিয়ে মুদি দোকান, পান সিগারেটের দোকান, তুষকাঠের দোকান, ওষুধের দোকান এমনকি লন্ড্রির দোকানেও গ্যাস বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: এলপিজির মূল্য নির্ধারণে কমিটি গঠন সম্পর্কে জানতে চায় হাইকোর্ট
ব্যবসায়ীদের একটি সূত্র বলছে, কোম্পানির পরিবেশকরা তাদের ওপর অর্পিত কোটা পূরণ করতেই লাইসেন্সবিহীন দোকানে গ্যাস বিক্রি করছেন। অথচ বিস্ফোরকের লাইসেন্সধারী দোকান তথা ডিলারদের কাছেই তাদের গ্যাস বিক্রির কথা।
খুলনা এলপি গ্যাস ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি শেখ মো. তোবারেক হোসেন তপু বলেন, লাইসেন্সবিহীন দোকানের তালিকা করে খুলনার জনপ্রতিনিধি, সিভিল প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণভাবেই অহরহ গ্যাস বিক্রি হচ্ছে লাইসেন্সবিহীন দোকানগুলোতে। যেটি নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থা রয়েছে